প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে গতকাল জন্মভূমিতে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে দেশের মাটিতে অবতরণ করছে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান। দলের কাণ্ডারির প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সর্বত্রই এখন বইছে আনন্দের জোয়ার। উজ্জীবিত সকল নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে চলায় তৃণমূল থেকে কেন্দ্র-সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে প্রাণচাঞ্চল্য। তারেক রহমানের আগমনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি প্রচরণায় নতুনমাত্রা পাবে। দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর তার এই দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসছেন। কেউ সরাসরি অংশ নিতে, কেউবা দূর থেকে একনজর দেখতে ও তার বক্তব্য শোনার আশায় যাত্রা করছেন। এরইমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। গত বুধবারও ছিল মানুষের প্রধান গন্তব্য রাজধানী। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী দেখা যাচ্ছে। বিএনপি আশা করছে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে দলের শীর্ষ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়েছিল।
ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও এদিনের কর্মসূচিতে যুক্ত থাকবেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি ৩০০ ফিট এলাকায় নির্ধারিত গণসংবর্ধনা স্থলে যাবেন। সেখান থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর মা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দলটির নেতারা আশা করছেন, শুধু নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সেদিন রাজধানী জনসমুদ্রে পরিণত হবে। সারা দেশের নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর আশপাশের জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকে সংগঠিতভাবে অংশ নিতে বলা হয়েছে। দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরাসরি মাঠে থেকে এতদিন দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। তবে ধরে রেখেছেন দলের ঐক্য। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা বেসামাল। এই মুহূর্তে তার ঢাকায় ফেরার আনন্দে ভাসছে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিশ্চয়ই তারেক রহমান দল ও দেশের মানুষের কল্যাণে ঐক্যের বার্তা নিয়ে পৌঁছিয়েছেন।
দীর্ঘ প্রায় আঠারো বছরের নির্বাসন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর একটি কালজয়ী বক্তব্য। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইলিয়াস আলীর সেই পুরোনো ভাষণটি এখন নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করছে। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ইলিয়াস আলী তারেক রহমানকে আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি তারেক রহমানকে জিয়াউর রহমানের ‘ডুপ্লিকেট’ বা প্রতিচ্ছবি হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, তারেক রহমান কেবল একজন নেতা নন, তিনি এ দেশের একটি ‘ইনস্টিটিউট’।
ইলিয়াস আলী অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘এই অচল বাংলাদেশ সচল হবে যেদিন তারেক রহমান ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ। বক্তব্যে তিনি আরও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন যে, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি আবারও এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে। তারেক রহমানের আগমনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইলিয়াস আলীর এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বক্তব্যটি পুনরায় ছড়িয়ে পড়ায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ইলিয়াস আলী এক যুগ আগেই আজকের এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছিলেন।
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি আজ জাতীয় আবেগ, প্রত্যাশা ও আশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতার প্রবাসজীবন ও দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে এমন গণজাগরণ ও কৌতূহল বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব কমই দেখা গেছে। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার বেড়াজালে আটকে রেখে দেশের মাটি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো— তিনি শারীরিকভাবে বিদেশে অবস্থান করলেও মানসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও আদর্শগতভাবে সবসময়ই ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে। তার প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক কর্মসূচির কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশ, ছিল এ দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার।
সাধারণভাবে বলা হয়, নেতার অনুপস্থিতি দলে ভাঙন ধরায়, কর্মীদের মনোবল দুর্বল করে। কিন্তু তারেক রহমানের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতা। প্রবাসে থেকেও তিনি দলের সাংগঠনিক ঐক্য অটুট রেখেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং কর্মীদের মাঝে সাহস ও আস্থা জুগিয়েছেন। দেশের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তিনি ছিলেন ছায়ার মতো পাশে। ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনোই জনগণের কাছে দূরের মানুষ হয়ে ওঠেননি; বরং হয়ে উঠেছেন এক নীরব প্রেরণার উৎস। দীর্ঘ প্রবাসজীবন তার রাজনৈতিক সক্ষমতায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি, বরং তাকে আরও পরিণত ও সুদূরপ্রসারী চিন্তার নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে। সাধারণত দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলে নেতার সঙ্গে জনগণের একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু তারেক রহমান সেই দূরত্বকে পরিণত করেছেন এক ভিন্নধর্মী নৈকট্যে। তিনি কখনও রাজনীতি থেকে বিরতি নেননি, বরং এই সময়কে কাজে লাগিয়েছেন দেশের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র ও দলীয় কাঠামো নিয়ে গভীর চিন্তা ও পরিকল্পনায়। প্রবাসে থেকেও তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন, যা তাকে সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের কাছে আরও বেশি আপন করে তুলেছে।
ইংল্যান্ডে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বাস্তবতা হলো, তার জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে ও সংযত। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির সন্তান এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েও তিনি বিলাসিতা বা আড়ম্বরের পথে হাঁটেননি। লন্ডনের মতো ব্যয়বহুল শহরেও তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো জীবনযাপন করেছেন। এই অনাড়ম্বর জীবনবোধই তাকে জনগণের কাছের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ক্ষমতা বা বিত্তের অহংকার থেকে দূরে থেকে তার এই জীবনদর্শন প্রমাণ করে- তার রাজনীতি ব্যক্তিগত ভোগের জন্য নয়, বরং একটি কল্যাণমুখী ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বাংলাদেশ দীর্ঘ এক ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথে এগোচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী নেতৃত্বে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে তার আগমন নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
আজকের তরুণরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে একটি রুদ্ধশ্বাস রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা তারেক রহমানের মাঝেই তাদের ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা খুঁজে পাচ্ছে। এই তরুণরাই গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে লড়াই করেছে, রক্ত দিয়েছে। তাদের এই দীর্ঘ সংগ্রামে সাহস ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান নিজেই। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চিন্তায় বিশ্বাসী এই প্রজন্ম দেখেছে- কীভাবে একজন নেতা শত প্রতিকূলতার মাঝেও অবিচল থেকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারেন। তার নেতৃত্ব তরুণদের শিখিয়েছে, ন্যায়ের পথে কখনও পিছপা হতে নেই। তার আগমনে তরুণরা আজ উজ্জীবিত, কারণ তারা বিশ্বাস করে- তারেক রহমানের হাত ধরেই গড়ে উঠবে এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে বাকস্বাধীনতা থাকবে, মেধার মূল্যায়ন হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান নেওয়া হবে। তারেক রহমানের এই ঘরে ফেরা শুধু একজন ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পুনর্জন্মের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
যে ষড়যন্ত্র তাকে দীর্ঘদিন দূরে রাখতে চেয়েছিল, তা জনগণের ভালোবাসা ও প্রত্যাশার জোয়ারে ভেঙে পড়েছে। তার দেশপ্রেম, মানসিক দৃঢ়তা, সাদামাটা জীবনযাপন ও তারুণ্যের প্রতি অগাধ আস্থা- সব মিলিয়ে তিনি এক অনন্য নেতৃত্বের প্রতীক। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকতে বাধ্য হওয়া, দূরত্ব ঘুচিয়ে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে সক্রিয় থাকা এবং শেষ পর্যন্ত নিজের দেশে ফিরে আসা- এই পুরো প্রক্রিয়াটি দেশপ্রেমের এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। ইতিহাস প্রমাণ করে, জনগণের হৃদয়ে যার আসন নিশ্চিত, কোনো ষড়যন্ত্রই তাকে চিরদিন দূরে রাখতে পারে না। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন আসলে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদারই ফিরে আসা। নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যে আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, তা বাস্তবায়িত হবে- এটাই আজ মানুষের বিশ্বাস।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তার ফিরে আসা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন সূর্যোদয়ের বার্তা দিচ্ছে। এই আলোয় অন্ধকার দূর হবে, আর বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের নতুন দিগন্তের দিকে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও একপক্ষীয় নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঝুঁকিতে থাকা অন্তত ৫০ জন রাজনৈতিক নেতা, ছাত্রনেতা, সাংবাদিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের তালিকায় তারেক রহমানের নাম শীর্ষে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, তিস্তা পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা ও অসম বাণিজ্য ইস্যুতে তারেক রহমানের ধারাবাহিক ও কঠোর বক্তব্যই তাকে প্রধান টার্গেটে পরিণত করেছে। আন্তর্জাতিক ফোরাম, ভার্চুয়াল সভা এবং দলীয় নীতিনির্ধারণী বক্তব্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তার স্পষ্ট অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। তারেক রহমানকে ঘিরে হুমকির ধরন বহুমাত্রিক।
সরাসরি শারীরিক ঝুঁকির পাশাপাশি ডিজিটাল নজরদারি, অনলাইন চরিত্রহনন, ভুয়া তথ্য প্রচার এবং ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির চেষ্টার তথ্যও পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি পরিকল্পিত মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগের কৌশল। তারেক রহমান শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন, বরং ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী রাজনীতির একটি প্রতীকী মুখে পরিণত হয়েছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে যেকোনো হুমকি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তারেক রহমান শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন, বরং ভারতকেন্দ্রিক আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বার্থের প্রশ্নে একটি প্রতীকী কণ্ঠে পরিণত হয়েছেন। দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তার বক্তব্য নিয়মিত আলোচনার জন্ম দিচ্ছে, যা তাকে সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় এবং সমালোচকদের কাছে সংবেদনশীল করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থান নেওয়া অন্তত ৫০ জন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতার নাম নিরাপত্তা ঝুঁকির আলোচনায় এলেও, প্রভাব ও গুরুত্বের দিক থেকে তারেক রহমানকে শীর্ষে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছে একাধিক নিরাপত্তা সূত্র।
তার বিরুদ্ধে সরাসরি শারীরিক হুমকির পাশাপাশি ডিজিটাল নজরদারি, অনলাইন অপপ্রচার এবং রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টার তথ্যও পর্যবেক্ষণে এসেছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রশ্নে ‘নীরব কূটনীতি’র বাইরে এসে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে। এতে করে ভারতের আধিপত্যবাদবিরোধী শক্তিগুলো একটি স্পষ্ট নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা পাচ্ছে বলে তারা মনে করেন। তারেক রহমানের পাশাপাশি আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, ছাত্রনেতা ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এই অবস্থানের কারণে আলোচনায় থাকলেও, আন্দোলনের কৌশল, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক প্রভাব- এই তিন বিবেচনায় তারেক রহমানই বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুখ বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী রাজনীতি আগামী দিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আর সেই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে তারেক রহমানের অবস্থান দিন দিন আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ তারেক রহমান করে যাচ্ছেন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। অনেকটা নীরবে, নিভৃতে। দরিদ্র, অসহায়, বিপদগ্রস্ত, গুম-খুনের শিকার মানুষ ও তাদের পরিবারের দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত। কারও চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন, কারও শিক্ষার। গৃহহীনদের নির্মাণ করে দিচ্ছেন বাড়ি।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ ও ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’-এর মতো সংগঠনগুলোর মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সারা দেশে আর্তমানবতার সেবা করে যাচ্ছেন। তারেক রহমানের জীবন সহনশীলতা, তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক, আদর্শিক রাজনীতি এবং মানবিক নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তারেক রহমানকে এখন দলীয় নেতৃত্বের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশের আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে নিজের অবস্থানে অটল রয়েছেন। ১৯৮৮ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত তারেক রহমানের এই দীর্ঘ পথচলা ধৈর্য, সংগঠন, নৈতিকতা ও সহমর্মিতার এক অনন্য শিক্ষা। এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাকে এক পরিবর্তনকামী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রেজাউল করিম খোকন
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক