
ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় থাকার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ একটা খুব সংকটময় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে। জাতি হিসেবে, দেশ হিসেবে কোন দিকে যাব, গণতন্ত্রের পথে কীভাবে হাঁটব, সবকিছু নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর। গতকাল সোমবার ঢাকার ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিইসি। জাতীয় নির্বাচনে আনসার-ভিডিপির ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা মহড়া এবং ২০২৫-২০২৬ সালের চতুর্থ ধাপের আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সমাপনী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের আলাদা দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সিইসি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য কী বাংলাদেশ রেখে যাব, কোন ধরনের বাংলাদেশ রেখে যাব, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রেখে যাব কিনা, কীভাবে রেখে যাব, এ চিন্তা আমাকে সারাক্ষণ ভাবায়। এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে রুটিন দায়িত্ব হিসেবে নিইনি, চাকরি হিসেবে নিইনি। এটাকে আমি মিশন হিসেবে নিয়েছি, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আগামী নির্বাচনে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘বিশাল ভূমিকা’ থাকবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই, বাহিনী হিসেবে এটাই সর্ববৃহৎ বাহিনী, প্রশিক্ষিত বাহিনী যদি ধরি, সংখ্যার দিক থেকে এটাই সর্ববৃহৎ বাহিনী। ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মূল শক্তি আনসার বাহিনীর সদস্যরা। তারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। আগামীতে যারা ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত হবেন। তাদের ওপর আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটা দায়িত্ব এসে পড়েছে। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে গতিপথ নির্ধারণ হবে, তাতে আনসার বাহিনীর ‘বিশাল ভূমিকা’ থাকবে বলেও মন্তব্য করেন নাসির উদ্দিন। নির্বাচন সামনে রেখে একযোগে ৭৪টি কেন্দ্রে আনসার বাহিনীর এবং ১৩০টি কেন্দ্রে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলার তথ্য দেন তিনি।
সিইসি বলেন, আমি গতানুগতিক ধারার কাজে বিশ্বাসী নই, বিশেষ করে এই ধরনের সংকটময় মুহূর্তে, ক্রিটিক্যাল অবস্থায় দেশ যখন রয়েছে, এখানে আমাদেরকে গতানুগতিক ধারায় কাজ করলে হবে না। আউট অফ দ্যা ওয়েতে গিয়ে আমাদেরকে কাজ সমাধান করতে হবে। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবমিলায়ে অন্তত ১০ লাখ লোক মোতায়েন থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা নির্বাচনের ডিউটিতে থাকে, সাধারণত তারা মূলত নিজেরাই ভোট দিতে পারে না। আমরা এবার একটা উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে করে আপনারা যারা ভোটের ডিউটিতে থাকবেন, তারা যাতে ভোটটা দিতে পারেন।
সেজন্য ১৬ নভেম্বর একটি অ্যাপ চালু করা হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, আপনারা রেজিস্ট্রেশন করে নেবেন। আপনাদের বাড়ির ঠিকনায় ব্যালট পৌঁছে যাবে। নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটটা দিতে পারবেন। যারা নিজের এলাকার বাইরে থাকেন, তারাও ভোট দিতে পারবেন। যারা জেলে আছেন, তারাও এদেশের নাগরিক। তারাও যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। এছাড়াও প্রবাসী ভোটরাও এবার ভোট দিতে পারবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে কোনো কিছু ‘শেয়ার’ করার আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নেওয়ার আহ্বান জানান সিইসি। তিনি বলেন, এসব যাচাই বাছাইয়ের জন্য ইসিতে একটি সেল খোলা হয়েছে, প্রয়োজনে সেখানে যোগাযোগ করে সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নেওয়া যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের ‘মেজর প্লেয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করে সাবেক আমলা নাসির উদ্দিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে যদি আমি কেন্দ্র ভরেও ফেলি, উনারা প্রত্যাশিত মাত্রায় সহায়তা যদি না করে, হবে না। ভোটার, রাজনৈতিক দল, বাহিনীর লোক সবাই মিলে ‘প্রত্যাশিত সুন্দর নির্বাচন’ জাতিকে উপহার দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ অনুষ্ঠানে জানান, এবারের নির্বাচনে অন্তত ৫ লাখ ৪৫ হাজার আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে ডিসেম্বর পর্যন্ত আনসার সদস্যদের এই মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন প্রবাসীরা : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য জনস্বার্থমূলক বার্তায় এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটার, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে www.ecs.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করতে এবং নির্বাচন কমিশনের ইউটিউব চ্যানেল @BangladeshECS এ চোখ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, এবার প্রথমবারের মত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব প্রবাসী ভোটার ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধিত থাকবেন, তারা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। তিনি আরও জানান, আগামী ১৬ নভেম্বর প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন অ্যাপের উদ্বোধন করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে কত তারিখ পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে, তা সেদিন জানানো হবে।