দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বেলা ১১টার কিছু পর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিমানবন্দর থেকে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজা পর্যন্ত পথে পথে তাকে অভ্যর্থনা জানান লাখো নেতাকর্মী। সড়কের দুই ধারে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে আড়াই ঘণ্টা পর গুলশানের বাসায় পৌঁছায় বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর। সেখানে দুই পুত্রবধূর সহায়তায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বাসায় প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, লন্ডনে চিকিৎসার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটা সুস্থ আছেন খালেদা জিয়া। তবে ১৪ ঘণ্টার বিমানযাত্রার কারণে উনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরও মানসিকভাবে ওনার অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে। খালেদা জিয়ার এই সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান অধ্যাপক জাহিদ।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডনের ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চার মাস পর গত সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া, জুবাইদা রহমানসহ অন্যান্যদের পৌঁছে দেন তারেক রহমান। মাকে বিদায় জানানোর সময় এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে। তিনি সবার সঙ্গে শুভেচ্ছ বিনিময় করে বিমানে ওঠেন।
এদিকে দলীয় চেয়ারপারসন ও জিয়া পরিবারের দুই পুত্রবধূকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের সামনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। আজ দেশের ও জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রীর আগমন আমাদের জন্য শুধু আবেগ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ।’ এসময়ে এখানে দলের স্থায়ী কমিটির নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি মহাসচিবসহ অন্য নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও এসেছেন- খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এমএ মালেকসহ ১৪ জন। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পুত্রবধূ ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানও দেশে ফিরেছেন। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্যমূলক মামলা ও হয়রানির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। তার এই ফেরা নিয়েও স্বজন এবং দলীয় নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। দেশে ফিরে বাবার ধানমন্ডির বাসায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন জুবাইদা রহমান। তাকে বরণ করে নিতে ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডে অবস্থিত তার বাবার বাড়ি মাহবুব ভবনও প্রস্তুত করা হয়েছে। বাড়িটি সুসজ্জিত করার পাশাপাশি তার স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ফিরেছেন জিয়া পরিবারের ছোট পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিথি। ওদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ প্রস্তুত করা হয় খালেদা জিয়ার জন্য। সেখানে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী-সিএসএফ ছাড়াও বাসার সামনের সড়কে সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা দেখা গেছে।
ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান- তার মেঝ বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফএম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ছিলেন সেখানে।
খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখার জন্য ও প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে সকাল থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত জড়ো হন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। কেউ হাতে ফুল, কেউ ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, কেউবা খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরেছিলেন। স্বাগত জানাতে আসা বেশিরভাগ নেতাকর্মীর হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও বিএনপির দলীয় পতাকা ছিল। এসময় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পাশাপাশি তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নামে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। কারও কারও ব্যানারেও খালেদা-তারেকের পাশাপাশি জোবাইদা রহমানের ছবি স্থান পেয়েছে।
এদিন শুধু ঢাকা মহানগর বিএনপি ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাই নয়, ঢাকার আশপাশে অনেক জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে বরণ করে নিতে আসেন। দূর-দূরান্ত জেলার নেতাকর্মীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। যার দরুন বিমানবন্দর সড়কে দলটির নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
বিএনপি এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কে কোথায় অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাবেন, তা আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল। তাদের সড়কে ভিড় না করে ফুটপাতে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যাতে যানজট বা বিশৃঙ্খলা না হয়। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় পৌঁছানোর পথে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় সামলাতে ট্রাফিক পুলিশও তৎপর ছিল। বিএনপি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়, নেতাকর্মীরা যাতে সড়কে অবস্থান না করে ফুটপাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান। তবে এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা ফুটপাত ছেড়ে গাড়ি বহরের সঙ্গে ছুটতে থাকেন। লাখো নেতাকর্মীদের এই ভিড় আর ফুলেল শুভেচ্ছা সামলে খালেদা জিয়ার গাড়ি ধীরগতিতে গুলশানের দিকে এগুতে থাকে। এসময় নেতাকর্মীদের সামাল দিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীদের চাপ সামলাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে দেখা গেছে।
খালেদা জিয়া বাসায় পৌঁছানোর পর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আশা করছি- অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খুব শিগগিরই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যাতে করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরে জাতির নেতৃত্বে যোগ দিতে পারেন।
কাতার সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিএনপি নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, কাতার সরকার শুধু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সই প্রদান করেনি, বরং বিমানের খরচ, ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবার সবকিছু নিশ্চিত করেছে। এই সহায়তার জন্য খালেদা জিয়া কাতার সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, কাতার সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সবকিছু নিশ্চিত করেছে এবং এই মানবিক সহায়তা দেশনেত্রীর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি আরও বলেন, আজ যিনি বেগম জিয়াকে তাচ্ছিল্য করেছিলেন, তিনিই আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পক্ষান্তরে বেগম জিয়া আজও এখানেই আছেন, জাতির নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
জোবায়দা রহমান কতদিন দেশে আছেন এবং তার রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ১৭ বছর পর তিনি এসেছেন। এটা কেবল শুরু না। তারা তাদের দেশে আসবেন এটাই স্বাভাবিক। তার স্বামী-সন্তান এখনও বিদেশে। তিনি এখন দেশনেত্রীর সঙ্গে এসেছেন। সময় বলে দেবে তিনি কত দিন থাকবেন। তবে আবার সেখানে ফিরে গিয়ে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে, যারা খালেদা জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করেছে। ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, যেসব সংস্থা মানবিক অবস্থান থেকে সহযোগিতা করেছে, তাদের ধন্যবাদ।
এদিকে, হুইল চেয়ার নিয়ে চলাচল করা বিএনপি চেয়ারপারসন সবাইকে অনেকটা বিস্মিত করে দিয়ে গুলশানে নিজ বাসা ফিরোজায় ঢোকার সময় গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করেন। এসময় দুই পাশে দুই পুত্রবধূ তাকে ধরে রাখেন। এই দৃশ্যটি অনেক দিন পর দেখল দেশবাসী। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার দিনও খালেদা জিয়া পায়ে হেঁটেই গিয়েছিলেন। তবে ২০২০ সালের মার্চে যখন বের হন তখন হুইল চেয়ারে বের হয়েছিলেন। এরপর থেকে তার অবস্থার শুধু অবনতিই হয়েছে। খালেদা জিয়ার এই সুস্থতা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত হন। খালেদা জিয়া যে এখন অনেকটাই সুস্থ সেই বার্তাই পেলেন তারা।
শুধু বিএনপিতেই নয়, দেশবাসীর কাছেও খালেদা জিয়া এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তার ব্যক্তিত্ব, আপসহীনতা এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব বরাবরই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নতুন করে অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে শুধু দলের নেতাকর্মীরাই উচ্ছ্বসিত নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। তারা চান, সাবেক তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী আবার দেশের হাল ধরুন, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদায় দেশকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যান।
এদিকে প্রায় চার মাস পর প্রিয় নেত্রীকে অনেকটা সুস্থ অবস্থায় কাছে পেয়ে আনন্দের শেষ নেই বিএনপির নেতাকর্মীদের। লাখ লাখ নেতাকর্মী নেমে আসেন রাস্তায়। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত ঢল নামে মানুষের। ফলে বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরতে তার দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। কান্নাভেজা চোখে অনেককেই বলতে শোনা গেছে, ‘আমাদের মা ফিরে এসেছেন’, ‘খালেদা জিয়া মানেই বাংলাদেশ’।
ফিরোজার সামনের রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবের সদস্যরা তৎপর থাকলেও নেতাকর্মীদের আবেগ থামানো যায়নি। হেঁটে হেঁটে কেউ এসেছেন টঙ্গী থেকে, কেউ বা নারায়ণগঞ্জ থেকে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে হাজারো মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
বিএনপি নেত্রী সাধারণত গাড়ির সামনে না বসলেও এদিন তাকে সেখানে আসন নিতে দেখা গেছে। পেছনের আসনে বসেন তার দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান। এসময় সড়কের পাশে অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। বিএনপি নেত্রী গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এসময় নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক, রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগান দেন।
সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশ যাত্রার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুজন ছিল, এটাই তার শেষ বিদায়। অনেকে বলেছিলেন, খালেদা জিয়া ‘মাইনাস টু’র শিকার হয়েছেন, আর ফিরবেন না। কিন্তু এই প্রত্যাবর্তনে গুজবের অবসান হলো। নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘গণতন্ত্র আবার আশার আলো দেখছে। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধের প্রতীক। তিনি ফিরে আসায় গণতন্ত্রের উত্তরণ সহজ হবে। এই জাতির জন্য এটি একটি নতুন প্রত্যাশার দিন।
দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে শারীরিকভাবে অনেকটা ভালো আছেন। একইসঙ্গে পারিবারিক আবহে থাকায় মানসিকভাবেও তিনি আগের চেয়ে ভালো। এমন তথ্য জানিয়ে তার পূর্ণ সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, জাতির প্রয়োজনে নেতৃত্বও দেবেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয়তার বিষয়ে জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ এই নেতা বলেছেন, ‘একজন নেত্রী বলতেন উনি (খালেদা জিয়া) যায় না কেন, যায় না কেন? এখন উনিই চলে গেছেন। আর বেগম খালেদা জিয়া আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। দেশনেত্রী জাতির যখনই প্রয়োজন হবে তখনই নেতৃত্ব দেবেন।’ প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকবার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রাক্কালে নির্বাহী আদেশে মুক্তি মিললেও ছিলেন নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে বাসার চারদেয়ালে বন্দি। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ঘটলে মুক্তি মেলে খালেদা জিয়ার। মামলা থেকে খালাস পাওয়ায় পথ খুলে বিদেশে যাওয়ার। নানা জল্পনা-কল্পনার পর গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তিনি লন্ডনে যান উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে ছেলে তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে চার চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।