জম্মু কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় হতাহতের ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতের অভিযোগ এই হামলার পেছনে দায় আছে পাকিস্তানের। দিল্লির এই দাবি অযৌক্তিক ও কল্পনাপ্রসূত বলে মনে করে ইসলামাবাদ। এমন পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। উত্তেজনার মধ্যে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবারের ওই মহড়ায় সাঁজোয়া যান ও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে যুদ্ধ অনুশীলনে অংশ নেয় পাকিস্তানি সেনারা। ভারতকে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। তিনি জানান, ভারতের যেকোনো সামরিক দুঃসাহসের জবাব শক্তভাবে দেওয়া হবে।
ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী লাইন অব কন্ট্রোলের (এলওসি) কাছে পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনারা। গত বৃহস্পতিবার ট্যাংক, কামান, গোলা ও তাজা গুলি নিয়ে তারা মহড়া দেয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিও নিউজ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, এই মহড়া শত্রুপক্ষের যেকোনো ধরনের আগ্রাসনকে কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য সাজানো হয়েছে। এতে বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ সেনারা অংশ নেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, গতকাল বুধবার ভারতীয় সেনারা বিনা উস্কানিতে এলওসির কিয়ানি ও মন্ডল সেক্টর দিয়ে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়েছে। পরবর্তীতে পাকিস্তানের সেনারা জবাবে ভারতীয় সেনাদের কয়েকটি চেকপোস্ট ধ্বংস করে দেয়। আর এই গোলাগুলি ও চেকপোস্ট ধ্বংস করার পরই সীমান্তে সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হয়।
গত কয়েক দিন ধরে কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে টানা ৮ দিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতেও গোলাগুলি হয়েছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। খবর এনডিটিভি। অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলির বিষয়ে বরাবরের মতো পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশটির সংবাদমাধ্যমে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর পাকিস্তান সেনাবাহিনী টানা অষ্টম রাতেও বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন চৌকি থেকে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানো হয়। এই গুলির লক্ষ্য ছিল কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, নওশেরা ও আখনুর—জম্মু ও কাশ্মীরের এই এলাকাগুলোর বিপরীতে থাকা ভারতীয় পোস্টগুলো। ভারতীয় সেনাবাহিনীও এই ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে পাল্টা জবাব দিয়েছে। গোলাগুলি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন এপ্রিলের ২২ তারিখ পেহেলগামে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে টানাপড়েন চরমে পৌঁছেছে। দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিচ্ছে।
এনডিটিভির দাবি, ভারত গত ২৪ এপ্রিল রাতে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে বিনা উসকানিতে গুলি চালাচ্ছে। আর গত মঙ্গলবার পাকিস্তান এই গুলি চালানোর ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করে আন্তর্জাতিক সীমান্তের পারগওয়াল সেক্টর পর্যন্ত নিয়ে যায়, যা জম্মু জেলার অন্তর্ভুক্ত। ওই দিনই ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) হটলাইন ফোনে কথা বলেন। এই আলোচনায় পাকিস্তানকে বিনা উসকানিতে গুলি চালানো বন্ধ করার জন্য সতর্ক করা হয়, এমন দাবিই করেছে পিটিআই।
পেহেলগাম হামলার পরদিনই ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে ছিল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, আতারি সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতির ঘোষণা। ভারতের দাবি, হামলার সঙ্গে সীমান্তপারের সন্ত্রাসীদের সংযোগ আছে। জবাবে পাকিস্তান তার আকাশসীমা ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য বন্ধ করে দেয় এবং ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে। এমনকি তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বাণিজ্যও বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। এছাড়া পাকিস্তান ভারতের পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে এবং হুঁশিয়ারি দেয়, পানি বন্ধ করে দেওয়া হলে সেটি ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ শামিল হবে।
এদিকে পেহেলগামে হামলার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জড়িত বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন টেলিগ্রামে ‘ফাঁস হওয়া’ এক গোপন নথির উদ্ধৃতি দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ দাবি করেছে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। তবে ওই নথিটি আসল কি-না, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। টেলিগ্রামে ফাঁস হওয়া গোপন নথির বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, পেহেলগামের ওই ঘটনাটিকে ‘অমুসলিম জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে চালানো হামলা’ বলে প্রচার চালানোর সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে জড়িয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ রয়েছে ওই নথিতে। বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাতে দাবি করা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথিটি প্রমাণ করে যে ভারতীয় সরকারও পেহেলগাম হামলায় জড়িত। নথিতে দেওয়া নির্দেশনা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যে যে গড়মিল হয়েছে, তা থেকেই এই ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থাৎ ভারত নিজেই এই হামলা সাজিয়েছে যেন পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো যায়। নথিতে বলা হয়েছে, হামলার ৩৬ ঘণ্টা পরে পাকিস্তানবিরোধী প্রচার চালানোর জন্য মিডিয়াকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে, মিডিয়া হামলার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানকে দায়ী করে বসে, যার ফলে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সূত্রগুলো বলছে, এই নথি এবং তাতে থাকা বৈপরীত্য প্রমাণ করে যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-কেও অন্য কোনো মহল থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া নথিটি এভাবে প্রকাশ হওয়াটাই ‘র’-এর ভেতরে বিদ্যমান হিন্দুত্ববাদ বিরোধী মনোভাবের ইঙ্গিত দিতে পারে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কীভাবে এই নথি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হলো তা খুঁজে বের করতে ভারত সরকার তদন্ত করছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ফাঁস হওয়া নথি বলছে, সাজানো এই অপারেশনটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল এমন সময়ে যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতে সফরে ছিলেন, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের আহ্বান জানানো যায়।
পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারত পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালাতে পারে বলেও ধারণা করছে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে ভারতকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চায় না দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে বড় কোনো সামরিক সংঘাতে রূপ নিক। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, কাশ্মিরে সাম্প্রতিক হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া যেন আঞ্চলিক উত্তেজনায় রূপ না নেয়—এ প্রত্যাশা আমাদের। আমাদের আশা, ভারত এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়। ফক্স নিউজের স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ নামের একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা চাই পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে মিলে হামলাকারীদের খুঁজে বের করুক এবং প্রয়োজনীয় শাস্তির ব্যবস্থা করুক। আমরা এ পথেই সমাধান চাই। পরিস্থিতি আমরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দেখি কী ঘটে।
ভ্যান্সের এ মন্তব্যের পেছনে রয়েছে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক মহড়ার প্রেক্ষাপট। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুরোপুরি যুদ্ধাবস্থার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ট্যাংক, কামান এবং আধুনিক অস্ত্র নিয়ে একটি মহড়া চালিয়েছে। এতে কর্মকর্তারা থেকে শুরু করে সাধারণ সৈন্যরাও অংশ নেন এবং নিজেদের পেশাগত দক্ষতার প্রদর্শন করেন। দুই দেশের সম্পর্ক বর্তমানে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। কাশ্মীরের ভারতশাসিত অঞ্চলে এক হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তোলে। তবে ইসলামাবাদ এ অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, এ ধরনের প্রচেষ্টা ‘অমূলক’ এবং ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে। এ টানাপড়নের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা প্রশমনের আহবান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জাতিসংঘও ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহবান জানিয়ে বলেছে, সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান যেন ‘অর্থবহ পারস্পরিক আলোচনা’র মাধ্যমে হয়।
এদিকে ভারতের হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের দুই মাসের খাবার মজুদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলার জেরে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার এমন নির্দেশনা দেন আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ারুল হক। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সীমান্ত রেখার (এলওসি) কাছের ১৩টি নির্বাচনি এলাকার মানুষকে দুই মাসের খাবার মজুদ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকাগুলোর মানুষের খাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান নিশ্চিত রাখতে ১০০ কোটি রুপির ফান্ড গঠন করা হয়েছে।‘ আজাদ কাশ্মীরের রাস্তাঘাটগুলো ঠিক রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি মালিকানাধীন যন্ত্রপাতিও সীমান্ত রেখার কাছে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া পেহেলগামে হামলায় সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে যে কোনো সময় সামরিক হামলা করতে পারে ভারতীয় সেনাবাহিনী- এমন আশঙ্কায় ১০ দিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সব মাদ্রাসা। বৃহস্পতিবার এক সরকারি নোটিশে এ আদেশ জারি করা হয়।
পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য সরাসরি বন্ধের ব্যাপারটি স্বীকার করতে চাননি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তারা বলেছেন গরম ও তাপপ্রবাহের জন্য মাদ্রাসাগুলোতে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ধর্মবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক হাফিজ নাজির আহমেদ জানিয়েছেন, উত্তেজনার আবহে পাকিস্তানের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে ভারতের সামরিক বাহিনী মূলত এমন আশঙ্কা থেকেই বন্ধ করা হয়েছে মাদ্রাসাগুলো। ‘এই মুহূর্তে আমরা দুই ধরনের তাপ্রবাহের মুখোমুখি একটির উৎস আবহাওয়া এবং অপরটির উৎস (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তান প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং সে বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে এই ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা আমাদের মাদ্রাসার নিরপরাধ শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না,‘ রয়টার্সকে বলেন হাফিজ নাজির আহমেদ।
একের পর এক পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করছে ভারত। এবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করেছে ভারত। এখন থেকে ভারতের ভূখণ্ডে আর শেহবাজের ইউটিউব চ্যানেল দেখা যাবে না। শুক্রবার ব্লক করা হয়েছে চ্যানেলটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে যারা এই চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ছিলেন, তারা চ্যানেলে প্রবেশ করা মাত্র একটি বার্তা দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সরকারি আদেশের কারণে বর্তমানে এই দেশে আর কন্টেন্ট অনুপলব্ধ (আনঅ্যাভেইলেবল)।’
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে ভয়াবহ হামলার পর ডন, সামা টিভি, এআরওয়াই নিউজ, জিইও নিউজ, বোল নিউজ এবং সাংবাদিক ইরশাদ ভাট্টি, আসমা শিরাজি, উমর চিমা, মুনিব ফারুকসহ ১৬টি বিশিষ্ট সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের ইউটিউব চ্যানেলের সম্প্রচার নিজ দেশে বন্ধ করে ভারত। ভারতে এই ১৬টি ইউটিউব চ্যানেলের সম্মিলিত সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৬ কোটি ৩০ লাখ।
এদিকে পাকিস্তানকে ঋণ দেয়ার আগে আইএমএফকে (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) পুনরায় ভাবতে বা পর্যালোচনা করতে বলল ভারত। শুক্রবার রয়টার্সকে এক ভারতীয় সরকারি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এবার তা আইএমএফ পর্যন্ত গড়াল। গত সপ্তাহে ভারতশাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর চালানো হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই একাধিক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। এ ঘটনায় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নয়াদিল্লি হামলায় জড়িত তিন হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে, যাদের মধ্যে দুইজনকে পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি করা হয়েছে এবং তাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এ ঘটনায় ভারত এরইমধ্যে সিন্ধুর নদের পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে এবং উভয় দেশ একে অপরের আকাশসীমা ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাকিস্তান গত বছর আইএমএফ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি জরুরি সহায়তা প্যাকেজ পেয়েছিল। প্যাকেজটি পাকিস্তানের ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামাবাদ বলছে, এ সহায়তা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক এবং এটি ডিফল্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে দেশকে বাঁচিয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নতুন করে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদিত হয়। এবার আইএমএফের কাছে পাকিস্তানকে দেওয়া ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল ভারত। সেগুলোর পর্যালোচনার অনুরোধ জানিয়েছে বলে ভারত সরকারের এক সূত্র রয়টার্সকে জানায়, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি।
এ প্রসঙ্গে আইএমএফ এবং ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা খুররম শেহজাদ বলেছেন, আইএমএফ কর্মসূচিটি ‘সম্পূর্ণরূপে সঠিক পথে রয়েছে’। তিনি রয়টার্সকে বলেন, সর্বশেষ পর্যালোচনাটি ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে এবং আমরা সম্পূর্ণরূপে সঠিক পথে রয়েছি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন পক্ষ থেকে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।