
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন না হলে সেই নির্বাচন অর্থহীন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে লন্ডনে পৌঁছে গত শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনের কোনো বৈধতা বা কার্যকারিতা থাকবে না। জামায়াত আমির আরও জানান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে এবং এই সংগ্রামে জামায়াত জনগণের পাশে থাকবে। একই সঙ্গে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময়সীমা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর আহ্বান জানান।
গুম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সব ধরনের অপরাধের বিরোধী। অপরাধী যে-ই হোক, সে সেনাবাহিনীর সদস্য বা অন্য কেউ তার বিচার হওয়া উচিত।
লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির সময় তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। পরে তিনি জুমার সমাবেশে যোগ দেন এবং পরবর্তী সময়ে বার্মিংহ্যাম ও লেস্টারে দুটি সভায় অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাজ্যের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, সেভ বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামসহ দলটির অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গৃহীত আরপিও পুনঃসংশোধন একটি দলের কাছে নতিস্বীকারের শামিল- তাহের : গৃহীত আরপিওকে পুনরায় সংশোধন করা একটি দলের অন্যায়-অযৌক্তিক আবদারের কাছে নতিস্বীকার করার শামিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। গতকাল শনিবার দুপুরে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গৃহীত আরপিওকে পুনরায় সংশোধন করা একটি দলের অন্যায়-অযৌক্তিক আবদারের কাছে নতিস্বীকার করার শামিল বলেই আমরা মনে করি।
এ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অতীতেও একটি বিশেষ দলের প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল উল্লেখ করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়ে একটি অসম ও অবৈধ চুক্তি একটি দলের চাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং সর্বশেষ একই উপদেষ্টা পরিষদে গৃহীত... আরেকটি দল যখন এটার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মার্কা ব্যবহারের বিষয়ে, আবার সেটা নিয়ে পরিষদের বৈঠকে পুনরায় পুনর্বিবেচনার নামে দলের প্রতি যে আনুগত্য প্রকাশ করেছে সরকার, নিঃসন্দেহে এতে এ সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না এবং এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা আমি স্পষ্ট করতে চাই, ইতোপূর্বে নির্বাচন কমিশন এবং উপদেষ্টা পরিষদে প্রত্যেকটি দলকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে বলে যে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত এবং জাতি একমত। আমরা গত বৈঠকে গৃহীত সেই সিদ্ধান্তকে আবার পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ হবে। জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি নতুন করে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। জনগণ ফেব্রুয়ারিতে যে একটি জাতীয় নির্বাচন চাইছে, নির্বাচনের ঠিক আগে হঠাৎ এরকম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাণ্ডউত্তাপ তৈরি করা ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে আমরা মনে করি।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, এরকম অশুভ চক্রের কাছে প্রধান উপদেষ্টা নতি স্বীকার করবেন, বশ্যতা স্বীকার করবেন এবং ষড়যন্ত্রের কাছে নতি স্বীকার করে উনি সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাবেন, এটা আমরা আশা করি না। আমরা উনার কাছে এ আশাই করি যে সংস্কার-রিফর্ম ছিল উনারই নিজস্ব প্রোডাক্ট। উনি উনার এ সন্তানকে নিজ হাতে ছুড়ে দিয়ে হত্যা করবেন, এটা জাতি বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, আর যদি এটাই প্রধান উপদেষ্টা করেন তাহলে জাতির সঙ্গে যে ওয়াদা উনি করেছিলেন সে ওয়াদা উনি ভঙ্গ এবং খেলাফ করবেন বলেই জাতি মনে করবে। আমরা আশা করি, উনি দৃঢ় ভূমিকা পালন করবেন এবং সংস্কার বাস্তবায়নে যথার্থ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।