বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদের তাড়িয়েছে। কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনো মুক্ত হতে পারিনি- এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদের তাড়িয়েছে। কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারিনি। যে সমস্ত অপকর্ম করতো ফ্যাসিবাদীরা, সেই অপকর্ম যদি আমিও করি তাহলে আমিও একজন ফ্যাসিবাদী। আমরা বারবার অনুরোধ করে বলেছি, দয়া করে শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান জানান। দয়া করে আহত-পঙ্গু ভাই-বোনদের প্রতি সম্মান দেখান। তাদের রক্তকে, জীবনকে, তাদের ইজ্জতকে, তাদের আবেগকে, তাদের ত্যাগকে মেহেরবানি করে অপমানিত করবেন না।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দেখছি কতিপয় কাজ এখনো বন্ধ হচ্ছে না।
আমরা দেশবাসীকে বারবার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি কিন্তু এই আহ্বান আমরা কেয়ামত পর্যন্ত জানাবো না। কারণ এই জুলুমটা সারা জাতির উপর হচ্ছে। ঘাটে-ঘাটে যে চাঁদাবাজি হয় এর কারণে প্রত্যেকটা দ্রব্যমূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এর ছাপ এ দেশের একজন শ্রমজীবী মানুষের ওপর পড়ে। এমনকি রাস্তার আমার একটা ভিক্ষুক ভাই অথবা বোনের ওপরেও পড়ে। তাহলে তো আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা কেন এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব, কেন আমরা নীরবে সহ্য করব? কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেন, বিনয়ের সাথে বলি, এ কাজ বন্ধ করুন। জাতিকে স্বস্তির সঙ্গে বাঁচতে দিন, সামনে এগিয়ে যেতে দিন। আবার যাতে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারার অধ্যায় তৈরি না হয়, তার থেকে ফিরে আসুন। ফিরে না আসলে ভাই আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা এ লড়াই বাদ দেব না। আমরা অবিরাম চলা সৈনিক। আমি দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারি কিন্তু এই কাফেলা থাকবে ইনশাআল্লাহ। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো. দেলাওয়ার হোসেন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো. কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, শামসুর রহমান প্রমুখ।
সেই সানজিদার প্রশংসা করলেন জামায়াত আমির : ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে ‘পেছনে পুলিশ, সামনে স্বাধীনতা’ বলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আনোয়ার চৌধুরীকে স্যালুট জানিয়েছেন তিনি গতকাল ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার কৃতিত্ব নিয়ে প্রশংসা করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা ‘৫২-এর আন্দোলন করেছিলেন, তারা প্রতিষ্ঠিত সরকার ও সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। একদিকে নিজের মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে নিরস্ত্র মানুষ, আরেক দিকে জনগণের টাকায় কেনা সশস্ত্র পুলিশ ও সেনাবাহিনী। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পেছাননি।’ সানজিদার বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘চব্বিশের আন্দোলনেও আমরা একজন ছোট বোনকে দেখেছি, সম্ভবত তিনি বলেছিলেন, ‘পেছনে পুলিশ সামনে স্বাধীনতা’। আরো বলেছিলেন, ‘লড়েই যাব, মরেই যাব, মেরেই যাব’। বোনটার নাম সানজিদা চৌধুরী। স্যালুট বোন তোমাকে, স্যালুট। তোমার মধ্যে বায়ান্ন ও একাত্তরের তেজ আছে। তোমার মতো বোন ও ভাইদের অনেক প্রয়োজন।’ তরুণদের অবদান ভোলার নয় উল্লেখ করে আমিরে জামায়াত বলেন, ‘এরা একেকজন একেকটি জীবন্ত ইতিহাস। এই সৌভাগ্য সবার হয় না। সেই ইতিহাসকে স্মরণ করা যেমন দায়িত্ব, তেমনি এখান থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিপ্লবী হওয়ার শিক্ষা নেয়াও কর্তব্য।’ ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ সামান্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে। এতে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বায়ান্ন আমাদের শেখায়, যেখানে অন্যায়, সেখানে প্রতিবাদ। আর যেখানে সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ, সেখানেই প্রতিরোধ।’ আত্মসমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মানুষ কিংবা দল হিসেবে আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই। তাই আমাদের ভুল হলে আলোচনার মাধ্যমে সমালোচনা করবেন।’
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবে জামায়াত : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কারাগারে থাকা সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ২৫ ফেব্রুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি ডেকেছে জামায়াত। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিগত ১৩ বছরের অধিক সময় ধরে কারাগারে আটক আছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকর্মী মুক্তিলাভ করেছেন। দলটি বলছে, ‘দেশবাসী আশা করেছিল, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার এটিএম আজহারুল ইসলামও স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিলাভ করবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় সাড়ে ৬ মাস অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তিলাভ করেননি। এতে দেশবাসী হতবাক ও বিস্মিত।’ গণঅবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জামায়াতের আমির জানিয়েছিলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি না দিলে তিনি নিজেই গ্রেপ্তার হতে চান। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন।