ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ফের আলোচনা

ঐকমত্য কমিশন
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ফের আলোচনা

জুলাই সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও আলোচনায় বসতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। ওই আলোচনার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় পর্বের আলোচনায় বসবে কমিশন। গতকাল শুক্রবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের অগ্রগতি তুলে ধরতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এবং প্রত্যাশিত স্বাক্ষরিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। সেই লক্ষ্যে কমিশন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করবে। ওই আলোচনার আলোকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় বসবে কমিশন। আশা করা যায় যে এই প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত দুই পর্বের আলোচনায় কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যক সুপারিশ বা সংস্কার ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম পর্বের আলোচনায় ১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে। যার কিছু সরকার এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে (অধ্যাদেশ, নীতি ও নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে)। দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ১১টি বিষয়ে সব দলের সমর্থনে জাতীয় ঐকমত্য এবং বাকি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে কোন কোন দলের ভিন্নমত রয়েছে তা উল্লেখ থাকবে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক মতভিন্নতার কারণে ২৫টি বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

ভিন্নমত ছাড়া যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয় : (১) সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি; (২) নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; (৩) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান; (৪) বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ-(ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ; (৫) জরুরি অবস্থা ঘোষণা; (৬) প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; (৭) সংবিধান সংশোধন; (৮) প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; (৯) নির্বাচন কমিশন গঠন; (১০) পুলিশ কমিশন গঠন; (১১) নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব।

ভিন্নমতসহ যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয়: (১) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন; (২) প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান; (৩) সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান–সম্পর্কিত [ইতিপূর্বে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বাছাই কমিটি নামে প্রস্তাবিত ছিল (যা পূর্বে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ বা ‘এনসিসি’ নামে প্রস্তাবিত ছিল)]; (৪) সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচনপদ্ধতি ইত্যাদি); (৫) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি); (৬) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি; (৭) তত্ত্বাবধায়ক সরকার; (৮) রাষ্ট্রের মূলনীতি; (৯) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]। গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশ, সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে। অন্যটি হলো ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। এগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে (২০ মার্চ-১৯ মে) আলাদাভাবে আলোচনা হয়। গত ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। তৃতীয় পর্বে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন। পরে সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই নেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে জুলাই জাতীয় সনদ। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত