ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঘটনার দ্রুত বিস্ফোরণ

সানিয়া তাসনিম লামিয়া
বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঘটনার দ্রুত বিস্ফোরণ

বাংলাদেশের সমাজ যেন এক অন্তহীন স্রোতস্বিনী নদী- যার বুকে ভেসে চলে ইতিহাস, স্মৃতি, বেদনা ও প্রতিবাদের তরঙ্গ। কখনও শান্ত, কখনও উত্তাল। একটু অন্যায়, সামান্য অবহেলা, অথবা কোনো সিদ্ধান্তের ভুল সুর- এই নদীর জল যেন মুহূর্তেই ঘোলা হয়ে ওঠে, আর মানুষের অনুভূতির ঢেউ ছুটে আসে তীর ভাঙতে। যেন মানুষের অন্তরে লুকিয়ে থাকা বহু বছরের চাপা ক্ষোভ এক ফোঁটা ঘটনার স্ফুলিঙ্গেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে এক প্রবল সামাজিক প্রবণতা চোখে পড়ে তা হলো কিছু ঘটলেই আন্দোলন। বড় ঘটনা কিংবা ছোট, রাষ্ট্রীয় নীতির হেরফের, অর্থনৈতিক চাপ, শিক্ষা ব্যবস্থার জটিলতা, কিংবা কোনো সামাজিক অবিচার মানুষ দ্রুত রাস্তায় নেমে আসে, আওয়াজ তোলে, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে। এ যেন একদিকে গণতান্ত্রিক চেতনার উদ্ভাস, অন্যদিকে জমে থাকা অবিশ্বাস, হতাশা ও অনিশ্চয়তার প্রতিফলন।

বাংলাদেশে আন্দোলন নতুন নয়; বরং জাতীয় সত্তার গভীরে বোনা এক চিরন্তন ছাপ। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার সংগ্রাম, গণঅভ্যুত্থান- প্রতিটি ধাপে জনগণের প্রতিরোধের আগুনই পথ দেখিয়েছে পরিবর্তনের। তাই মানুষের মনের ভেতর জন্মেছে প্রতিবাদের এক নীরব ঐতিহ্য, যা আজও সমাজকে নাড়া দেয়। তবে বর্তমান সময়ে আন্দোলনের রূপ পাল্টে গেছে। সামাজিক মাধ্যমের যুগে প্রতিক্রিয়া আগুনের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ছোট একটি ভিডিও, একটি পোস্ট বা গুজব মুহূর্তেই লাখো মানুষের চোখে পৌঁছে যায়। তথ্যের প্রবল স্রোত আবেগকে উত্তেজনায় রূপান্তরিত করে, আর উত্তেজনা একসময় সংগঠিত আন্দোলনে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাহীনতা এই প্রবণতার মর্মস্থল। অনেকেই বিশ্বাস করেন, অভিযোগ বা সমস্যার সমাধান যথাসময়ে হয় না; ফলেই মানুষ মনে করে, রাস্তায় নেমে কথা বলাই দাবি আদায়ের একমাত্র কার্যকর ভাষা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা নিজের অধিকার, মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি স্পষ্ট অবস্থানে থাকে তারা দ্রুত প্রতিবাদে সংগঠিত হয়। তবে এর গভীরে রয়েছে মানসিক কারণও। যখন সমাজ দীর্ঘদিন ধরে সংকট, দুশ্চিন্তা ও চাপের বোঝা টেনে বেড়ায়, তখন মানুষের মন সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। ছোট ঘটনা তখন বড় প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

