
‘দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করাই বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপির আগামী দিনের নীতি জনগণের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি। দেশে বিদেশে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার রাজনীতি। জনগণের আস্থা অর্জন করতেই হবে। জনগণ যদি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আপনি নেতা নন। আমাদের বার্তা হলো বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এই বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। গত ১৭ বছরে গুম, খুন ও নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যারা শহীদ হয়েছেন, যাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, তাদের স্বপ্নের দেশ গড়ে তুলতেই আমাদের লড়াই। গতকাল রবিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যুব দলের নিহত ৭৮ পরিবারের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সন্মাননা ও আর্থিক সহযোগিতা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকার পাঁচটি স্থানে আঁকা গ্রাফিতির ওপরে তৈরি একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। জুলাই-অভ্যুত্থানের ওপর কবিতা আবৃত্তি করেন নাসিম আহমেদ। তারেক রহমান বলেন, কথারমালার রাজনীতি মানুষ আর চায় না। পরিস্কারভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি যেমন বুঝি, এখানে প্রত্যেকটি মানুষ অনুধাবন করেন বাংলাদেশের জনগণ পরিবর্তন চায় এখন। আর স্বপ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি নয়, জনগণ এবার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। বিএনপি জনগণের সেই আকাংখাকে ধারণ করেই আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়ন করছে চেষ্টা করছে। আমাদের আমাদের নেতা-কর্মী, আমাদের দলের ভেতরে দলের বাইরে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছি, কাজ করছি। আমাদের আগামী দিনের নীতি জনগণের জীবন উন্নয়নের রাজনীতি। দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এটিই হবে আমাদের রাজনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা মনে করি জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা যত দ্রুত তার সাথে সম্ভব আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব। তবে সারাদেশে জনগণের কাছে বিএনপির পরিকল্পনাগুলো পৌঁছিয়ে দিতে হবে। আপনি যে শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাস করেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যে নেত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছেন আপনাদের সকলের দায়িত্ব আমাদের এই পরিকল্পনাগুলো জনগণের সামনে তুলে জনগণের কাছে নিয়ে যাবেন। কারণ জনগণের রায় আমাদের প্রয়োজন, জনগণের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন, জনগণের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন মানুষের জন্য নেওয়া এই কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের জন্য। তারেক রহমান তার দীর্ঘ বক্তব্যে যুব সমাজের কর্মসংস্থানে কি কি করণীয় তার একটি বিস্তারিত পরিস্কল্পনার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের কথাও বলেন। যুবদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনে যুবদলের নেতাকর্মীরা নির্যাতন, নিপীড়ন উপেক্ষা করেও রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের শত নির্যাতনে, নিপীড়নেও যুবদল পিছিয়ে যায়নি রাজপথ ছেড়ে যায়নি।
শুধুমাত্র জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যুবদলের ৭৮ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে। জনগণ আপনাদের সঙ্গে ছিল আপনাদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ছিল এ কারণেই আপনারা সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছেন। আপনাদের প্রতি জনগণের সেই আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখুন। মনে রাখবেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে আপনি নেতা, জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে আপনি নেতা নন। দীর্ঘ কয়েক দশকে দলীয় কার্য্ক্রমের নীতিনির্ধারণের সাথে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতার প্রতি ইংগিত করে তারেক রহমান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমার কয়েক দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বিষয় আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। কি সেটি? পলাতক স্বৈরাচারের প্রশাসন কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদেরকে যুবদলের নেতাকর্মী সমর্থকদেরকে রাজপথ থেকে দূরে রাখতে পারেনি সুতরাং আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান জনগণের আস্থায় থাকুন জনগণকে সঙ্গে রাখুন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি বিখ্যাত এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি কর্মসূচি খাল খনন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা পরিচালনা করে দেখেছি, ইনশল্লাহ আগামী দিনে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে আমরা যেকোন মূল্যে সমগ্র দেশে শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি আবার শুরু করব। মানুষকে রক্ষায় এই খাল খনন কর্মসূচি একটি এন্টিবায়োটিকের মত কাজ করে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব আমাদেরকে যে পথ দেখাচ্ছেন, যে কথাগুলো বলছেন অর্থনীতি সম্পর্কে, রাজনীতি সম্পর্কে তিনি দেশের সামনে যে স্বপ্ন তুলে ধরছেন সেই স্বপ্ন শুনে আমার একটি কথাই মনে হয় মার্টিন লুথার কিং এর সেই ঐতিহাসিক কথা ‘আই হেভ এ ড্রিম’। তারেক রহমান এজ এ ড্রিম’। ইনশাল্লাহ সেই ড্রিম নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব এবং আমরা জয় করব এবং উই শেল ওভার কাম ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, আমি আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা পরস্পর পরস্পরে কাঁদা ছড়াছড়ি না করে, আমরা এই যে একটা সুযোগ পেয়েছি, বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্রকে তৈরি করবার, বাংলাদেশকে আবার অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করবারৃ আসুন সবাই মিলে একসাথে কাজ করে আমরা বাংলাদেশকে সেই দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই, মাথা উঁচু করে দাঁড়াই। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব। পাশাপাশি গণতন্ত্র উত্তরণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে’ উল্লেখ করে সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আজকে একটা ষড়যন্ত্র চলছে, একটা চক্রান্ত চলছে যে, দেশে আবার একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করবার, দেশে একটা ষড়যন্ত্র তৈরি করবার যেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ট্রানজিশন সঠিক মত না হয়। কিন্তু আমরা এটা বিশ্বাস করিৃ যুবদল, ছাত্রদল যতদিন তারা টিকে থাকবে ততদিন এই দেশে এই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবার কোন শক্তি কখনো জয়ী হতে পারবে না। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে এবং অর্থনীতিকে সচল করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পদক্ষেপ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের যতগুলো কাঠামো আছে সেই কাঠামোকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করানোর কাজটা বিএনপি করেছে, অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন অর্থনীতিতে যে উন্নয়নের লক্ষ্য সেটাও করেছে এই বিএনপি দেশনেত্রী এবং খাজার নেতৃত্বে এবং আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া রহমান সাহেবে। ‘বিএনপিকেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন একটা আমরা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি। যখন আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা স্বপ্ন দেখছি, সুযোগ দেখছি। আমাদের সামনে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি, একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজনৈতিক কাঠামোৃ সেটাকে আবার ভিত্তি তৈরি করে, তাকে তৈরি করে আমাদেরকে আবার সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যখনই দেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় যখনই অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায় তখনই বিএনপি সেই দায়িত্বে এসে পড়ে এটাকে আবার পুনর্গঠন করার জন্য। প্রতিদিন সময় তাই ঘটেছে। আজকে এখন আবার যা মনে হচ্ছে তাতে করে বিএনপিকেই হয়তোবা সেই দায়িত্বটা নিতে হবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, আমি আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা পরস্পর পরস্পরে কাঁদা ছড়াছড়ি না করে, আমরা এই যে একটা সুযোগ পেয়েছি, বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্রকে তৈরি করবার, বাংলাদেশকে আবার অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করবারৃ আসুন সবাই মিলে একসাথে কাজ করে আমরা বাংলাদেশকে সেই দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই, মাথা উঁচু করে দাঁড়াই। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, একটি কথা শুনলাম, মাজেদ নাকি সাজেদ একজন মেজর, দেশে বসে চক্রান্ত করছে সরকারকে বিপদে ফেলতে কিংবা দেশে একটা ঘটনা ঘটাবে। এই সমস্ত চক্রান্ত কিন্তু আমরা বুঝি। এগুলো একটি বানানোর নাটক শুরু করেছেন যাতে নির্বাচনটা পেছানো যায়, যাতে নির্বাচনটা না হয়। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, দেশের মানুষ ১৭ বছর আন্দোলন করেছে ভোটের জন্যে। এই ভোট এই সরকারের কাছ থেকে আমরা আদায় করেই ছাড়ব। সরকারের পেছনে সরকারের ভিতরের বাইরে যতই ষড়যন্ত্র চলুক কোন ষড়যন্ত্রকেই বিএনপি অপ্রতিরুদ্ধ মনে করে না। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ১৭ বছরের মতই আগামীতে প্রয়োজন পড়লে আরো ১৭ বছর আন্দোলন করব কিন্তু কোন অরাজক পরিস্থিতি কিংবা কোন স্বৈরশাসককে আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না। আমি স্বৈরশাসনের কথা বলছি এই কারণে কয়েকটা বাচ্চা ছেলে-পেলের মুখের কথায় মনে হচ্ছে তারা যা বলবে তাই দেশের লোকের মানতে হবে।আমরা তাদের বাপ-দাদার চাকর-বাকর মনে হয়। দেশের মানুষকে তারা মানুষ মনে করে না, দেশের নেতৃবৃন্দকে তারা নেতৃবৃন্দ মনে করেন না। মনে করেন তারাই এই নেতা। কারণ গদির লোক পেয়ে গেছেন তো। এরা আর ক্ষমতায় ছাড়তে চান না।