বৈষম্য নিরসনে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব মিলিয়ে ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবিতে ২০২৪ সালের ৯ জুলাই দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বরিশাল, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের ৮ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের প্ল্যাটফরমটির অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দেশজুড়ে ৯ জুলাই সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড (অবরোধ) কর্মসূচি পালানের আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীরা একযোগে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ বন্ধ করে দেয়।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ৭ জুলাই থেকে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে ‘বাংলা ব¬কেড’ কর্মসূচি পালন করেন। মঙ্গলবার তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ বন্ধ রেখে ‘গণসংযোগ’ কর্মসূচি পালন করেন। এদিন সমন্বয়নকরা দেশের বিভিন্ন জায়গার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনলাইনে গণসংযোগ চালান। এদিকে ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। তবে ছাত্রদের সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, যারা আপিল করেছেন, তারা এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেউ নয়। ওই সময়ে সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ অঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, আমরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, এটা কোটা বাতিলের নয়, বরং বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করে যৌক্তিক সংস্কার। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাদের দাবিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের রিওয়ার্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতি, পোষ্য কোটার বিরোধিতা করছি। আমাদের আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা সবাই সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, গণমাধ্যমণ্ডসবার সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
রাজশাহী কলেজ : অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখেন। কলেজ গেটের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সড়কে বসে পড়েন তারা। প্রায় আধাঘণ্টা সড়কটি অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বলেছিলেন, ‘একজন মেধাবী শিক্ষার্থী সারাবছর পড়াশোনা করে চাকরির বাজারে কোটার কাছে হেরে যাচ্ছে। ভালো চাকরি পাচ্ছে না। অথচ একজন অযোগ্য লোক কোটা থাকায় চাকরির বাজারে টিকে যাচ্ছে।’
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে বৃন্দাবন সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ‘কোটাপদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : বিক্ষোভ মিছিল, সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসংযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও দুপুর ১২টার দিকে ৫টি ছাত্রী আবাসিক হলে গণসংযোগ চালান তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, ছাত্রীদের হলের গেটের সামনে গিয়ে আন্দোলন সম্পর্কে তাদের বলেছি, তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। শুরুতে নারী শিক্ষার্থী কম থাকলেও গণসংযোগের পর বৃদ্ধি পায়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালের সামনে অবরোধ করে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ৩টা থেকে একই মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) গেটের সামনে অবরোধ করেন ববি শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী গান-কবিতা আবৃত্তি করেন।