ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

যুদ্ধ বন্ধে ১১৮ দেশের যৌথ ঘোষণা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা
যুদ্ধ বন্ধে ১১৮ দেশের যৌথ ঘোষণা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিন বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে ‘নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন’ নামে এক ঐতিহাসিক যৌথ ঘোষণা এসেছে। এতে ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধানের পথে সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হওয়ার ধাপগুলো পরিচ্ছন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে সৌদি আরব ও ফ্রান্স। এতে অংশ নেন বাংলাদেশসহ ১১৮টি দেশের প্রতিনিধিরা।

আল-মায়াদিনের হাতে আসা চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, এ ঘোষণায় গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকেই একমাত্র কার্যকর পথ হিসেবে অনুসরণের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটেছে। ঘোষণায় বলা হয়, গাজার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ভয়াবহ মানবিক ক্ষতের সৃষ্টি করেছে এবং সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার বিপদ স্পষ্ট করে তুলেছে।

অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আন্তর্জাতিক আইনেরভিত্তিতে ন্যায়সঙ্গত, স্থায়ী ও বিস্তৃত সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। ঘোষণায় জোর দিয়ে বলা হয়, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়ন করাই ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষা পূরণের একমাত্র পথ। এতে একটি সময়সীমার মধ্যে দৃঢ় শান্তি প্রক্রিয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে, যার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের দিকে ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

ঘোষণায় আরও বলা হয়, গাজা উপত্যকা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে এবং এটিকে দখল, অবরোধ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। তাছাড়া, গাজায় শাসন, নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, যাকে যথাযথ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে। ঘোষণায় আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা প্রস্তাবিত গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে সমর্থন করে বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হবে এবং জাতিসংঘের আওতায় একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক মিশন মোতায়েন করা হবে।

সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য : ব্রিটিশ সরকার গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, যদি ইসরায়েল গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধ না করে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রক্রিয়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ না হয়, তবে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। ব্রিটেনের দীর্ঘদিনের ভূমিকা- যা ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে- তার প্রেক্ষিতে এই ঘোষণাকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়, ইসরায়েল কার্যকর পদক্ষেপের দিকে না এগোলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগেই যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি কার্যকর হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র কার্যকর পথ। তাই ইসরায়েলি সরকার গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি অবসানে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হলে আমরা সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেব।’

সমালোচকরা বলছেন, একদিকে ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা করা, অন্যদিকে তাকে সামরিক সহায়তা দেওয়া, এটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতির দ্বিচারিতার বহিঃপ্রকাশ। তারা বলছেন, ইসরায়েলি বাহিনীকে কার্যকর সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার কোনো কার্যকর অর্থ বহন করে না। তবে এই ঘোষণা লন্ডনকে প্যারিসের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড় করিয়েছে। ফ্রান্স গত সপ্তাহে জানিয়েছিল, যদি ইসরায়েল আগ্রাসন বন্ধ না করে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। ইউরোপের এই সমন্বিত চাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, বহু দশকের আন্তর্জাতিক দায়মুক্তির ঢাল থেকে সরে আসছে ইসরায়েল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত