ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘কমপ্লিট শাটডাউন’ অব্যাহত বিভাগীয় সমাবেশের ডাক প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় : বুয়েট
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ অব্যাহত বিভাগীয় সমাবেশের ডাক প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ বলবৎ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’। একই সঙ্গে আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে। চলমান আন্দোলন ও দাবির বিষয়ে সবিস্তারে তুলে ধরতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সংবাদ সম্মেলন করেন প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে একত্র হওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্ল্যাটফর্মের সভাপতি মো. ওয়ালি উল্লাহ।

রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সে (আইইবি) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে পদগুলো শুধু ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়, সেখানে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের কোনো সুযোগই দেওয়া হয় না। এটি বন্ধ করতে হবে। মো. ওয়ালি উল্লাহ বলেন, ‘আন্দোলনটা আমাদের তিন দফার ওপর চলছিল এবং গতকালের যে ম্যাসিভ ইনসিডেন্ট হয়েছে, এগুলো সুরাহা হইতে হবে। আমাদের যদিও কমিটমেন্ট দেওয়া হয়েছিল গতকালকে, সেটার আজকেও কিন্তু আমরা কোনো বাস্তবায়ন পাইনি। তো আমরা আমাদের কর্মসূচি যেটা রাখছি, প্রথমত আমাদের নেক্সট অ্যানাউন্সমেন্ট হওয়ার আগপর্যন্ত সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে কমপ্লিট শাটডাউন বলবৎ থাকবে।’ এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে বিভাগীয় সম্মেলন এবং পরবর্তী সপ্তাহে জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। জনদুর্ভোগ এড়িয়ে চলার জন্য তাঁরা এ ধরনের কর্মসূচিতে গিয়েছেন বলে জানান। তবে তারা গতকাল একটি মিছিল করেছেন বলে জানিয়েছেন। প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো ৯ম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা; ১০ম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা এবং শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যারা সম্পন্ন করবেন, তারাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। এই তিন দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা বেলা দেড়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে শুরু করেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় তাঁদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তখন লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশের লাঠিপেটার পর তারা বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে ১০টার পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। গতকাল রাতেই তারা দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ঘোষণা করেন।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়- বুয়েট : আন্দোলনরত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এন. এম. গোলাম জাকারিয়া স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। বুয়েটের বিবৃতিতে বলা হয়, বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীদের সহকারী প্রকৌশলী বা সমমানের পদে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার সুরক্ষা, সুসংহত করাসহ সংশ্লিষ্ট গ্রেডে কোটা সংক্রান্ত বৈষম্য দূর করার দাবিতে কয়েক দিন ধরে বুয়েটসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে বুয়েটের উপাচার্য ও সহ–উপাচার্য সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য গত বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বুধবার বুয়েটসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উল্লিখিত দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। পুলিশের এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের বদলে পুলিশের এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বুয়েট প্রশাসন পুলিশের এ আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, মর্মাহত এবং এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত করে হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বুয়েট প্রশাসন এমনটাই আশা করছে।

বুয়েটসহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথমে তিন দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। দাবির মধ্যে রয়েছে- নবম গ্রেডের ইঞ্জিনিয়ারিং পদ বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমানের পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং প্রার্থীর কমপক্ষে বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোটার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। এমনকি বিভিন্ন নামে সমমানের পদ সৃষ্টি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। দশম গ্রেডের কারিগরি পদ বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমানের পদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা ডিপ্লোমা এবং বিএসসি ডিগ্রিধারীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি না থাকলেও ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্য আহত হন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও আদায় না হওয়া তিন দফা দাবি থেকে সরে এসে পাঁচ দফা দাবি জানান আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি এ সমস্যা সমাধানে সরকারের গঠন করা কমিটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।

গত বুধবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে বিষয়টির জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলাম। একই সঙ্গে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। জুবায়ের আহমেদ আরও বলেন, আমাদের পূর্ব ঘোষিত তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাহী আদেশে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। তিন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে এখানে এসে নিশ্চয়তা দিতে হবে। হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনো হামলা করা যাবে না। এছাড়া আন্দোলনে অংশ নেওয়া রোকনের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বুয়েটের এ শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুলিশের হামলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত