ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসরাইলে একাধিক বাসে বিস্ফোরণ

ইসরাইলে একাধিক বাসে বিস্ফোরণ

ইসরাইলের বাত ইয়াম শহরে অন্তত তিনটি বাসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত শহরটিতে আলাদা তিনটি পার্কিং এলাকায় খালি বাসে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বাসগুলো খালি ছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলের বাত ইয়ামে শহরে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ইসরাইল বলছে, এটি সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হামলা। খবর বিবিসির। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে তিনটি বাসে বিস্ফোরণের পর অঞ্চলজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। জরুরি সেবা সংস্থাগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি শুরু করে। আরও দুটি বাসে বিস্ফোরক থাকার খবর পাওয়া গেলেও সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। সন্দেহভাজনদের খোঁজে পুরো শহরজুড়ে অভিযান চলছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ৫ কেজি ওজনের একটি অবিস্ফোরিত ডিভাইসে বিশেষ বার্তা পাওয়া গেছে। লেখা ছিল ‘তুলকারেম থেকে প্রতিশোধ’। তুলকারেম অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি শহর। নেতানিয়াহু বাহিনীর ওই অঞ্চলে সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবিরে অভিযান আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট করা হচ্ছে। কান পাবলিক ব্রডকাস্টার জানিয়েছে, পরিবহণমন্ত্রী মিরি রেগেভ তার মরক্কো সফর সংক্ষিপ্ত করে ইসরাইলে ফিরে আসবেন।

এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই ইসরাইলজুড়ে বাস, ট্রেন ও রেল পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী অন্যান্য যানবাহনগুলোতে বিস্ফোরক থাকার আশঙ্কায় তল্লাশি চালাচ্ছে। এছাড়া জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং সন্দেহজনক কোনো বস্তু দেখলে নিরাপত্তা বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। নিরাপত্তা বাহিনী হামলার উৎস খুঁজে বের করতে কাজ করছে। সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

ইসরাইল বাত ইয়াম বিস্ফোরণ : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরে বড় ধরনের অভিযান চালানোর জন্য দেশটির সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তেল আবিবের কাছে বাসে বিস্ফোরণের পর এ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নেতানিয়াহুর কার্যালয় বাসে বিস্ফোরণের ওই ঘটনাকে ‘গণহামলার চেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এর আগে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করে, তেল আবিবের কাছে দুটি শহরতলিতে তিনটি বাসে বিস্ফোরণ হয়েছে। সেখানে চারটি বিস্ফোরক যন্ত্র পাওয়া গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, যে বাসগুলোতে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেগুলো ডিপোতে দাঁড়ানো ছিল। বাসে কেউ ছিলেন না। এ বিস্ফোরণ ইসরায়েলে ২০০০-এর দশকে ফিলিস্তিনি অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তখন বাসে বোমা হামলা হতো। যদিও এখন এ ধরনের হামলার ঘটনা বিরল।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতকে তদন্তে সহযোগিতা করছে। পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করছে এবং জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। বিস্ফোরণের দায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ স্বীকার করেনি। এ ঘটনার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সামরিক বাহিনী ও শিন বেতের প্রধান এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে নেতানিয়াহু কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে তার কার্যালয়। পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, টাইমারযুক্ত কয়েকটি বিস্ফোরক যন্ত্র শনাক্ত করা হয়েছে। আরও কোথাও বিস্ফোরক যন্ত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে গণপরিবহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচার করার খবরে দেখা গেছে, ডিপোতে একটি বাসে আগুন জ্বলছে। পুড়ে যাওয়া একটি বাসের ছবিও দেখা গেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরদার করবে এবং নির্দিষ্ট কিছু এলাকার প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে কোন কোন এলাকায় এমনটা করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি। গত মাস থেকে পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি তাদের। অভিযানে পশ্চিম তীরের কয়েকটি শরণার্থীশিবির গুঁড়িয়ে দেয়ায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

হামাসের হস্তান্তর করা চার লাশের একটি কোনো জিম্মির নয়, দাবি ইসরায়েলের : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যে চার জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে, তার মধ্যে একটি গাজায় আটক থাকা কোনো জিম্মির নয় বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ দাবি করে। হামাস এরই মধ্যে নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, হস্তান্তর করা লাশগুলোর মধ্যে একটি আলোচিত বিবাস পরিবারের শিশু কেফির বিবাস ও অন্যটি তার ভাই আরিয়েলের বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তৃতীয় লাশটি তাদের মা শিরির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার কিংবা অন্য কোনো জিম্মির সঙ্গে এ লাশের মিল পাওয়া যায়নি। লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এক বিবৃতিতে শিরি ও সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, এটি হামাসের ভয়াবহ লঙ্ঘন, যারা চুক্তি অনুসারে চার নিহত জিম্মির লাশ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য। এদিকে জিম্মি ওদেদ লিফশিৎসের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তার লাশ আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবির বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এক জিম্মির লাশ ফেরত না দেয়ার ব্যাখ্যা দিলো হামাস : ইসরায়েলের কাছে চার জিম্মির লাশ হস্তান্তরের পর উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ফেরত দেয়া চার কফিনে শিরি বাইবাস নামের এক নারীর বদলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ ছিল বলে অভিযোগ করেছে তেল আবিব। জবাবে গতকাল শুক্রবার হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় একাধিক জিম্মির সঙ্গে নিহত হয়েছিলেন শিরি। তার দেহাবশেষ অন্যদের সঙ্গে মিশে গেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে। শিরির মৃত্যু ও তার দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিতে অপারগতার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে হামাস কর্মকর্তা ইসমাইল আল-থাওয়াবতেহ বলেছেন, জিম্মিদের যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল, সে ভবন ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। শিরিসহ একাধিক জিম্মির দেহাবশেষ টুকরো টুকরো হয়ে এমনভাবে মিশে গেছে, তাদের আর আলাদা করা সম্ভব নয়। গত বছর হামাস একাধিকবার দাবি করেছে যে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই শিশু অ্যারিয়েল ও কেফিরসহ নিহত হয়েছেন তাদের মা শিরি বাইবাস।

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গতকাল প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি বন্দিদের লাশ হস্তান্তর করে হামাস। তাদের হাতে জিম্মি থাকা দুই শিশু ও তাদের মাসহ চারজনের লাশ ইসরায়েলের কাছে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত