
ব্রাহ্মণের ছেলে সিদ্ধার্থ বাবার অমতে ঘর ছেড়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করে। তিন বছর সন্ন্যাসব্রতের কঠোর সাধনা, আত্মনিগ্রহ, উপবাস ও আত্মনির্যাতনের পর সন্ন্যাস ত্যাগ করে সে। এরপর তার বুদ্ধের সাক্ষাৎ লাভ ও উপদেশ শোনার আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হয়। তবে বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ না করে পথে বেরিয়ে পড়ে সিদ্ধার্থ। দেখা হয় এক নারীর সঙ্গে, পরিচয় হয় নতুন এক জীবনের সঙ্গে। সে জীবনের নাম সংসার-সন্তান লাভের খেলা। দীর্ঘ কুড়ি বছর ওই জীবনে মগ্ন থাকার পর সিদ্ধার্থের মনে হয়, এই খেলা শেষ হয়েছে। বারবার এ খেলার প্রয়োজন আছে কি? সংসারের ওপর সিদ্ধার্থের বিতৃষ্ণা জাগে।
সিদ্ধার্থ সংসারজীবন ত্যাগ করে আশ্রয় নেয় নদীর কাছে। নদীর কাছে থাকতে থাকতে সিদ্ধার্থ শেখে নদীর ভাষা। উপলব্ধি করে জীবনের বৃহত্তর মানে। জীবন ও মৃত্যু, পাপ ও পুণ্য, বোধ ও নির্বুদ্ধিতা সবকিছুরই প্রয়োজন আছে জীবনে। এসব অভিজ্ঞতা জীবনকে পূর্ণ করে। এ অভিজ্ঞতার নামই জ্ঞান, যা কাউকে শেখানো যায় না, অর্জন করতে হয়। এমন গল্প নিয়ে নাটক ‘সিদ্ধার্থ’। দেশ ও পৃথিবীর এই অস্থির সময়ে এসে সিদ্ধার্থের মঞ্চায়ন প্রসঙ্গে এর অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের যে অবস্থা, তাতে এখনকার তরুণদের সবারই ‘সিদ্ধার্থ’ দেখা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই নাটক আমার জন্য ব্যতিক্রম একটি কাজ। আমার জীবন ও জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি বদলে দিয়েছে এই নাটক।’ নাট্যদল আরশিনগরের চতুর্থ প্রযোজনা ‘সিদ্ধার্থ’। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক হেরমান হেসের লেখা উপন্যাসটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও নির্দেশক রেজা আরিফ। ২০২৩ সালের আগস্টে প্রথম মঞ্চে আসে নাটকটি। টানা তিন দিনে চারটি প্রদর্শনী হয়েছিল সেবার। আবারও এলো সেরকম টানা প্রদর্শনীর সময়। আজ বুধবার থেকে টানা তিনদিন মঞ্চস্থ হবে নাটকটির ৪টি প্রদর্শনী।
গৌতম বুদ্ধের আরেক নাম সিদ্ধার্থ হলেও হেরমান হেসের ‘সিদ্ধার্থ’ গৌতম বুদ্ধ নয়। নির্দেশক রেজা আরিফের ভাষ্য অনুসারে, ‘গৌতম বুদ্ধের ঔজ্জ্বল্যে আড়াল হয়ে পড়া গৌতমের ব্যক্তিগত মনোজগতের রঙে সিদ্ধার্থকে আঁকা হয়েছে।’
শুরু থেকেই নাটকটি দর্শকের মনোযোগ কেড়ে নেয়। টিকিট না পেয়ে ফিরেও যেতে হয়েছে অনেক দর্শককে। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রথম শোয়ের পর ২০ নভেম্বর একই সময়ে দ্বিতীয়, ২১ নভেম্বর বিকাল ৪টায় তৃতীয় এবং ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চতুর্থ শো। প্রতিদিন প্রদর্শনীগুলো হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তন মঞ্চে।