ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে দেশব্যাপী চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে সরগরম রাজনীতিও। শীর্ষ নেতৃত্বে কারা থাকবেন কিংবা সেটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, দলের নাম কী হবে- এরকম নানা বিষয় নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এই আগ্রহের মূল কারণ দলটির উদ্যোক্তা জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্ররা। এর পেছনে কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দলটির আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগের দিন আগামীকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টার পদ ছাড়বেন বলে শোনা যাচ্ছে নাহিদ ইসলাম। একাধিক বিশ্বস্থ সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দলের প্রধান হচ্ছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এমন আলোচনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন যমুনায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। তার এ সাক্ষাতের পর উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, উনি (নাহিদ) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজ সাক্ষাৎ করেছেন, শুধু এটুকু জানি। তথ্য উপদেষ্টা ছাড়াও আরও কয়েকজন উপদেষ্টা সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা এটা নিয়মিত সাক্ষাৎ বলেই জানি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, মার্চ থেকে রোজা। ফলে ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের দল আসছে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ১ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে চান তারা। সে লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে অনুষ্ঠান প্রস্তুতি কমিটি। গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র তৈরি নিয়ে পৃথক কমিটি রয়েছে। এসব কমিটি দফায় দফায় সভা করছে।
সূত্রমতে, ছাত্রদের নতুন এই দলে ১০ বা ১২টি গুরুত্বপূর্ণ পদ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, যুগ্ম আহ্বায়ক, প্রধান সংগঠক ?ও মুখপাত্র পদ। এছাড়া অভ্যুত্থানে জড়িত সব মহলকে ‘জায়গা’ করে দিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব এবং দুটি মুখপাত্র পদের মতো নতুন পদ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন পক্ষ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কাঠামোসহ একাধিক প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। কেউ কেউ সুপার-টেন বা সুপার-টুয়েলভ স্টাইলের শীর্ষ কাঠামো তৈরির প্রস্তাব করেছেন। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
সূত্র জানায়, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক পদ গ্রহণের বিষয়ে শুরু থেকেই সবার মধ্যে ঐকমত্য ছিল। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দিতে পারেন। নতুন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি জানা যাচ্ছে, ছাত্ররা একটি নতুন ছাত্র সংগঠনও গঠন করতে যাচ্ছেন। গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক নতুন ছাত্র সংগঠনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। তারা বলেন, নতুন ছাত্র সংগঠন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এমনকি রাজনৈতিক দল গঠনের আগেই ছাত্র সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে এমন কথাও জানানো হয়। তবে সম্ভাব্য ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণায় নতুন প্রশ্নও উঠেছে। এই ছাত্র সংগঠনটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন হবে কি না এমন সন্দেহ দেখা যাচ্ছে কারও কারও মধ্যে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন সংগঠন যে কোনো সময় ঘোষণা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে দলটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হিসেবে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এবং সদস্য সচিব হিসেবে জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক পদে রশিদুল ইসলাম রিফাত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের এবং সদস্য সচিব পদে মহির আলম আসতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য পদে আলোচনায় আছেন সানজানা আফিফা অদিতি, রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ। এগুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র আবু বাকের মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন আব্দুল কাদের, রিফাত রশীদ, তাহমিদ আল মুদাচ্ছিরসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে আবু বাকের মুজমদার জানান, ছাত্র সংগঠন তৈরির কাজ তারা গুছিয়ে এনেছেন। খুব শিগগিরই নাম চূড়ান্ত করে দলের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি, আটষট্টি, ঊনসত্তর, একাত্তর এবং চব্বিশ সব গণআন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে আমরা ছাত্র রাজনীতিকে সক্রিয় করব।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, যারা ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদের অনেকেই সাধারণ ছাত্র। তাদের মধ্যে যারা রাজনীতিতে আগ্রহী তাদের জন্যই রাজনৈতিক সংগঠন করা হচ্ছে। যেন তারা এই সংগঠনের মাধ্যমেই ‘ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারেন। এখানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা একত্রিত হয়েই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিজেদের টিকে থাকা কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে একটা ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করছি।’
সম্ভাব্য এই ছাত্রসংগঠনের পেছনে যারা কাজ করছেন, তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুরুতে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠন হবে। এরপর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি গঠন করা হবে। তবে সংগঠনের নাম চূড়ান্ত হয়নি এমন তথ্য জানিয়ে এর গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, নাগরিক কমিটির নেতারা যে রাজনৈতিক দল তৈরি করছেন, সেই ‘দলের আত্মপ্রকাশের আগেই ছাত্র সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটবে’।
অপরদিকে, নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানিয়েছেন, ‘শৃঙ্খলা, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র প্রণয়নসহ বিভিন্ন কমিটি করা হয়েছে। কয়েকটি সভায় আত্মপ্রকাশের সময়, আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের ধরন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ জনমত জরিপ কর্মসূচি শুরু করেছি। সেখানে আমাদের কাছে লক্ষাধিক উপাত্ত এসেছিল। আমরা সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করেছি। দল তৈরির জন্য এরইমধ্যে নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কমিটি হয়েছে। আশা রাখি, সপ্তাহের শেষ দিকে আমরা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে পারব।’
আত্মপ্রকাশের সময় প্রায় চূড়ান্ত হলেও দলের নামণ্ডসাংগঠনিক কাঠামো এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। শীর্ষ পদগুলো নিয়ে এখনও জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মতবিরোধ দূর হয়নি। শুধু আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম চূড়ান্ত। সদস্য সচিব পদে আখতার হোসেনও অনেকটা নির্ধারিত বলে জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন। তবে কে কোন পদে থাকবেন, তা নিয়ে দরকষাকষি চলমান। এই বিরোধ মেটাতে সব পক্ষকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সভা হয়নি বলে জানা গেছে। তবে নাগরিক কমিটির নেতারা একটি সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করছেন বলে কয়েকজন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে আলী আহসান জুনায়েদ ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যে কোনো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রাথমিক ধাপে নানাবিধ অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটিতেও তা হচ্ছে। এটা খারাপ চোখে দেখার কিছু নেই। জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতার অভাব আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা যেন নতুন দলে না থাকে, সেজন্য এর গঠন প্রক্রিয়া এবং নেতৃত্ব নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘নাগরিক কমিটিতে থাকা জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা প্রতিনিধি, সাবেক পরিষদ, কওমি-হেফাজত অংশ, সাবেক শিবির ইত্যাদি সবাই মিলে একত্রে এই দাবি তুলেছি। দুঃখজনকভাবে বর্তমানে যেভাবে এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গঠন হচ্ছে, তা গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে না। আমি মনে করি, নাগরিক কমিটির সবাইকে সঙ্গে নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত।’ এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘সংগঠনের নেতৃত্ব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলমান। গ্রহণযোগ্যতা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ভিশন-মিশনে একাত্মবোধের জায়গাগুলো বিবেচনায় নিয়ে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করব।’
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে গত দুই মাসে নানা আলোচনা তৈরি হয়। যাত্রা শুরুর আগেই দলের শীর্ষ পদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মধ্যে চারটি সক্রিয় বলয়ও স্পষ্ট হয়। দল গঠনের আগে পদ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ তৈরির পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সদস্য সম্প্রতি এ নিয়ে ফেসবুকে কিছু পোস্টও দেন।
নাগরিক কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামের বিষয়টি নিয়ে সবাই একমত হলেও বাকি পদগুলো নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়। এই সংকট সমাধানে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নেয়া হয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে।
নাগরিক কমিটির এক নেতা বলেছেন, কিছু সমস্যা থাকতে পারে, তবে এটি বিভক্তি নয়, বরং সুস্থ প্রতিযোগিতা। আশা করছি, দল ঘোষণার আগেই এসব বিষয় সমাধান হবে এবং যথাসময়েই ঘোষণার বিষয়ে আশাবাদী।
এদিকে, খবর আসছে যে, ছাত্রদের নতুন দলের প্রধান পদে নাহিদ ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে। যদিও তিনি বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত করেননি। তবে, গতকাল রোববার নাহিদ ইসলাম, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার বাসভবনে গিয়েছিলেন। সেখানে রীতিমতো জাতীয় পতাকা উড়ছিল তার গাড়িতে, তবে সাক্ষাৎ শেষে গাড়ি থেকে পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়। এটি নিয়ে গুঞ্জন ওঠে, নাহিদ ইসলাম তথ্য উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
কিন্তু, নাহিদ ইসলাম বিষয়টি ক্লিয়ার করেছেন গণমাধ্যমের কাছে। তিনি রাত ৮টার দিকে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেননি তিনি। নাহিদ বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করিনি।’
এর আগে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর তথ্য উপদেষ্টার পদে মাহফুজ আলম আসতে পারেন। মাহফুজ আলম বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের উপদেষ্টা। তিনি আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ছয়টি পদে কারা আসবে, তা বেশ কিছুটা চূড়ান্ত হয়েছে। ছাত্রনেতারা সমঝোতার ভিত্তিতে দুইটি নতুন পদ সৃষ্টি করছেন। দলটির আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠকের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিবের পদও রাখা হচ্ছে।
নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের নাম চূড়ান্ত হলেও, সদস্যসচিব পদ নিয়ে কিছু মতবিরোধ রয়েছে। তবে, সমঝোতার ভিত্তিতে আখতার হোসেন এই পদে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলের মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র হিসেবে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর নামও শোনা যাচ্ছে।
দলের শীর্ষ পদগুলোতে আসতে পারেন ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আলী আহসান জোনায়েদ এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি করা ছাত্রনেতাদের আপাতত নতুন দলে কোনো পদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হতে পারে। তবে, ওই দিনই বড় পরিসরে জমায়েত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই।
নতুন দল গঠনের প্রস্তুতিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতার সমন্বয়ে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এর মধ্যেই ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন উপকমিটি তৈরি করেছে। নতুন দলের নাম চূড়ান্ত না হলেও, দল গঠনের প্রক্রিয়া পুরোপুরি এগিয়ে যাচ্ছে।
নতুন দল গঠনের পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি, যার সদস্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতাদের বড় অংশ রয়েছে। তবে, নতুন দলের শীর্ষ পদ নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ এখনও রয়েছে।