প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রবাস জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার ঘরে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী এক ঘটনা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তিত বাংলাদেশে তারেক রহমানের সামনে যেমন বড় সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে, তেমনি তাকে মোকাবিলা করতে হবে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।
দীর্ঘ সময় প্রযুক্তির পর্দায় যাকে দেখা গেছে, তাকে সশরীরে পাশে পাওয়া বিএনপির নির্বাচনি প্রচারণায় বাড়তি গতি যোগ করবে সন্দেহ নেই। একজন সেনাপতির মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার যে উদ্দীপনা, তা ভোটারদের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু এই উদ্দীপনার সমান্তরালেই রয়েছে গভীর সব সংকট। প্রথমত, দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা। নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় যে কোন্দল বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে, তা কঠোর হস্তে দমন করা তার প্রথম চ্যালেঞ্জ। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলে ‘সিন্ডিকেট’ বা ‘পকেট কমিটি’র সংস্কৃতি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেদিকে তাকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বহিঃশক্তির ষড়যন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা মোকাবিলা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পতিত স্বৈরাচার ও একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকতে পারে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও ডিজিটাল আক্রমণের বিরুদ্ধেও দলটিকে কৌশলগতভাবে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলার যে নাজুক অবস্থা, তাতে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করাও জরুরি। ৫ আগস্ট পরবর্তী জাতীয় ঐক্যে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তা মেরামত করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা তার জন্য বড় পরীক্ষা।
তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি অপেক্ষা করছে নির্বাচনের পর। বিএনপি যদি জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, তবে ধ্বংসপ্রায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করাই হবে প্রধান কাজ। বিগত দেড় দশকে শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তা মেরামত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে না। মব ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতির মূলোৎপাটন এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়াই হবে তার নেতৃত্বের সার্থকতা। উল্লেখ্য, তারেক রহমান নিজেই বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র মেরামতের ‘৩১ দফা’ রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এখন সময় সেই অঙ্গীকারগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়ার। ভুলে গেলে চলবে না, দেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন; তারা কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন চায় না, বরং গুণগত রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। তারেক রহমানকে প্রমাণ করতে হবে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি আধুনিক, জবাবদিহিমূলক এবং সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে তারা সক্ষম। তিনি কি শুধু একটি দলের নেতা হিসাবে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন, নাকি একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে টেনে তুলবেন- তা নির্ভর করবে তার ধৈর্য, দূরদর্শিতা এবং রাষ্ট্র মেরামতের দৃঢ় সংকল্পের ওপর। আগামীর কঠিন পথ পাড়ি দিতে হলে তাকে এবং তার দলের অন্য নেতাদের বৃহত্তর ঐক্যের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।