
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা পিন্ডির হাত থেকে মুক্ত হয়েছি অন্য কারো হাতে বন্দি হওয়ার জন্য নয়। আমরা কারো দিকে লাল চোখে তাকাব না, আমাদের দিকে কেউ লাল চোখে তাকালে সেটাও আমরা বরদাস্ত করব না। আমরা বিদেশি বন্ধু চাই, প্রভু চাই না। আমরা সমণ্ডমর্যাদারভিত্তিতে বৈদেশিক সম্পর্ক রাখতে চাই।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নাটোর নবাব সিরাজ-উদণ্ডদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী তাদের সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, যা দেশের জাতীয় বাজেটের পাঁচ গুণ। আওয়ামী লীগ তাদের আমলে জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, বাড়িঘর ও দলীয় অফিস লুটপাট করে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শুধু জামায়াত নয়, দেশপ্রেমিক প্রতিটি দল ও সাধারণ মানুষের ওপরেও এমন নির্যাতন করেছে। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে। দেশের হাজারো আলেমণ্ডওলামাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে টেনে হিঁচড়ে জেলে নিয়ে গেছে। বিনা বিচারে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, ইজ্জত দেয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে সম্মান দেন, আবার প্রয়োজনে কেড়ে নেন। গণভবনে সেদিন রান্না হয়েছিল, কিন্তু সেই খাবার তাদের কপালে লেখা ছিল না।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের নামে তিন তিনবার তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। যারা জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না, তাদের আবার কিসের নির্বাচন।
আওয়ামী লীগের নির্যাতন নিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশের ১৮ কোটি মানুষকে প্রতিপক্ষ ভেবে তাদের শাসন আমলে অমানুসিক নির্যাতন করেছে। মানুষের জন্য তাদের মায়া ভালোবাসা ছিল না বলেই আন্দোলনের সময় নির্বিচারে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে। জামায়াত এই আন্দোলনের সকল শহীদদের বাড়িতে পৌঁছাতে চেষ্টা করেছে। সকল আহতদের পাশে সাধ্য মতো দাঁড়িয়েছে।
নারীর ক্ষমতায় নিয়ে তিনি বলেন, যে শিক্ষায় দেশ প্রেম আছে, দেশাত্ববোধ ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা আছে নিজেদের সন্তানদের সেই শিক্ষা দিতে হবে। জামায়াত দেশের বেকারদের হাত কর্মীর হাতে পরিণত করবে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীকে গৃহবন্দি নয়, বরং নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নারীকে অসম্মান করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।
ডা. শফিকুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেছেন, আরো আন্তরিকতার সাথে পঙ্গু ও আহতদের পাশে আরো সক্রিয়ভাবে দাঁড়াতে হবে, প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে, দ্রব্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। এদেশের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই দেশের গর্বিত নাগরিক। আমরা সকলে মিলে মিশে এই দেশ গড়তে চাই, এক সাথে বসবাস করতে চাই। মাইনোরিটি-মেজরিটি শব্দ দেশে আর শুনতে চাই না।
দ্রততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এই সরকার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে যার যার জায়গায় চলে যাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে দফায় দফায় যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা আমানতের খেয়ানত করেছে। কম-বেশি সবাই এদেশের মানুষককে কষ্ট দিয়েছে, জুলুম করেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে তাদের আমলে। পট পরিবর্তনের পর জামায়াতের নেতাকর্মীদের বলেছি, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ গড়তে চাই।
নাটোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ড. মীর নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো: সাদেকুর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো: শাহাবুদ্দিন, রাজশাহী বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, নিবার্হী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, পাবনা জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল, নাটোর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মো: ইউনুস আলী ও অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান, যুগ্ম সম্পাদক আতিকুল ইসলাম রাসেল ও অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিম এবং নাটোর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আফতাব উদ্দিন প্রমুখ।