ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

খুলনায় হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

খুলনায় হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে খুলনায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতসোমবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই বিধান চন্দ্র রায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএম মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এবং এস এম কামাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট পারভেজ আলম খান। এছাড়া এ মামলায় আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ এপ্রিল খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা থেকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা এমএম মুজিবুর রহমানকে। তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনের সূত্রে জানা যায়, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও জুম অ্যাপসের মাধ্যমে ‘তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’, ‘বিজয় একাত্তর’ ও ‘জয় বাংলা আমার প্রাণ’ গ্রুপের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়। কেএমপি থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহর মামলার অনুমতি চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ৪ আগস্ট রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি পায় কেএমপি। সোমবার এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ জানায়, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শেখ হাসিনা ও রেহানার দুর্নীতির ৩ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু আজ : ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুদকের করা পৃথক তিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে আজ বুধবার।

এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ছাড়াও ৫৩ জন আসামী রয়েছেন। এর মধ্যে আছেন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক এবং ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

ঢাকার বিশেষ জজ-৪ এর বিচারক রবিউল আলমের আদালতে এসব মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য মামলার বাদী দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া ও সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসানকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা-শেখ রেহানার দুর্নীতির পৃথক তিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৩ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বাদীকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়েছে। এদিন তারা আদালতে হাজির হবেন বলে আশা করছি। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অভিযোগে শেখ রেহানার বিরুদ্ধে গত ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। মামলায় টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়।

মামলাটির তদন্ত শেষে ১০ মার্চ আরও দুই আসামীসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।

এই মামলায় অন্য আসামীরা হলেন: জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, তদন্তপ্রাপ্তিতে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অভিযোগে আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি আরেকটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। মামলায় টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামী করা হয়। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ আরও দুই আসামীসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন আফনান জান্নাত কেয়া।

মামলার অন্য আসামীরা হলেন: জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, তদন্তপ্রাপ্তিতে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

একই অভিযোগে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। মামলায় টিউলিপ রিজওয়ানা ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামী করা হয়। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এস এম রাশেদুল হাসান।

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, শেখ হাসিনা ও টিউলিপ ছাড়াও মামলার অন্য আসামীরা হলেন: জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক ফারিয়া সুলতানা, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরিচালক শেখ শহিদুল ইসলাম, তদন্তপ্রাপ্তিতে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক রবিউল আলম তিন মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও বিচার শুরুর আদেশ দেন এবং সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ১৩ আগস্ট নির্ধারণ করেন।

শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে চাইলেন জেড আই খান পান্না, খারিজ করলেন ট্রাইব্যুনাল : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তবে তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই আবেদন গতকাল মঙ্গলবার খারিজ করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আজকে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের শুরুতে কথা বলেন আইনজীবী নাজনীন নাহার। তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না আজকে এখানে আসতে পারেননি। তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে চান। এ কথা ট্রাইব্যুনালকে জানানোর জন্য তাঁকে (নাজনীন) বলেছেন।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা ওভার (শেষ)। উনি সিভি দিলে অন্য মামলায় তাঁকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি দেখবেন। তা ছাড়া কাকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটা ট্রাইব্যুনালের বিষয়।

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, তিনি প্রসিডিওর জানেন। যে মামলায় আসামি উপস্থিত নাই, এমন পার্টিকুলার মামলায় আসবেন কেন? তা ছাড়া এ মামলায় যখন ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এসে বলতে পারতেন। তখন বিবেচনা করা যেত কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর মাস্টারকে বললেন, ট্রেনে উঠিয়ে দেন। একপর্যায়ে আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে যাঁকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁকে সহযোগিতা করতে চান জেড আই খান পান্না। এই আবেদনও খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পলাতক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত