ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এবার না ফেরার দেশে জারিফ ও মাসুমা

এবার না ফেরার দেশে জারিফ ও মাসুমা

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হওয়া আরও দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল শনিবার দুই ঘণ্টার ব্যবধানে মাইলস্টোন স্কুলের এক শিক্ষার্থী ও একজন কর্মচারী মারা গেছেন। দুজনই রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে।

বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিক্ষার্থী জারিফ ফারহান। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। তার বয়স ১৩ বছর। জারিফের বাবার নাম হাবিবুর রহমান। মা ও বাবার সঙ্গে সে উত্তরায় থাকত। তাদের বাড়ি রাজবাড়ীতে। অন্যদিকে গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে মারা যান স্কুলের কর্মচারী মাসুমা বেগম (৩৮)। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। তিনি উত্তরা এলাকায় থাকতেন।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান এই দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তিনি বলেন, শিশু জারিফের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মাসুমার পুড়েছিল ৯০ শতাংশ।

মা ও বোনের ইচ্ছায় জারিফের দাফন ঢাকায় : দগ্ধ শিক্ষার্থী জারিফ ফারহান (১৩) অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল। চারদিন ধরে বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছিল শিশুটি। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল। জারিফ ফারহান হাবিবুর রহমান লিটন ও রাশিদা ইয়াসমিন দম্পতির ছেলে। তারা বর্তমানে ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে থাকে। জারিফের দাফন ঢাকার উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে করা হয়। জারিফের মা ও বোনের ইচ্ছায় তাকে ঢাকাতে দাফন করা হয়।

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন দুই শিক্ষার্থী : সুস্থ্য হওয়ায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন দুই শিক্ষার্থী। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন। ছাড়পত্র পাওয়া শিক্ষার্থীদের একজন ১২ বছর বয়সী আয়ান খান; আরেকজন একই বয়সী রাফসি আক্তার রাফিয়া। দুইজনই এক শতাংশ দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল, ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হল। নাসির উদ্দীন বলেন, আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরও ১০ জনকে আমরা রিলিজ দিতে পারব। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়ান খানের বাবা মোস্তফা কামাল বাপ্পী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, সে সুস্থ আছে, চিন্তার কিছু নাই। যতটুকু বার্ন হয়েছিল হাতে, এখন ঠিক আছে। কানে একটু সমস্যা আছে, আশা করছি সেটিও ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, দোয়া করি প্রত্যেকটা সন্তানকে আল্লাহ তার মা-বাবার কোলে ফিরায়ে দিক। এদিন দুজনের মৃত্যুর ‘দুঃসংবাদ’ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে চিকিৎসাধীন দুই শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র দেওয়া তথ্য দিলেন হাসপাতালটির পরিচালক। এ সময় তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটে ‘আশঙ্কাজনক’ অবস্থায় আরও চারজন আইসিইউতে এবং ‘গুরুতর’ অবস্থায় আরও নয়জন চিকিৎসাধীন থাকার তথ্য দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ক্রিটিক্যাল যারা, প্রতি মুহূর্তেই তাদের ব্যাপারে যেকোনো সংবাদ পাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি। তিনি জানান, ভারত থেকে আসা টিমে দুজন ডাক্তার ও দুজন নার্স রয়েছেন। চীন থেকে এসেছেন তিনজন ডাক্তার, দুজন নার্স। আর সিঙ্গাপুর থেকে ৯ জন এসেছেন, যাদের মধ্যে তিনজন ডাক্তার বাকিরা ‘সাপোর্টিং স্টাফ’। পরিচালক নাসির উদ্দীন বলেন, বিভিন্ন টিম যেগুলা আসছে, তাদের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই মিলে আমাদের ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনিয়ারি’ টিমসহ বসে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এজন্য যা করার দরকার, তাই করেছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা আমাদের সঙ্গে একমত। দুজনকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন চিকিৎসাধীন আছে ৩৬ জন, আর সব হাসপাতাল মিলে চিকিৎসাধীনের সংখ্যা ৪৬ জন।

চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন চীনা চিকিৎসকরা : অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসাসেবা দিতে ঢাকায় আসা চীনা চিকিৎসক দল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল ঢাকার চীনা দূতাবাস এক বার্তায় এ তথ?্য জানায়। চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, চীনা চিকিৎসক ও নার্সরা ক্ষত সংক্রমণ প্রতিরোধ ও আহতদের নিয়মিত যত্নের পদ্ধতি সম্পর্কে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা রোগীদের অবস্থা পরীক্ষা, ক্ষত পরিষ্কার, ড্রেসিং পরিবর্তন, ধমনিতে ছিদ্র করতে সহায়তা ও অস্ত্রোপচারের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। চিকিৎসক দলটি সিঙ্গাপুর ও ভারতের চিকিৎসক দলসহ বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গেও পরামর্শ করছে। চীনা পক্ষ জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা আহতদের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তায় আগ্রহী। গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে পাঁচজন পোড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সের সমন্বয়ে গঠিত চীনা চিকিৎসক দল ঢাকায় এসেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত