
মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করে আশা করি অতিদ্রুতই নির্বাচনের পথে সরকার এগুবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদের স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভার আগে ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও জুলাই অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। প্রেসক্লাব চত্বরে তিনি বৃক্ষরোপণও করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর জাতীয় প্রেসক্লাব পাঁচজন সম্পাদক যায় যায় দিনের শফিক রেহমান, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ এর মাহমুদুর রহমান, নিউ এজ’র নুরুল কবীর এবং সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদকে সম্মাননা প্রদান করে।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের দুই শহীদ পরিবারের সদস্যদেরও সম্মাননা দেয়া হয়। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি। যা তাদের হাতে তুলে দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার বিশ্বাস যে, এত সমস্যার পরেও ১২টি মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য এসেছে। বাকিগুলোতে ঐকমত্যে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, প্রতিদিন বৈঠক হচ্ছে কয়েক ঘণ্টা ধরে; অনেকগুলো বিষয় আছে আমরাও ঠিক বুঝি না যে তারা কী করতে চান। আমার মনে হয়, এগুলোকে বাদ দিয়ে যে মৌলিক বিষয়গুলো আছে সেই বিষয়গুলোর সমাধান করে অতিদ্রুত নির্বাচনের যে মোটামুটি ধারণা পাওয়া গেছে। লন্ডনে তারেক রহমান এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের মধ্য দিয়ে যে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন হওয়ার কথা হয়েছে; আমার মনে হয় সেটা হলেই অনেক সমস্যা, অনেক দ্বিধা কাটিয়ে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব। তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করব এতটা হতাশ হবেন না, নিরাশ হবেন না। আমরা যদি পারি অতীতে, আমরা যদি ’৫২ ভাষা আন্দোলনে সফল হতে পারি, ’৬৯ এ সফল হতে পারি, ’৭১ সফল হতে পারি, ’২৪ সফল হতে পারি উইথ অল লিমিটেশনস। তাহলে আমরা এটাও পারব। এটা আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি বলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি কারো সমালোচনা করতে চাই না। এই সময়টা হচ্ছে, পারস্পরিক একটা বোঝাপড়ার সময়; একটু পরস্পরকে বুঝে আমরা যদি খুব দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি তাহলে ফলটা লাভ করবে জনগণ। তাদের একটা প্রতিনিধিত্ব থাকবে, তাদের একটা সরকার তৈরি হবে। এর ফলে যে সব সোনা হয়ে যাবে, বা সব সমস্যা মিটে যাবে তা কিন্তু না। কিন্তু একটি রাস্তা তৈরি হবে যে রাস্তার মধ্য দিয়ে আমাদের কথাগুলো, জনগণের কথাগুলো সেই সরকারের কাছে পৌঁছাবে, পৌঁছাতে পারবে সেই জায়গায় আমরা যেতে চাই।
এসময় আবেগপ্রবণ হয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ এখানে একজন মা তার ছেলের ছবি দেখালেন যে শহীদ হয়ে গেছে, আরেকটা ছোট ছেলে গতকাল আশুলিয়ার অনুষ্ঠানে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছে, ওর বয়স ৬/৭ বছর হবে; ওর মাথার খুলিটা নেই। খুলিটা প্লাস্টিকের, অর্থাৎ গুলিতে তার মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। পরে চিকিৎসকরা সেটাকে প্লাস্টিক দিয়ে আর্টিফিশিয়াল খুলি তৈরি করে লাগিয়ে দিয়েছে। এর চেয়ে বড় ত্যাগ আর কি হতে পারে?
২০১৪ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে একদিন অবরুদ্ধ থাকার পর গ্রেফতার হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি আমার অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা আমি আর বর্ণনা করতে চাই না। কারণ সেটা আমার জন্যে সুখের নয়, আনন্দের নয়। তবে এটাকে ওই সময়ে স্বাভাবিক মনে করেছি। যখন আমি ক্লাবের গেইটের বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোহার বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে গাড়িটাকে পেটানো শুরু হলো আমার তখন ওই মুহূর্তে মনে হয়েছিলো যে, আর বোধহয় জীবন্ত অবস্থায় আমি ফিরে যেতে পারব না। যাই হোকে ফিরে এসেছি; আপনাদের সামনে কথা বলছি। আমরা গুটিকতক সৌভাগ্যবান যারা এখনও আমরা বেঁচে আছি, আপনাদের সাথে বলার সুযোগ পাচ্ছি আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, এই যে বোন কথা বললেন; উনার কান্না কি করে বন্ধ করতে পারি, উনি যে শিশুটির ছবি দেখালেন যে শহীদ হয়ে গেছে। এটা কি মগের মুল্লুক।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, শহীদ আব্দুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমা তুজ জোহরা ও শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বক্তব্য রাখেন।