এই বাস্তবতায় ‘কিছু ঘটলেই আন্দোলন’ কেবল এক রাজনৈতিক বা সামাজিক ঘটনাপ্রবাহ নয়; বরং ইতিহাস, আবেগ, প্রত্যাশা, আস্থাহীনতা এবং সমাজের সমষ্টিগত মানসিকতার জটিল সমন্বয়। এটি আমাদের সময়ের এক গভীর, প্রগাঢ় এবং সত্য প্রতিচ্ছবি যেখানে প্রতিটি কণ্ঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকে পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশে ‘কিছু ঘটলেই আন্দোলন’ এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে বহুস্তরীয় কারণ, যা সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। প্রথমত, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা একটি প্রধান কারণ। অনেক নাগরিক মনে করেন, অভিযোগ বা সমস্যার সমাধানের জন্য প্রচলিত প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সাড়া পাওয়া কঠিন। তাই অধিকার আদায়ের কার্যকর পথ হিসেবে তারা আন্দোলনকেই বেছে নেন। জনমতের এই আস্থাহীনতা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হওয়ায়, ক্ষুদ্র ইস্যুও দ্রুত বড় আকৃতি ধারণ করে। অর্থনৈতিক চাপ ও বৈষম্য বৃদ্ধি আন্দোলনের প্রবণতাকে তীব্র করে তুলেছে। মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, কম বেতনে উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় এসব বিষয় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ায়। দৈনন্দিন জীবনে চাপ বাড়তে বাড়তে ছোট একটি ঘটনা মানুষের সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করে, এবং তা প্রতিবাদে রূপ নেয়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি তাদের বাস্তব সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজতেই রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। সামাজিক মাধ্যমের তাৎক্ষণিক প্রভাব আধুনিক আন্দোলনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব বা মেসেঞ্জারের গ্রুপচ্যাট কোনো ঘটনার ভিডিও বা পোস্ট কয়েক মিনিটেই কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আবেগ খুব দ্রুত উত্তেজনায় রূপ নেয় এবং সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যায়। বহু সময় সামাজিক মাধ্যম তথ্যকে বাড়িয়ে তোলে বা একপাক্ষিক করে, ফলে মানুষের প্রতিক্রিয়াও তীব্র হয়। আবার তরুণ প্রজন্মের সক্রিয়তা ও সচেতনতা এই আন্দোলন প্রবণতাকে আরও দৃঢ় করে। তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি ভাবেন, অন্যায়ের প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখান এবং পরিবর্তনের শক্তি হিসেবে নিজেদের ভূমিকা গুরুত্ব দেন। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের তরুণ সমাজ সবসময় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যা এখনো অব্যাহত। আরও কিছু কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক চাপ ও মানসিক ক্লান্তি। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, দুর্নীতি, সেবাবঞ্চনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওঠানামা এসব কিছুর কারণে মানুষের মানসিক স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। তখন একটি ছোট ঘটনা বৃহৎ অসন্তোষের স্ফুলিঙ্গে পরিণত হয়। সমষ্টিগত স্মৃতি ও সংস্কৃতিও একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের ইতিহাস আন্দোলন ও প্রতিরোধে সমৃদ্ধ। ফলে মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে এক ধরনের ‘প্রতিবাদ সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে, যা আজকের ঘটনাগুলোকেও আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।

সুতরাং, এই প্রবণতা শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক উত্তেজনা নয় বরং সামাজিক বাস্তবতা, দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা ও মানসিকতার সম্মিলিত প্রতিফলন। বাংলাদেশে ‘কিছু ঘটলেই আন্দোলন’-এই প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে যেন আরও ঘন ঘন দেখা যায়, যা সমাজে একাধিক জটিল সমস্যা সৃষ্টি করছে এবং তা এখন একটি গভীর সামাজিক-রাজনৈতিক সংকটের লক্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রথমত, স্বাভাবিক জনজীবনের বিঘ্ন একটি বড় এবং সরাসরি দৃশ্যমান সমস্যা। কোনো ইস্যু কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু হলেই সড়ক বন্ধ হয়ে যায়, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যানজট বা পরিবহন সংকটে মানুষ কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে না। ব্যবসাবাণিজ্য থেমে যায়, বাজারে সরবরাহ কমে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি সেবা বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল, অগ্নিনির্বাপণ প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। অর্থনৈতিক ক্ষতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। প্রতিদিনের উৎপাদন, শিল্পকারখানার কার্যক্রম, পরিবহন ও বাণিজ্য থেমে গেলে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদার, রাস্তার হকার, দিনমজুর এই বৃহত্তম অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের প্রতিদিনের আয়ে বাধা সৃষ্টি হলে পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে ওঠে।

এছাড়া, ঘন ঘন আন্দোলনের ফলে সমাজে উত্তেজনা, অস্থিরতা ও ভীতির সংস্কৃতি তৈরি হয়। সাধারণ মানুষ মনে করে যে কোনো সময় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে যা তাদের মানসিক সুস্থতার ওপরও প্রভাব ফেলে। সমাজে বিভক্তি বাড়ে; রাজনৈতিক, প্রজন্মগত এবং শ্রেণিগত পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে সমাজে একটি অনিশ্চয়তার আবহ স্থায়ী হয়ে যায়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ইতিবাচক ভূমিকা থাকলেও, বাস্তবে অনেক সময় সেগুলো সংঘর্ষ, ভাঙচুর বা দুর্ঘটনার দিকে গড়ায়। উত্তেজনা বাড়লে এক মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এতে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ক্ষুণ্ণ হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গঠনমূলক সংলাপের দুর্বল হয়ে পড়া। যখনই মানুষ সমস্যা সমাধানের প্রথম পথ হিসেবে আন্দোলনকে বেছে নেয়, তখন আলোচনার সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়; রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থার সেতু ভেঙে যায়। এতে সমাধানমূলক প্রক্রিয়ায় জটিলতা বাড়ে এবং সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে, আন্দোলনের গণতান্ত্রিক গুরুত্ব আছে তবে ঘন ঘন ও অনিয়ন্ত্রিত আন্দোলন সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা ভবিষ্যতের স্থিতিশীলতার জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

বাংলাদেশে ‘কিছু ঘটলেই আন্দোলন; প্রবণতা কমানোর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি, বহুমাত্রিক এবং নীতিনির্ভর সমাধান। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করা অপরিহার্য। প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা ও বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। যেকোনো সমস্যা বা অভিযোগের দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করা গেলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামার আগে প্রাতিষ্ঠানিক সমাধানের পথ ব্যবহার করবে। এজন্য অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সময়সীমাবদ্ধ সমস্যা সমাধান ব্যবস্থা (ঝবৎারপব উবষরাবৎু ঞরসবষরহব) এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর নিয়মিত মূল্যায়ন জরুরি। গঠনমূলক সংলাপের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা উচিত। এতে বিভিন্ন সংকট শুরু হওয়ার আগেই সমাধান বের করা যায়। পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়লে উত্তেজনা কমবে এবং আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভুয়া তথ্য, গুজব বা উত্তেজক পোস্ট অনেক সময় ছোট ঘটনা বড় করে তোলে। তাই ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়াতে হবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গণমাধ্যমে তথ্য যাচাইয়ের ভিত্তিমূলক প্রশিক্ষণ জরুরি। পাশাপাশি, সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক চাপ কমাতে টেকসই নীতিমালা দরকার। বেকারত্ব কমানো, দক্ষতা বিকাশ, ন্যায্য বাজারব্যবস্থা, পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এসব বিষয় মানুষকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল করে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থাকলে মানুষ তড়িঘড়ি করে উত্তেজিত হয় না; বরং সমাধানের জন্য যুক্তিসঙ্গত পথ বেছে নেয়।

তরুণদের ইতিবাচক অংশগ্রহণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন। তাদের সামাজিক উদ্যোগ, উদ্ভাবন, নেতৃত্ব এবং নীতিনির্ধারণী আলোচনায় যুক্ত করলে তারা পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে নিজেদের ভূমিকা দেখতে পায়। এতে হঠাৎ ক্ষোভ কমে আসে এবং দায়িত্বশীল নাগরিক আচরণ বাড়ে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও মানবিক আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংলাপমূলক ও সংযত আচরণ টানাপড়েন কমায়। রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে বিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হলে অস্থিরতা কমে যায়। সমাধান কোনো একক পদক্ষেপে সম্ভব নয়; বরং আস্থা, সংলাপ, অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও নীতিনির্ভর ব্যবস্থার সমন্বিত প্রয়াসই একটি স্থিতিশীল ও ইতিবাচক সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে ‘কিছু ঘটলেই আন্দোলন’ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বিষয়টি একমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা যায় না। আমার দৃষ্টিতে, এটি একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই বহন করে। একদিকে, জনগণের দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় যে তারা সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে সচেতন, নীরব নয় এবং নিজস্ব অধিকার নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। এটি গণতন্ত্রের জন্য একটি প্রয়োজনীয় শক্তি। যে সমাজে মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, সে সমাজ স্থবির হয়ে যায় না; বরং পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আন্দোলনই বড় বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্ম দিয়েছে—এটি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারও বটে।

তবে অন্যদিকে, ঘন ঘন আন্দোলনের নেতিবাচক দিকও কম নয়। দ্রুততর উত্তেজনা, তথ্য যাচাই না করে প্রতিক্রিয়া, ছোট ইস্যুকে বড় করে দেখা, এবং সামাজিক মাধ্যমে আবেগের অতিরিক্ত বিস্তার-এসব কারণে আন্দোলন কখনও কখনও অপ্রয়োজনীয় সংঘর্ষে রূপ নেয়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সমস্যার সমাধানে আলোচনার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সানিয়া তাসনিম লামিয়া

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত