ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ দাবি

সরকারকে এক মাসের আল্টিমেটাম

* দাবি পূরণের আশ্বাসে শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত * দাবি না মানলে টানা কর্মবিরতি
সরকারকে এক মাসের আল্টিমেটাম

দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে এক মাসের আলটিমেটাম দিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে ‘দৃশ্যমান ও যৌক্তিক’ পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচির ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমাবেশস্থলে এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের নেতারা।

জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজীজী বলেন, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছেন। কিন্তু তারা যৌক্তিক দাবি পূরণে গড়িমসি করছেন। আমরা দাবি আদায়ে ৩০ দিন সময় বেঁধে দিচ্ছি। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী সেই সর্বাত্মক কর্মসূচি হবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি। ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে ১৫ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি করা হবে।’

শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যা হলো : দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশস্থল থেকে ১০ জন শিক্ষক নেতা সচিবালয়ে যান। তারা শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের জানানো হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সার্বজনীন বদলি নিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সভায় বসেই এ কমিটি করার ঘোষণা দেন উপদেষ্টা।

সভা সূত্র জানায়, সার্বজনীন বদলি কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমানকে। সদস্যসচিব করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (মাধ্যমিক-২) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলীকে। এছাড়া সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে সদস্য রাখা হয়েছে।

সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষা উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সর্বজনীন বদলি ও বাড়িভাড়ার বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকদের বাড়িভাড়া কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে শিক্ষকরা জানান, তারা এ নিয়ে আলোচনা করে বাড়িভাড়া কীভাবে বাড়ানো যাবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেবেন।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বাড়ি ভাড়া টাকা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়াগুলো যৌক্তিক উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

এর আগে বুধবার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দেশের ৬৪ জেলার কয়েক হাজার শিক্ষক এতে অংশ নেন। শিক্ষকদের সমাবেশের কারণে পল্টন থেকে হাইকোর্ট ও শাহবাগ অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে সমাবেশ শেষে দুপুর ২টার দিকে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা করার কথা থাকলেও তা করেননি শিক্ষকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ ও উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ হওয়ায় শিক্ষকরা বিকেল ৩টার দিকে সমাবেশ শেষ করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এদিকে, বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের সঙ্গে শতাংশ হারে বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা না হলে আবার আন্দোলন শুরুর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক সমাবেশে এই তথ্য জানান এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়া এক হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা, মেডিকেল ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডিউ লেটার পাঠানো হয়েছে। তবে আমরা এসব মেনে নিইনি। বরং মূল বেতনের সঙ্গে নির্দিষ্ট একটা শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বাড়াতে হবে। এটি কমপক্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ করতে হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত