
কক্সবাজারের রামুর রশিদনগরে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ওই ট্রেনেটি গন্তেব্যে চলে গেলেও অপর একটি ট্রেন ঘটনাস্থলে বিক্ষুব্দ জনতা আড়াই ঘন্টা পর্যন্ত আটকে রাখে। গতকাল শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের ধলিরছড়া রেল ক্রসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান রামু থানার ওসি তৈয়বুর রহমান।
নিহতরা হলেন- ঈদগাঁও মেহের ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ সৈয়দ নুরের ছেলে অটোরিকশা চালক হাবিব উল্লাহ (৪০), ভারুয়াখালী এলাকার আবদুল মান্নানের স্ত্রী রেনু আকতার (৩২), কালিরছড়া এলাকার হাফেজ জান্নাত উল্লাহর স্ত্রী আসউল হোসনা (২৭), ছেলে আতাউল্লাহ (১৩ মাস) ও আশেক উল্লাহ (৩)।
রশিদনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মাসুম বলেন, গতকাল দুপুরে কক্সবাজার আইনিক রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ধলিরছড়া রেল ক্রসিং এলাকায় পৌঁছে। এসময় ভারুয়াখালীমুখি একটি যাত্রীবাহী অটোরিকশা রেল ক্রসিং অতিক্রম করছিল। এতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরের এলাকা পর্যন্ত নিয়ে যায়। অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে চালক ও শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই ঘাতক ট্রেনটি পালিয়ে যায়। এদিকে গতকাল দুপুর আড়াই টার দিকে চট্টগ্রাম দিক থেকে আসা কক্সবাজারমুখি পর্যটন এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি বিক্ষুদ্ধ জনতা ঘটনাস্থলে আটকে রেখে ট্রেন চলাচল বন্ধ করেন দেন বলে জানান স্থানীয় এ ইউপি চেয়ারম্যান।
কক্সবাজারের পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, নিহত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে বিকাল ৫টার দিকে উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে দেয়। এরপর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অটোরিকশাকে এক কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায় ট্রেন : হঠাৎ রেললাইনে উঠে আসা অটোরিকশাটি আটকে যায় ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে। আর ওই অবস্থায় ট্রেনটি প্রায় এক কিলোমিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় অটোরিকশাটিকে। ট্রেনটি থামার পর দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অটোরিকশটাটি লাইন থেকে বেশ দূরে ছিটকে পড়ে গেছে। ট্রেনের ধাক্কার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, রেললাইনে উঠে আসা অটোরিকশাটি ট্রেনের ইঞ্জিনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেছে। এতে অটোরিকশায় থাকা যাত্রীর সবার মৃত্যু হয়।
রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, রেললাইনে উঠে যাওয়া অটোরিকশাটি ইঞ্জিনের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এরপর চলন্ত ট্রেনটির ইঞ্জিনে আটকে যায়। ট্রেনটি অটোরিকশাকে টেনে নিয়ে যায় এক কিলোমিটার দূরে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, কোনো কারণে হার্ড ব্রেক বা তাৎক্ষণিক ব্রেক চাপলেও ট্রেন থামতে পারে ৪০২ মিটার বা ৪৪০ গজ দূরে গিয়ে। তবে কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেন দুর্ঘটনায় ট্রেন থেমেছে প্রায় এক কিলোমিটার বা ১ হাজার মিটার দূরে গিয়ে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে উপপ্রধান পরিচালন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান বলেন, ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস প্রায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে যাচ্ছিল। অনেক সময় সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক চাপা যায় না। পরিস্থিতি ও গতি বিবেচনা করতে হয়। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা তদন্ত করে জানা যাবে। এদিকে এই দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।