ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উত্তরার ঘটনায় সেই নারী-পুরুষ স্বামী-স্ত্রী নন

গ্রেপ্তার ৫ জন
উত্তরার ঘটনায় সেই নারী-পুরুষ স্বামী-স্ত্রী নন

রাজধানীর উত্তরায় গত সোমবার রাতে এক দম্পতিকে প্রকাশ্যে কোপাতে থাকেন কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য। এ সময় পুরুষকে বাঁচাতে ধারালো অস্ত্রের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যান এক নারী। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা। একাধিক গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম করা হয়, স্বামীকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়ান স্ত্রী, ভাসছেন প্রশংসায়। ঘটনা একদিন পর জানা গেল, কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত মেহবুল হাসান এবং নাসরিন আক্তার ইপ্তি স্বামী-স্ত্রী নন, তারা কেবল সহকর্মী। হঠাৎ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন মেহবুল হাসানের স্ত্রী শম্পা বেগম। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে শম্পা জানান, ২০১৬ সালে মেহবুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে, যাদের বয়স ৫ ও ৪ বছর।

শম্পা অভিযোগ করেন, ইপ্তির সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। তবে, তাদের বিয়ে হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। পরিচয় প্রকাশ করায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে কর্মরত মেহবুল ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হন। শম্পা জানান, স্বামী বাইরে থাকলে তিনি সাধারণত তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। হামলার বিষয়টি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পারেন। তবে, ওই রাতে মেহবুল কেন উত্তরায় গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

সাক্ষাৎকারের সময় মেহবুল হাসান শম্পাকে ফোন করেন এবং বলেন, ‘তুই মিডিয়াতে থাক। মিডিয়াতে তুই বউ হয়ে আয়।’ এ সময় তার শাশুড়িও ফোনে কথা বলেন। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে মেহবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার ইপ্তিকে কয়েকজন তরুণ হামলা করে। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শম্পা বলেন, ‘মেহেবুল হাসান আমার বৈধ স্বামী। নাসরিন আক্তার ইপ্তির সঙ্গে তার স্বামী-স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।’ তিনি আরো জানান, বিয়ে সংক্রান্ত প্রমাণাদি তার কাছে রয়েছে। এদিকে হামলার ঘটনায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। সেখানে ভুক্তভোগী নারী নাসরিন আক্তার ইপ্তিও নিজেকে মেহবুল হাসানের স্ত্রী দাবি করেছে।

দম্পতি মেহেবুল হাসান (৩৭) ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইপ্তির (২৮) ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত ‘কিশোর গ্যাং’ চক্রটির মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. মোবারক হোসেন (২৫), রবি রায় (২২), মো. আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির (২২), সজীব (২০) এবং মেহেদী হাসান সাইফ (২৪)। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৯টার দিকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের একটি বাসার সামনে কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এক দম্পতির ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার টহল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেপ্তার করে।

পরে ভিকটিম নাসরিন আক্তার ইপ্তি বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার সময় মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার ইপ্তি কেনাকাটা শেষে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুইটি মোটরসাইকেলে তিনজন যুবক দ্রুতগতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। রিকশায় থাকা এক শিশুর বাবা প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তখন ভিকটিম দম্পতি তাদের ঝগড়া না করার অনুরোধ করলে মোটরসাইকেল আরোহীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেবুল হাসানের সঙ্গেও তর্ক শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মেহেবুল হাসান ও আশপাশের লোকজন হামলাকারীদের একজনকে ধরে ফেলে এবং তার মোটরসাইকেল আটক করে। এরপর সে ফোন করে আরো কয়েকজনকে ডেকে আনে। কিছুক্ষণ পরই দেশীয় অস্ত্রসহ কয়েকজন এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে নাসরিন আক্তার ইপ্তিকেও আঘাত করা হয়। এতে তারা দুজনেই গুরুতর আহত হন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত