উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পর্যাপ্ত সহায়তার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। গতকাল বুধবার দুপুরে মিছিল নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে এসে সড়কে বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনের সড়কে বসে পড়েন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন, উপস্থিত ব্যক্তিরা ক্যাটাগরি বৈষম্যদূর করে আহতদের দ্রুত পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেয়া, বিশেষ সুরক্ষা আইন-প্রণয়ন করা এবং ইমার্জেন্সি হটলাইন চালুর দাবি জানান। এসব দাবির বিষয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, আপনারা যে আন্দোলন করেছেন সেটির ফলেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আমরা সবাই একটি সুন্দর ও নতুন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। আপনারা সেজন্য আহত হয়েছেন রক্ত দিয়েছেন। আপনারা যে সংগ্রাম করেছেন সে জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি নিজে এখানে উপস্থিত হয়ে এই দাবিগুলো গ্রহণ করলাম। যে মন্ত্রণালয় এই দাবিগুলো নিয়ে কাজ করছে আমি নিজ হাতে তাদের কাছে পৌঁছে দেব। আমি আবারও বলছি, আপনাদের ত্যাগ অনস্বীকার্য এবং মূল্য দিয়ে নির্ধারণ করা যাবে না। কিন্তু সরকারের একটি নিয়ম আছে। এখন এটি আমি হাতে নিয়েছি এবং যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেব। একইসঙ্গে বিষয়টি যেন সুবিবেচনা করা হয় সেটিরও অনুরোধ জানাব। আমি আশা করব, আপনারা এই অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেবেন।
এসময় অবস্থানকারীরা নারাজ হলে আবারও আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজে এখানে এসে দাবিগুলো হাতে নিয়েছি। যে উপদেষ্টা এই বিষয়টি দেখেন তার কাছে আমি পৌঁছে দেব। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন। আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বিকেলে সোয়া ৩টার দিকে আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে শহীদ পরিবার ও আহতদের পক্ষে সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, আগে পরে আমাদের অনেক ঘোরানো হয়েছে। এবার আর আমরা ঘুরতে চাই না। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি বাস্তবায়ন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একইসঙ্গে সারা দেশ থেকেও অন্যান্য আহত ব্যক্তিরাও এখানে যুক্ত হবেন।
দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ইমারর্জেন্সি হট লাইন চালুর বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন আমাদের দাবি দ্রুত ক্যাটাগরির সংশোধন করতে হবে। যেই ক্যাটাগরি এখন দেওয়া হচ্ছে সেটা বৈষম্যমূলক। একই সঙ্গে প্রতিটি শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের মাসিক ভাতা দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। তার পরিমাণের বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা আহতদের পক্ষ থেকে সরকারকে দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো সংখ্যা উল্লেখ করিনি। একটি সম্মানজনক ভাতার বিষয়ে বলেছি। এরই মধ্যে এই বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো সুরাহা করতে পারেননি। এখন আমাদের দাবি একটাই। সেটি হচ্ছে, দ্রুত যেন এসব দাবি পূরণ করা হয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বনে থাকতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের। এসময় তাদের, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’, ‘এক দুই তিন চার, সব শালারা বাটপার’, ‘দাবি মোদের একটাই, ক্যাটাগরি দুইটা চাই’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, আহতরা উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রবেশের গেটের সামনের সড়কে বসে পড়েছেন। পুলিশ ও কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা তাদের ঘিরে আছেন।
উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন সময় আন্দোলনে আহতরা স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। গতবছরের ১৩ নভেম্বর প্রথম ‘উন্নত চিকিৎসার’ দাবিতে পঙ্গু হাসপাতালে সামনে বিক্ষোভ করেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আহত কয়েকশ’ ব্যক্তি। সেদিন রাত ৩টার দিকে সরকারের চার উপদেষ্টার আশ্বাসে প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর তারা সড়ক ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যান। পরে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার থেকে আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালে সামনে আবারও বিক্ষোভে নামেন আহতরা। সেসময় তারা সুচিকিৎসার পাশাপাশি ‘পুনর্বাসন, আর্থিক সহায়তা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’রও দাবি তোলেন।
সেদিন সেখানে সারা রাত আন্দোলন করার পর ২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে আগারগাঁও ও শ্যামলী মিরপুর রোড সড়ক অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ করেন। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুর সড়ক ছেড়ে বিক্ষোভরত আহত ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রা করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর আশ্বাসে রাত পৌনে ২টার দিকে তারা যমুনার সামনে থেকে বিক্ষোভ ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যান আন্দোলনে আহতরা।