ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রমজানে ভোগাবে যানজট

রমজানে ভোগাবে যানজট

আজ পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন, মাসটি কেন্দ্র করে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রত্যেক বছরে রমজানের শুরুতে রাজধানীজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়, যা ক্রমাগতভাবে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। এবারও রাজধানীজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধে চরম দুর্ভোগে পড়বেন মানুষ।

কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও এর আশপাশে গণপরিবহনের যাত্রীদের ৫৮ শতাংশ বাসে যাতায়াত করেন। বাস-মিনিবাস, সিএনজি অটোরিকশা ও কার এই তিন শ্রেণির যানের মধ্যে বাস-মিনিবাসে ৭২ শতাংশ ট্রিপ (যাত্রা) হয়। জরাজীর্ণ, লক্কড়ঝক্কড় বাস চলাচলের পাশাপাশি যত্রতত্র যাত্রী ওঠাণ্ডনামা করায় সড়কে যানজটের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ২০ লাখ ২৯ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৬টি।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজান মাসে চাকরিজীবীরা অফিস শেষে বাসায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে চান। এতে একত্রে লাখ লাখ গাড়ি রাস্তায় নামে, কিন্তু রাস্তার স্বল্পতা ও ফুটপাত দখলে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এরইমধ্যে ফ্যাস্টিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থাপনা কিছুটা ভেঙে পড়েছে। আবার যারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে আছেন তারাও সংখ্যায় কম, এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিপুল সংখ্যক গাড়ির চাপ সামলাতে হিমহিমে পড়েছেন ট্রাফিক পুলিশ।

সরেজমিন রাজধানীর মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এছাড়াও প্রায়ই জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে, মহাখালী, শনিরআখড়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন সংগঠনের নামে দাবি আদায়ে মানববন্ধন করছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় প্রতিদিন নানা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের লোকজন বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছে। এসব কারণে প্রায়ই অবরুদ্ধ থাকছে রাজধানীর সড়ক। এ অবস্থায় রমজানে অসহনীয় যানজটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। রমজানের আগে বুধবার ও বৃহস্পতিবার যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা।

শনিরআখড়া এলাকার বাসিন্দা কাজল সরকার বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারে যানজট লাগলে প্রতিদিন শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তানে যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। রোজার সময় অফিস সাড়ে ৩টায় ছুটি হলে বাসায় এসে ইফতার করা খুব কঠিন হয়ে যাবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উচিত যানজট নিরসনে কঠোর হওয়া। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। যাতে নির্বিঘ্নে মানুষ বাসায় পৌঁছে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারে।

প্রতিবছর রমজান মাসে অসহনীয় যানজটের কথা উল্লেখ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করতে শিক্ষার্থীরাও মাঠে নামবে। রোজার মাসে ঢাকার মানুষ যাতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি স্কাউট এবং বিএনসিসির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। তা ছাড়া বর্তমানে ট্রাফিক সহায়তায় থাকা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ বিষয়ে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জিয়াউর রহমান বলেন, রমজানের সময় রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনও সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিকের পাশাপাশি স্টুডেন্ট টিম, বিভিন্ন সোসাইটির ভলন্টিয়ারও থাকবে। উন্নয়ন কাজে জড়িত সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাসমালিকদের সতর্ক করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে অপারেশন ডেভিল হান্টের মতো অভিযান যেন চালাতে না হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, ক্রটিপূর্ণ বাস মেরামতে তারা সহজ শর্তে ঋণ দেবে। বিভিন্ন ব্যাংকেও এ নির্দেশনা দেয়া হবে। মে মাসের পর আর মেয়াদোত্তীর্ণ বাস সড়কে যেন না চলে, সেজন্য অনুরোধ করেন এই কর্মকর্তা।

যানজট নিরসনে মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক, সড়ক প্রশস্তকরণ, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমানে মেট্রোরেলের একটি রুট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেয়ার পাশাপাশি শহরের মধ্যে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারও নির্মাণ করেছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বারবার বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা বলা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি রাজধানীর যানজট। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে গাড়ির চাপ সব সময়ই থাকে। কিন্তু রমজানে স্বল্প সময়ের মধ্যে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ার কারণে এই চাপ অনেক বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত