ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্বাচন কমিশন গঠনে ঐকমত্য

নির্বাচন কমিশন গঠনে ঐকমত্য

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের ১৮তম দিনের আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের প্রধান এবং অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকের আলোচনা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং এটি একটি ঐতিহাসিক মোড় তৈরি করেছে।’

গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দিনব্যাপী আলোচনা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারের নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের ১১৮ (১) সংশোধন করে নতুন সংশোধিত প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আইনে নির্ধারিত সংখ্যক নির্বাচন কমিশনার সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন থাকবে।

তিনি আরও বলেন, স্পিকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রধান এবং অন্যান্য কমিশনারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে সংসদে প্রণীত আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি আহ্বান করাসহ নিজস্ব উদ্যোগে উপযুক্ত প্রার্থী অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, স্পিকারের নেতৃত্বে বাছাই কমিটির অন্য সদস্যরা হবেন- বিরোধী দলীয় ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা ও প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।

তিনি জানান, এই কমিটি আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের জীবনবৃত্তান্তগুলো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করে, সর্বসম্মতিক্রমে তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্ধারিত প্রতিটি পদের বিপরীতে একজন করে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দান করবেন। এ সময় তিনি আরও জানান, স্পিকারের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ সচিবালয় এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে। বিদায়ী কমিশনের মেয়াদ শেষ হলে অথবা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হলে পরবর্তী দিন হতে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এছাড়া আজকের আলোচনার পর জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের ওপর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পৃথক আইন ও আচরণ বিধি প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে, বিদ্যমান সংবিধানের উপানুচ্ছেদ ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ অপরিবর্তিত থাকবে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গতকালের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

এ আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত সকল বিষয়ে ঐকমত্য গড়তে আগামী কিছুদিন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলমান থাকবে।

এর আগে, গতকাল জুলাই সনদ দ্রুত প্রণয়নের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে শিগগিরই ঐকমত্য গড়তে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ের আঠারোতম দিনের শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি সময়ের স্বল্পতার কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর বিষয়ে দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনও বেশ কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য হলেও কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে এখনও আলোচনা করা প্রয়োজন।

গতকালের আলোচ্য বিষয় ছিল- নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রণ এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান।

এর আগে, ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি ‘সমন্বিত প্রস্তাব’ দিয়েছে। এতে একটি সংসদীয় বাছাই কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বৈঠকের শুরুতে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের পর শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিপিবি বাসদসহ বামপন্থি দলগুলো ১০ মিনিটের প্রতীকী ওয়াক আউট করে।

প্রতীকী ওয়াক আউট শেষে কমিশনের বৈঠকে পুনরায় যোগ দেওয়ার পর সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চাকে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, তাদের বক্তব্যগুলো জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়েছে, সরকার বিবেচনা করবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত