
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু। যা ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে এডিস মশা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসের তুলনায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা জুলাইয়ে দ্বিগুণের বেশি। আর সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। যা দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দেশব্যাপী ডেঙ্গুর এমন ছড়িয়ে পড়াকে আশঙ্কা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, লাগাম টেনে ধরতে হবে এখনই, না হলে পরিস্তিতি ভয়াবহ হতে পারে। এমতাবস্থায় মশার বিস্তার ঠেকাতে পারলেই সম্ভব ডেঙ্গু রোধ করা। তাই শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশেই মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপশি সবাইকে সচেতন হওয়ারও পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সূত্রমতে, গতকাল পর্যন্ত এবছর দেশে ২০ হাজার ৭০২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের। শুধু জুন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিল ১৯ জনের। আর চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। জুনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৯৫১ জন। আর এ মাসে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৪০৬ জন। চলতি মাসের সংক্রমণের এ সংখ্যা আগের ছয় মাসের বেশি। জুন থেকে জুলাই মাসে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০ হাজার ২৯৬ জন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যত রোগী আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার। বাকি ৭৯ শতাংশ রোগীই ঢাকার বাইরের। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৬ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ মাসের শুরুতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি বেড়েছে।
এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ৪৬ জন মারা গেছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। অন্যরা দেশের অন্যত্র মারা গেছেন। গত বছর (২০২৪) এ সময় ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন ৫৬ জন। ডেঙ্গুতে এবারের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার পেছনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাফিলতি, স্থানীয় সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়হীনতা, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাব এবং ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচারের অভাবকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব নেই। প্রতিটি হাসপাতালকে পরিচালন বাজেট থেকে ব্যয় করতে বলা হয়েছে। মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ রোগী আসছে অনেক দেরিতে। তখন আর চিকিৎসকের কিছু করার থাকে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুতে রোগী ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ সরকারের গতানুগতিক কাজ এবং অব্যবস্থাপনা। মানুষের কাছে ডেঙ্গু শনাক্তের সুযোগ পৌঁছায়নি। নীতিনির্ধারণী স্তরে এ নিয়ে কোনো ভাবনা আছে, এমন একেবারেই মনে হয় না।