
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, ডাকসুর আয়োজন যেকোনো বিবেচনায় চ্যালেঞ্জিং। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি, সবার জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করে এগিয়ে যেতে। প্রতিনিয়ত কাজ করছি। গতকাল (গত শুক্রবার) রাতেও ইলেকশন কমিশন, সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমসহ সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম, হল প্রভোস্টরাও ছিলেন। সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। বড় দাগে যে কনসার্নগুলো এসেছে সেগুলোকে আমরা এক এক করে এড্রেস করার চেষ্টা করছি। নিখুঁত পরিবেশ আপেক্ষিক একটি বিষয়। এটা চলমান। নয় দশ মাস ধরে সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা সবাই মিলে মাঠে নেমেছি। সমস্যা আসছে, সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কাছে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চান। উপাচার্য এবিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেন। কিন্তু কয়েকটি গণমাধ্যম তাঁর বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপাচার্যের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলো যে আচরণ করেছে তাতে আমরা আশাবাদী। অনেক রকম তাদের নিজস্ব মতভেদ, মতানৈক্য সত্ত্বেও তারা মোটা দাগে ডাকসুতে অংশ নিচ্ছে। আনন্দ ও উদ্দীপনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আমাদের বিরাট একটা শক্তি। এটি এককভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বা একক কোনো মহলের বিষয় না। এই আয়োজনে যতক্ষণ সবাই আমার হাত ধরবেন, ততক্ষণ আমি মাঠে থাকবো। যেখানে আমার হাত ছেড়ে দেবেন, আমি পরিষ্কার আপনাদেরকে ডেকে বলে দেবো যে, এই জায়গাতে আমার বাঁধা হচ্ছে। এটি একটি জাতীয় দায়। যদিও এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠান কিন্তু পুরো জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা আমাদের কৃতজ্ঞতা। এই দায় কোনো ব্যক্তিগত দায় নয়। এটা একটি কালেকটিভ রেসপন্সিবিলিটি।
তিনি বলেন, ছাত্রদের ব্যাপক আগ্রহ ও দাবির প্রেক্ষিতে আমরা মাঠে নেমেছি। আমরা মোটামুটি ভালো পরিবেশ রাখার জন্য যা উদ্যোগ সেটি আপনাদেরকে প্রত্যেক তিন-চারদিন পরপর আপডেট আকারে জানিয়ে দেবো। এই মুহূর্তে আমরা জানি সাংবাদিকদের অনেক তথ্যের প্রয়োজন। নিয়মিতভাবে আপনাদের তথ্য জানানো হবে। ইলেকশন কমিশন আমাদের যেভাবে গাইড করবেন, আমরা সেভাবে কাজ করবো। আমরা এখন মূলত ইলেকশন কমিশনের অধীনে কাজ করছি। প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তাদের যেকোন ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন। আমার কথা পরিস্কার, সকল অংশীজনের সঙ্গে ৭০টির বেশি মিটিং-আলোচনা করে আমরা এতটুক এগিয়েছি। সবাই যতক্ষণ আমার সাথে থাকবেন, ততক্ষণ এ প্রক্রিয়া চলবে। যখন আপনি হাত ছেড়ে দেবেন, আমি সবাইকে ডেকে এনে কোন পর্যায়ে আছি সেটা আপনাদেরকে জানিয়ে দেবো।
এদিকে, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে কি না- এমন প্রশ্ন তুলেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তার মতে- যারা হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করে, জেল-জুলুম, রিমান্ডের নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে রাশেদ খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল শিক্ষার্থীরা গত ১৬ বছর হাসিনা ও ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী লড়াই করেছে, সেই সকল ছাত্রনেতারা হলে থাকতে পারেনি। কিন্তু কোন কোন ছাত্র সংগঠনের নেতারা রাজনৈতিক পরিচয় অপ্রকাশ্য রেখে হলে বিভিন্ন সামাজিক-মানবিক সংগঠনে বা সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে হলে থেকেছে। এক্ষেত্রে হলে থাকার সুবাধে বা রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞের বাইরে সেবামূলক কাজে জড়িত থাকায় তারা হল সংসদ নির্বাচনে ও কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ তাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে।
ভোটের রাজনীতিতে কাছাকাছি থাকা, কাছে যেতে পারা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক্ষেত্রে যে ছেলেটা প্রকাশ্যে রাজনীতি করার কারণে, জেল-জুলুম নির্যাতন ও রাজপথে হাসিনা বিরোধী স্লোগান দিয়ে আবাসিক হলে থাকতে পারেনি, সে তো পিছিয়ে আছে। তার বিরুদ্ধে তো রাজনৈতিক তকমা দেওয়া হচ্ছে যে, অমকতমক দলের লেজুড়বৃত্তি করে। কিন্তু কে লেজুড়বৃত্তির বাইরে? কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্য বা কৌশলে লেজুড়বৃত্তি করছে।’