
বাংলাদেশের নায়ক রাজ রাজ্জাক যদি আজ বেঁচে থাকতেন তবে সিনেমা জীবনে তার পথচলায় তিনি ছয় দশকে পদার্পণ করতেন। নায়ক হিসেবে নায়ক রাজের যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে। অর্থাৎ জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ সিনেমায় সূচন্দার বিপরীতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে ১৯৬৬ সালের ২৮ অক্টোবর নায়ক রাজের নায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। সেই হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫-এ তিনি চলচ্চিত্র জীবনের ৬০ বছরে পদার্পণ করেছেন। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় জন্ম নেওয়া নায়ক রাজ রাজ্জাক ছোটবেলা থেকেই বিশেষত মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট ও সংগ্রামের পর তিনি সুযোগ পান জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ সিনেমাতে অভিনয় করার। এরপর একে একে বহু সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। সংখ্যায় হিসেব করতে গেলে তা তিন শতাধিক। নায়ক হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরুতে তিনি বেহুলার পর একে একে যেসব সিনেমাতে অভিনয় করেছেন- প্রতিটি সিনেমাতেই তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। অভিনয় জীবনের পথে চলতে চলতে একসময় তিনি ‘নায়ক রাজ’ উপাধি পান। নায়ক রাজ রাজ্জাক সিনেমাতে অভিনয় করে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ও।
তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে- ‘আলোর মিছিল’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘ডাক বাবু’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘আবির্ভাব’, ‘দুই ভাই’, ‘বাঁশরি’, ‘এতোটুকু আশা’, ‘স্বরলিপি’, ‘মনের মতো বউ’, ‘সমাপ্তি’, ‘সমাধি’, ‘ময়নামতি’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘আঁকবাঁকা’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’, ‘ঝড়ের পাখি’, ‘মাস্তান রাজা’, ‘আকাঙ্ক্ষা’, ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘জিঞ্জির’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘শুভদা’, ‘কাজল লতা’, ‘সৎ ভাই’, ‘চাপা ডাঙ্গার বউ’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘সন্ধি’, ‘সন্ধান’, ‘শর্ত’, ‘প্রেম শক্তি’, ‘ঢাকা ৮৬’, ‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘আমি বাঁচতে চাই’ ইত্যাদি।
একজন পরিচালক হিসেবেও তিনি ২০টিরও বেশি সিনেমা নির্মাণ করেছেন, সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন ‘রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনসের ব্যানারে। নায়ক রাজের তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বাপ্পারাজ অভিনেতা হিসেবে পেয়েছেন এদেশের কোটি দর্শকের ভালোবাসা। ছোট ছেলে সম্রাটও নায়ক হিসেবে বেশকিছু সিনেমাতে অভিনয় করে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন।
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম ‘কী যে করি’ সিনেমাতে অভিনয় করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এরপর আরো পাঁচবার এই পুরস্কারে ভূষিত হন। নায়ক রাজ রাজ্জাকের ছোট ছেলে সম্রাট বলেন, ‘দেখতে দেখতে আব্বার অভিনয় জীবনের পথচলার ৬০ বছরে পদার্পণ হয়ে গেল। আব্বা আজ বেঁচে থাকলে হয়তো অনেক কিছুই হতো। আব্বা নেই বলে বিয়ষটি নিয়ে বিশেষত চলচ্চিত্র পরিবারের কোনো আগ্রহ বা উচ্ছ্বাস নেই।
তারপরও আব্বার ভক্ত দর্শকরা আব্বাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন, তারা নায়ক রাজ রাজ্জাককে যে ভালোবাসেন- এটাই আমাদের পরম পাওয়া। আব্বার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ তাকে বেহেস্তে নসীব করেন, এটাই শেষ চাওয়া।’