
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার থেকে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মোতায়েন থাকবে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সভায় প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন প্রচারণা অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতে বারবার জাতীয় সংকটে নেতৃত্ব দিয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়েও একটি গণতান্ত্রিক উদাহরণ স্থাপন করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রথম স্তরে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রক্টোরিয়াল টিম ও ডিএনসিসির ২০০ সদস্য, যারা ৮টি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। দ্বিতীয় স্তরে মোতায়েন থাকবেন পুলিশ সদস্যরা। তৃতীয় স্তরের দায়িত্বে থাকবেন সেনা সদস্যরা, যারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে যে কোনো ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন এবং ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন।
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোটের সাতদিন আগে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কোনো বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে না। ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। ক্যাম্পাসে শুধু বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার থাকবে।
প্রার্থীদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা যেন শিক্ষার পরিবেশে ব্যাঘাত না ঘটায়। মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা, শহীদ ও দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য বরদাশত করা হবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী কিংবা অন্য কোনো পরিচয়ের ওপর আঘাত হানলে কেবল প্রার্থিতা নয়, তার ছাত্রত্ব ও আবাসিক সিটও বাতিল করা হবে। অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা হয়রানি প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার ড. জসীম উদ্দিন বলেন, ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর সচেতন অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই এই নির্বাচন সফল হবে। জাতি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডাকসু নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় বরং গোটা দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে।
শিবির সমর্থিত প্যানেলের পোস্টার ফেলে দেওয়ার অভিযোগ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হওয়ার প্রথম দিনেই শিবির সমর্থিত প্যানেলের পোস্টার ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, আজ সকাল থেকে শুরু হয় নির্বাচনী প্রচার। এরই অংশ হিসেবে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পক্ষ থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে অস্থায়ীভাবে একটি ব্যানার স্থাপন করা হয়। তবে স্থাপনের কিছুক্ষণ পরই দুইজন অজ্ঞাত যুবক এসে সেটি ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘটনার বিষয়ে চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে এসেছি। কারা এ কাজ করেছে, শনাক্তের চেষ্টা করছি। যারাই করেছে, তারা অবশ্যই অন্যায় করেছে। আমি বলব, তারা যেন ব্যানারটি আবার ঠিক করে দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো প্রার্থী এই ঘটনায় আইনি সহায়তা চায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। নির্বাচন কমিশন আমাদের ব্যবস্থা নিতে বললে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
ডাকসু নির্বাচন স্ক্যামে পরিণত হলে বর্জন করব -মেঘমল্লার বসু : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্ক্যামে পরিণত হলে বর্জন করবেন বলে জানিয়েছেন ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। মেঘমল্লার বসু বলেন, আমরা যদি বুঝতে পারি পুরো ভোটের ব্যাপারটি একটি স্ক্যামে পরিণত হচ্ছ, তাহলে এমন?ও হতে পারে আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে নাও অংশ নিতে পারি। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী যে প্রক্রিয়া তার সঙ্গেই আমরা থাকছি । আমাদের প্রচারণা ফুল স্কেলে করব। তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি, তা হলো মেয়েদের হলে প্রবেশ করতে চাইলে প্রতিবারই আলাদা আবেদন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই সেখানে ঢোকা যাবে। অথচ আমরা তো এতদিন কোনো নিয়ম ভঙ্গ করে হলে প্রবেশ করিনি। তাহলে আমরা এখন কী করব— প্রচারণা করব নাকি অ্যাপ্লিকেশন করব?
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আসলে চান আমাদের সীমিত সময় আবেদন প্রক্রিয়াতেই নষ্ট হোক। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়—এখানেও টাকার প্রভাব আর মাসল পাওয়ারই কাজ করবে। যার টাকা, মাসল পাওয়ার আছে তারা জিতবে। অন্য প্যানেল অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এটা বলে দেন তাহলে আমরা এখন থেকেই নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াই। তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিবেচনা করবে—কারা আচরণবিধি ভঙ্গ করে রাত দেড়টায় রোকেয়া হলে প্রবেশ করেছে, কারা আচরণবিধি ভঙ্গ করে কোরআন বিতরণের আয়োজন করেছে, কারা আচরণবিধি ভঙ্গ করে রিডিং রুমে ঢুকেছে, এবং কারা নির্বাচনের নিয়ম মেনে কাজ করছে।