ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সাক্ষীর জবানবন্দি

চিকিৎসকরা আমার ছেলের লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতে চেয়েছিলেন

চিকিৎসকরা আমার ছেলের লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতে চেয়েছিলেন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় শহিদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের (মোস্তাকিম) লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি ও আসামিপক্ষের জেরায় এ কথা বলেছেন শেখ মেহেদী হাসানের বাবা শেখ জামাল হাসান। গণঅভ্যুত্থানের সময় চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ শেখ জামাল হাসানসহ দু’জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন।

জবানবন্দিতে শেখ জামাল হাসান বলেন, ৫ আগস্ট সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে ১৪ বছর বয়সী তার একমাত্র ছেলে শেখ মেহেদী হাসান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে বেরিয়ে যায়। সেদিন বেলা ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার শ্যালক ফোন করে ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানান।

গুলিবিদ্ধ মেহেদীকে তার বন্ধু সিয়ানসহ কয়েকজন মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন শেখ জামাল হাসান। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, শেখ মেহেদী হাসানকে মিটফোর্ডে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা বলেন, লাশ নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে লাশ হাসপাতালে রাখা যাবে না। তাড়াতাড়ি নিয়ে না গেলে লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে দিয়ে দেব। বুড়িগঙ্গায় লাশ ফেলে দেওয়ার কথাও বলেন চিকিৎসকেরা।

ছেলের হত্যার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান প্রমুখকে দায়ী করেন শেখ জামাল হাসান। তিনি বলেন, তার ছেলেকে সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন গুলি করেছেন। জবানবন্দি দেওয়ার এক পর্যায়ে কাঁদতে থাকেন শেখ জামাল হাসান। তিনি বলেন, তার এক মেয়ে আছে। আর একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। ছেলেকে হারিয়ে তিনি ও তার স্ত্রী পাগলের মতো জীবন যাপন করছেন। তার সব শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। তিনি অপরাধীদের শাস্তি চান। এই মামলায় আটজন আসামি। তাদের মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক।

আর গ্রেপ্তার আছেন শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। আজ তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এপিসি থেকে ফেলে ইয়ামিনকে হত্যার মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ১৪ সেপ্টেম্বর : ঢাকার সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের এপিসি থেকে ফেলে শিক্ষার্থী শাইখ আশহাবুল ইয়ামিনসহ ২২ জনকে হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ প্রতিবেদন দাখিলে আজ এই দিন ধার্য করেন। আদালতে প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম শুনানি করেন।

এ সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, এই মামলার ১৫ আসামীর মধ্যে গ্রেফতার ৭ আসামি আজ ট্র্যাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।

গত বছরের ১৮ জুলাই ঢাকার সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে যোগ দেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন।

সেদিন দুপুরে পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহীদ ইয়ামিনের নিথর দেহ পরে পুলিশের এপিসি’র ওপরে রাখা হয় এবং সেখান থেকে লাশটি ফেলে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত