ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাজারে আগুন, মানুষ খাবে কী!

বাজারে আগুন, মানুষ খাবে কী!

শুরু হয়ে গেছে রমজান মাস। আজ প্রথম রোজা। এই মাসকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে চলছে প্রস্তুতি। তারই অংশ হিসেবে চলছে মানুষের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। তবে অভিযোগ সেই পুরোনো, দামে ‘আগুন’। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোজ্যতেলের সংকট। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইফতার ও সাহরিতে একটু ভালো খাবারের প্রত্যাশা করে। কিন্তু যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, তাতে ভালো খাবার তো দূরের কথা নিম্ন আয়ের মানুষ কী খাবে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিছুতেই যেন নাগালে আসছে না নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ইফতারে মানুষ শরবত খায়, সেই শরবত তৈরির লেবুও এখন ১০০ টাকা হালি! এছাড়া চিনি আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আগুন লাগতে শুরু করেছে শসা ও বেগুনের দামেও। মুরগি ও মাংশের দামও কিছুটা বেড়েছে। অধিক দাম হওয়ায় ফলমূলে হাত দেয়াও যেন এখন দুষ্কর! শুধু তাই নয়- ইফতার তৈরির অন্যতম উপাদান সয়াবিন তেল বাজার থেকে অনেকটা উধাও। দাম দিয়েও বাজারে মিলছে না তেল। স্বল্প পরিসরে কিছুটা তেল পাওয়া গেলে কিনতে হচ্ছে অধিক দামে। এমন পরিস্থিতিতেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম গত রোজার তুলনায় সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সরকার সারা রোজার মাস দাম সহনীয় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ইফতারে সবার গ্লাসে লেবুর শরবত না হলেই চলে না। তাই রমজান আসলেই সব ধরনের লেবুর দামই বাড়তে থাকে। কারণ, লেবুর দাম গেল এক সপ্তাহে অন্তত ১২০ ভাগ বেড়েছে। ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া লেবুর গতকালের বাজারে ৬০ থেকে ১০০ টাকা হালি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার কারণে হঠাৎ বাজারে লেবুর চাহিদা অনেক বেড়েছে; কিন্তু সে তুলনায় লেবুর সরবরাহ আসছে না। এ কারণে দাম বেড়েছে।

বাজারে এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগেও লেবুর সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৪০ টাকা। সে সময় ১৫-২০ টাকাতেও এক হালি লেবু কেনা গেছে। এখন ৬০ টাকার নিচে মিলছে না। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক হালি এলাচি লেবু ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের শরবতি লেবুর দাম এক হালি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। অন্যদিকে কাগজি লেবু এক হালি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, রোজা উপলক্ষে লেবু কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দোকানে দাম জানতে চাওয়ার পর আর কিনতে ইচ্ছা করছে না। হালি চাচ্ছে ৮০ টাকা। রোজা ঘিরে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। নজরদারির অভাবেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। একজন বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আকার ও মানভেদে ৪০-৬০ টাকা দিয়ে হালি কিনেছি। যার কারণে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হয়। বিক্রিও করতে হয় বাড়তি দামেই।

রোজায় ইফতারির অন্যতম উপকরণ হলো শসা। বাজারে এখন ৯০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শসা। যা আগে ছিল ৫০ টাকা। এদিকে বেগুনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা দরে এবং গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪০-৫০ টাকা।

ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, লেবুর হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক। রোজায় শরবত তৈরির জন্য লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন লেবুর মৌসুম নয় বলে দাম বাড়তি থাকা স্বাভাবিক। তবে যতটা বেড়েছে তা স্বাভাবিক নয়। এবারে ইফতারের পাতে বেগুনি রাখতে সমস্যায় পড়তে হবে। বেগুনের কেজি এখনই ৮০ টাকা ছুঁয়েছে। ধনেপাতা নিয়েও অভিযোগ। একই দশা অন্যান্য সবজিরও।

প্রায় মাসখানেক ধরে চলা অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য সয়াবিন তেলের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এতদিন খুচরা বাজারে পরিমাণে কম এবং ছোট বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও রোজার ঠিক আগে সেটিও উধাও হয়ে গেছে। পাড়া-মহল্লার দোকান কিংবা খুচরা বাজারের অধিকাংশটিতেই একেবারেই ব্ল্যাকআউট বোতলজাত সয়াবিন তেল। কালেভদ্রে বিভিন্ন দোকানে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা ১-২ লিটার কিংবা ৫০০ মিলিলিটারের ছোট বোতল মিলছে। তবে প্রচলিত কোম্পানির ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল একেবারেই উধাও হয়ে গেছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল দৃশ্যমান নেই। বোতলজাত তেল চাইলে তারা ক্রেতাদের না করে দিচ্ছেন। তবে খোলা তেল ও পাম অয়েলের পর্যাপ্ত মজুদ দোকানগুলোতে দেখা গেছে। আবার অনেক দোকানে প্রচলিত সয়াবিন তেলের কোম্পানির অনুপস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে বোতলজাত করা বিভিন্ন নামের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা গেছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ দোকানি। তারা বলছেন, এমন কি হয়ে গেল যে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই চলমান সংকট সমাধান করা গেল না। এছাড়া ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়েও তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আমরা খুচরা বিক্রেতারা পর্যাপ্ত পণ্য পাচ্ছি না।

একজন দোকানি বলেন, কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না। আবার তেল চাইলে তেল, ময়দা, আটা, সুজির বস্তা নিতে বলছেন। এই সুযোগে কেউ কেউ খোলা তেল বোতলে ভরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামে বিক্রি করছেন।

এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, সরকারের বাজার তদারকির ঘাটতির কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন এবং তেলের সরবরাহ সীমিত রাখছেন। এই সংকট নিরসনে দ্রুত বাজার মনিটরিং, কৃত্রিম সংকট তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করছেন তারা।

একজন ক্রেতা বলেন, রোজায় ভাজাপোড়া খাবার তৈরিসহ বিভিন্ন কারণে সয়াবিন তেলের প্রয়োজনীয়তা বেশি হয়। কিন্তু দোকান ঘুরেও বোতলজাত তেল পাইনি। শেষ পর্যন্ত কয়েক দোকান ঘুরে ২ লিটারের একটি বোতল পেয়েছি।

আরেক ক্রেতা বলেন, সয়াবিন তেলের এই সংকট গত মাসেই শুরু হয়েছে। এটি এখনও নিরসন হয়নি। কিন্তু দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যাতে রমজান মাসে ভোক্তারা স্বস্তিতে থাকতে পারেন।

তেল কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, তেল কেনা লাগতোই। সুপারশপে না পেয়ে অন্তত ১০টা নরমাল দোকানে খুঁজেছি, তেল নাই কারও কাছে। পরে বাধ্য হয়ে হাফ লিটার সরিষার তেল কিনে এনেছি। আরেকজন ক্রেতা জানান, ১০-১৫টা দোকান ও সুপারশপ ঘুরেও সয়াবিন তেল পাননি তিনি। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, অবশেষে একটি দোকানে তেল পেলেও বোতলের গায়ের মূল্য ছিল ১৭৫ টাকা, কিন্তু তা কেনার জন্য তার খরচ করতে হয়েছে ১৯০ টাকা।

এই পরিস্থিতিতে সরকারের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএস নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, আমাদের উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছিলেন যে, এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সমাধান হয়নি। এখন পারস্পরিক দোষারোপ চলছে। এগুলো করেই সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি করা হয়েছে। সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল, সেটি গ্রহণ করতে পারেনি। যা ভোক্তাদের জন্য বাড়তি কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে আমিষেও। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন কেজিপ্রতি সোনালি মুরগির দাম ৩৬০-৩৭০ এবং ব্রয়লারের কেজি ২১০ টাকা। কিছুদিন আগেও এগুলো ৩২০-৩৩০ টাকা ও ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতো।

বিক্রেতারা বলছেন, তারা এখন বেশিদামে মুরগি কিনছেন। তাই বিক্রির দামও বেশি পড়ছে। সেইসাথে, বাজারে এখন মুরগির সরবরাহ বলেও দাবি করছেন তারা। একজন ক্রেতা বলছিলেন, রোজা আসতে না আসতেই মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আগের সরকারের সময়েও যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। নো চেঞ্জ।

এছাড়া, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হতো ৭২০-৭৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি খাসির মাংসের দাম এখন ১৩০০ টাকা এবং গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা।

এক মাংস বিক্রেতা বলেন, গরু-খাসির দাম গত এক মাস ধরে এরকমই। তবে রমজানে দাম কমবে। কারণ এতদিন শীতের সময় ছিল, অনুষ্ঠান বেশি ছিল। মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় তখন দামটাও বেশি ছিল। রমজানে চাহিদা কমবে।

নিম্ন আয়ের মানুষ আমিষের চাহিদা পূরণ করে ডিম দিয়েই। ডজনপ্রতি লাল ডিমের দাম এখন ১২৫ টাকা, সাদা ডিমের দাম ১২০ টাকা ও হাঁসের ডিমের দাম ২২০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের দাম বাড়েনি। বরং, আগের চেয়ে কমেছে।

মাছও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অভিযোগ আছে ধনেপাতা নিয়েও। তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে খেজুর, চিনি, ছোলা, চিড়া, মুড়ি, গুড় প্রভৃতি পণ্যের দাম।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সরু ও মাঝারি আকারের চালের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪-৮৮ টাকা। যা সাত দিন আগে ৭২-৮৬ টাকা ছিল। মাঝারি আকারের মধ্যে পাইজাম চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৬ টাকা। যা সাত দিন আগে ৫৮-৬৪ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা।

রাইস এজেন্সির একজন মালিক বলেন, হঠাৎ করে আড়তে দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ২ টাকা চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে ক্রেতার বাড়তি দরে চাল কিনতে হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ২১০-২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি দেশি আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০-২৫০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মসলাপণ্যের মধ্যে প্রতিকেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সঙ্গে প্রতিকেজি এলাচ ৪৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৬০০ টাকা। সূত্রমতে, রমজানকে কেন্দ্র করে চড়া ফলের বাজার। এরইমধ্যে বিভিন্ন ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা বলছেন, রমজানে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিছু বলার নেই, দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিমাণে কম কিনতে হবে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, আগের সরকারও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। আসলে সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আপেল বর্তমানে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা দুই সপ্তাহে আগেও ২৫০-৩৫০ টাকা। মাল্টা ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা চিল ২৪০-২৫০ টাকা কেজি। পেয়ারা ৮০-১০০ টাকা, এছাড়া তরমুজ সাইজ ভেদে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি ফলের দাম বাড়তির দিকে। আপেল ও মালটার দাম আরও বাড়বে। তিনি বলেন, একশ্রেণির আড়তদার মাল স্টক করে ফেলছে, ফলে পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দাম বেশি দিয়ে কিনে সীমিত লাভ করে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। তিনি জানান, সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বেড়েছে।

তিনি বলেন, পেয়ারা আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। এখন ১০০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি। পেঁপে প্রায় ২০০ টাকা কেজি। আর তরমুজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত শুক্রবার থেকে আবারও দাম বাড়ছে। এই দাম বাড়ার প্রবণতা পুরো রমজানজুড়েই থাকবে। তার অভিযোগ, মালামাল স্টক হয়ে গেছে। সংকট দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে দাম বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ বিক্রেতাদের করার কিছুই নেই।

এদিকে ফল কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, দাম বাড়ার ভয়ে দুই দিন আগেই তিনি কিনতে এসেছেন। কিন্তু এসে দেখেন গত সপ্তাহ থেকে ফলের দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তার অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা আগেও জিম্মি ছিলাম, এখনও জিম্মি। কোনো সরকারই ব্যবসায়ী, যারা বিভিন্ন সুযোগ খুঁজে দাম বাড়িয়ে দেয়, এদের দমাতে পারল না।

আরেক ক্রেতা বলেন, আমরা কোথায় যাব। কার কাছে বলব। সব সহ্য করেই চলেছি। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়গুলো বারবার বললেও কেউ কানে নেয় না। বাজারে আসা লোকজন বলছেন, এখনই কঠোর মনিটরিং না করলে যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে রমজানে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এই চার মাসে চিনি আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। এই সময়ে ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন। আর ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত