
সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, র্যাব, আনসার ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। একইভাবে স্থানীয় বিএনপি ও এর সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। সেখানে থেকে বিভিন্ন স্লোগানের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কোনও সমর্থক দেখলে ধাওয়া দেন তারা।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের প্রবেশপথে ব্যারিকেড বসিয়ে সড়কের দুই দিক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কেবল গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা বাড়ির সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক পাহারা দেন। সকাল ১০টার দিকে শেরেবাংলা নগর থেকে ফুল নিয়ে আসা এক নারীকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। হালিমা নামে ওই নারী নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে বলেন, শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। তবে উপস্থিত উত্তেজিত জনতা ঘিরে ধরলে পুলিশ দ্রুত তাকে রিকশায় এলাকা ত্যাগ করতে সহায়তা করে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই নারীসহ আরও অন্তত ১৫ জন গতকাল সকালে শোক জানাতে এসেছিলেন। তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে স্থানীয় বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন তারা। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লালমাটিয়া থানা ছাত্রদলের সদস্য তামজিদ ইসলাম বলেন, ওই নারী ভাইরাল হওয়ার জন্য এসেছেন। আওয়ামী লীগের সত্যিকার কর্মী হলে তিনি আসতেন না। দলটির বড় নেতারাও পালিয়ে আছেন। ওই নারী বারবার বলছিলেন, হাসিনা খুন করেননি। তখনই উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তার হাতে থাকা ফুল ফেলে দেয়। একপর্যায়ে তাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কোনো বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেন বলেন, ‘একজন নারী এসেছেন ফুল দেওয়ার জন্য। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তাঁকে চলে যেতে বলি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’
এ ঘটনার পর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফুল দিতে আসেন আরেকজন। তিনি নিজেকে রিকশাচালক বলে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ফুল দিতে এসেছেন। এ সময় কয়েকজন মারধর করলে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ নিয়ে যায়। ধানমন্ডি থানার দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) সোলায়মান সুমন বলেন, ওই ব্যক্তিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। গতকাল ভোর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভেঙে দেওয়ার বাড়ির সামনে সড়কের দুই পাশে পুলিশের ব্যারিকেড দেখা যায়। বাড়ির সামনের সড়কে কোনো যানবাহন চলেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। সকাল থেকে সেখানে উৎসুক লোকজনকে ভিড় করতে দেখা যায়।
সকালে ধানমন্ডি লেক পার্কে সাউন্ড বক্সে উচ্চশব্দে গান বাজানো হয়। কাদের উদ্যোগে এই গান বাজানো হচ্ছে, পরিচয় জানতে চাইলে আয়োজকেরা নিজেদের সাধারণ ছাত্র বলে পরিচয় দেন। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা বলেন, ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর প্রবেশপথ থেকে অন্তত সাত জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে কেউ ফেসবুকে লাইভ করছিলেন, আবার কেউ আওয়ামী লীগের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। পুলিশ জানায়, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে তারা কঠোর অবস্থানে ছিলেন। নাশকতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক বলেন, কেউ যাতে কোনও ধরনের উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি বা নাশকতা করতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন আছে।
কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে কঠোর অবস্থান: গতকাল ১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের গুলিস্তান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। দলটি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যেন জমায়েত হতে না পারেন সে জন্য আশপাশের এলাকায় কঠোর অবস্থান করে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।