প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। পৃথিবীতে এত ঋতু বৈচিত্র্যময় দেশ বোধহয় দ্বিতীয় আরেকটি নেই। প্রতি দুই মাস অন্তর ঋতু পরিবর্তন হয়। শীতকাল তার মধ্যে অন্যতম। শরতের সিগ্ধতার শেষে প্রকৃতিতে আগমণ ঘটে নিদারুণ শীতের। চারদিকে ঘন কুয়াশায় ছেঁয়ে যায়। চোখ মেললে দূরের বস্তু দেখা যায় না। কাজ কর্মেও স্থবিরতা চলে আসে। সারাদিন রুমে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার মজাই আলাদা। কিন্তু এই সুখ কি আর সবার কপালে সয়? বলছিলাম অসহায় ছিন্নমূল মানুষের কথা। যাদের কাছে শীত মানেই সীমাহীন দুর্ভোগ। শীত মানেই আতংক। বছরের বাকি মাসগুলো কোন রকম সুখে দুঃখে কাটলেই যত বিপত্তি বাধে শীতে। কনকনে হাড় কাঁপানো শীত যেখানে গরম কাপড় পড়েই বাহিরে বের হওয়া যায় না। মানুষ থেকে শুরু করে পশুপাখি সবাই উষ্ণতা খুঁজে বেড়ায়।
সূদুর সাইবেরিয়া থেকে একটুখানি উষ্ণতার আশায় পাখিগুলো হাজার মাইল দূরে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পাড়ি জমায়। সেখানে একটুকরো কাপড় পড়ে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে অসহায় ছিন্নমূল মানুষগুলো। কখনো কখনো তাও ঠিকমত জুটেনা। বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্ভোগের স্বীকার হতে হয় শহরের বস্তি, ফুটপাত কিংবা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে মানুষগুলোর। রাতের শহরে বের হলেই এমন ঘটনা অহরহ মানুষ চোখে পড়ে। ফুটপাত, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, মার্কেট কিংবা গাছের নিচে চাদর, ছেড়া কাঁথা নিয়ে শুয়ে আছে একদল মানুষ। শরীরগুলো কনকনে হাড়কাপানো শীতে দুলছে। বস্তির ছোট চুপরি ঘরে শীতে জরোসরো হয়ে শুয়ে আছে কতগুলো বিবর্ণ চেহারার মানুষ। দূর থেকে গায়ের খাড়া লোমগুলো দেখে সাইবেরিয়ার বনাঞ্চল বলে মনে হলেও ভুল হবে না। গ্রামেও এর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।
কিন্তু তাদের কষ্ট দেখার মত কেউ নেই। রাষ্ট্র বড় বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণে যতটা মনোযোগী ঠিক ততটাই অমনোযোগী এসব ছিন্নমূল মানুষের প্রতি।
মাঝে মধ্যে দু-একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, বিত্তবান ব্যক্তি ছিন্নমূল মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে সহযোগীতা না পাওয়া, সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি কারণে এর যথাযথ সুফল পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায় একই জায়গার ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। বিপরীতে অন্য জায়গায় কেউ মুখ তুলেও তাকায়নি। ফলে একই ব্যক্তি দুইবার সহায়তা আওতায় আসলেও অপর ব্যক্তি একবারও পায়নি। এর জন্য প্রয়োজন সংগঠনগুলোর মধ্যে সুষ্টু সমন্বয় সাধন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সদস্যদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু শহরে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ না রেখে প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদেরকেও এসব অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারী পর্যায়েও উদ্যোগ নিতে হবে। জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে বাদ দিয়ে কখনো সুষ্ঠু উন্নয়ন করা সম্ভব না। সরকারী পর্যায়ে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে আবাসন ও পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার চাইলে এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিওগুলোর সাথে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে পারে। তাহলে শীতে অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের ভোগান্তির লাগব হবে।
মো. সবুজ মিয়া
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়