ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান ২২০ ব্রিটিশ এমপির

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান ২২০ ব্রিটিশ এমপির

ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করছে ইসরাইল। খাবারের পানি সংগ্রহের সময়ে শিশু, নারী ও বয়স্কদের হত্যা করেছে ইসরাইলের জান্তা বাহিনী। এবার ফ্রান্সের পর সেই অসহায় ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ ২২০ এমপি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান তারা। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে রাশিয়া।

গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ২২০ জনের বেশি সংসদ সদস্য (এমপি), যাদের মধ্যে শাসক দল লেবার পার্টির অনেকেই আছেন, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। এতে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে স্টারমারের ওপর চাপ আরও বাড়ল। নয়টি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের এমপিদের স্বাক্ষর করা একটি যৌথ চিঠিতে তারা বলেন, ‘আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিন।’

জানা গেছে, আগামী ২৮ ও ২৯ জুলাই জাতিসংঘের উদ্যোগে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সহ-সভাপতিত্বে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বুঝি, যুক্তরাজ্যের একার পক্ষে স্বাধীন ও মুক্ত ফিলিস্তিন গঠন সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দেবে বিশ্বকে।’ সেইসঙ্গে, ব্রিটেনের ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা’র মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা ছিল; এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়াও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’ এ চিঠিতে কনজারভেটিভ, লিবারেল ডেমোক্র্যাট, স্কটিশ ওয়ানেশনাল পার্টি এবং ওয়েলসের প্লাইড কামরিসসহ বিভিন্ন দলের সংসদ সদস্যরা স্বাক্ষর করেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তির পক্ষে যুক্তরাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জোরালো হয়েছে। এদিকে, স্টারমার সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভেতরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পক্ষে এই যে ক্রমবর্ধমান চাপ, তা লেবার সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতিসংঘের বিবৃতি: জাতিসংঘের খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রতি তিনজনের একজন না খেয়ে দিন পার করছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘(গাজায়) পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।’ গাজায় অনাহার নিয়ে সতর্কতা এ সপ্তাহে আরও তীব্র হয়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার অপুষ্টিতে গাজায় আরও নয়জন মারা গেছেন। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে উপত্যকাটিতে মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ১২২। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা ব্যাখ্যা করার মতো না। কোনো করুণা নেই, সত্য নেই, নেই কোনো মানবতা।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজায় মানবিক বিপর্যয় এখনই শেষ হওয়া উচিত: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও ত্রাণের প্রবেশ সীমিত করে দেওয়ার পর থেকে যে মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে সেখানে, তা এখনই শেষ হওয়া উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেওয়া ভাষণে এ ইস্যুতে নিজের এবং নিজের নেতৃত্বাধীন সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন স্টারমার। ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, গাজায় মানবসৃষ্ট খাদ্যসংকট এব তার জেরে সেখানাকার বাসিন্দাদের তীব্র ক্ষুধার যেসব চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে ব্রিটেনের জনগণ মানসিকভাবে রীতিমতো অসুস্থ বোধ করছে।’ ‘গাজার শিশুদেরকে, বেসামরিক জনগণকে দিনের পর দিন ধরে মানবিক সহায়তা প্রদান না করার ব্যাপারটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। একই সঙ্গে মাসের পর মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের বন্দি থাকা এবং সেখানে ইসরায়েলের সামঞ্জস্যহীন সামরিক অভিযানও কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’ ‘গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে শত শত বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, শিশুরা পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে খুন হচ্ছেৃএটি একটা মানবিক বিপর্যয় এবং এখনই এটা শেষ হওয়া উচিত।’ গাজা উপত্যকার সীমান্তে ত্রাণের পাহাড় জমে উঠলেও সাধারণ ফিলিস্তিনিরা না খেয়ে থাকায় হতাশা প্রকাশ করে স্টারমার বলেন, ‘গাজার বাসিন্দাদের জন্য টনের পর টন ত্রাণ জমা পড়েছে। আমরা নিজেরাই লাখ লাখ পাউন্ড খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছি। চলতি বছর গাজার বাসিন্দাদের জন্য অতিরিক্ত ৪ কোটি পাউন্ড বরাদ্দেরও ঘোষণা দিয়েছি। কিন্তু সেসব গাজার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। তাই আমরা এখন অন্যভাবে এগোনোর চেষ্টা করছি। গাজার যেসব শিশু নিবিড় চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন, তাদেরকে গাজা থেকে যুক্তরাজ্যে এনে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক দেরিতে হলেও সম্প্রতি ইসরায়েল বিমান থেকে গাজায় ত্রাণ ফেলার অনুমতি দিয়েছে। আমরা এই সুযোগটির সদ্ব্যবহার করতে চাই। ইতেমধ্যে জর্ডানের সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে এবং তারা জানিয়েছে যে গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে সহযোগিতা করবে জর্ডান।’ সর্বোপরি আমি বলতে চাই, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তিস্থাপনে যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের অবস্থান খুবই দৃঢ় এবং বর্তমানে গাজায় যে যুদ্ধ চলছে, তা থামাতে সরকার তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে রাশিয়া: ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে রাশিয়া বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। শুক্রবার তিনি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসরাইলসহ মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সমাধান সম্ভব। দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই ইসরাইলের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সমাধান সম্ভব। এর আগে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। রাশিয়া সব সময়ই ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের ভিত্তি হিসেবে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে ছিল। মস্কো ১৯৮৮ সালেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ঘোষণাকে সমর্থন করে স্বীকৃতি দিয়েছিল। পেসকভের মতে, শান্তি কেবল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা মেনে চলার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবনায় পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি দখলদারত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত