ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নাশকতা ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাশকতা রুখতে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন
নাশকতা ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নাশকতা প্রতিহত করতে প্রশাসনের পাশিপাশি মাঠে প্রস্তুত ছিল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাকর্মীরা। তারা সারা দেশে শক্ত অবস্থানে ছিল, এসব দলের সঙ্গে তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোও লকডাউন ঠেকাতে রাত যেগে রাজপথ পাহারা দেয়।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রুখতে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশিত করতে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল। পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করছে পুলিশ।

সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বছিলা ব্রিজের প্রবেশ মুখে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ওসমান গনি সেন্টুর নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী ব্রিজের পাশে চেয়ার পেতে অবস্থান নিয়েছেন।

ওসমান গনি সেন্টু বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে অবস্থান করছি। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় ও বছিলা ব্রিজের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়েছি যেন ফ্যাসিস্টরা জনগণের কোনো ক্ষতি না করতে পারে। কোনো ফ্যাসিস্ট জনগণের ক্ষতি করতে গেলে তাদের কালো হাত ভেঙে দেব। আওয়ামী দোসররা কালো হাত দিয়ে জনগণের ওপর অনেক অত্যাচার চালিয়েছে, আর এমনটা হতে দেব না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাংলায় হাসিনার দোসরদের ঠাঁই হবে না।’ গাবতলী মাজার রোডে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছে দলটি। সকাল ৮টার আগ থেকেই অবস্থান নিয়েছের দলটির নেতাকর্মীরা। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের অবস্থান মিরপুর উত্তর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মো আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছি। এই এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, সবকিছু স্বাভাবিক আছে।’

এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে গত বুধবার থেকেই ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় বিভিন্ন চেকপোস্টে গণপরিবহন আর সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজও এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মোটরসাইকেল আরোহীদের ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রতিটি বাইকের নম্বর ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়। একইদিন পুরো দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে অনলাইনে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে জুলাইসহ সব গণহত্যার বিচার, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্তৃক নাশকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রেজাউল করিম শাকিল ও ঢাকা মহানগর পূর্ব সভাপতি এবং ডাকসুর ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহর যৌথ সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

এদিকে আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে মশাল মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে এ মিছিল শুরু হয়ে চাষাড়া সলিমুল্লাহ সড়ক দিয়ে খানপুর মেট্রোহল মোড় ঘুরে চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভের সামনে এসে শেষ হয়।

এসময় মিছিলটি চাষাড়া নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক হয়ে বাগে জান্নাত জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ এক অজ্ঞাত যুবক এসে পেছন থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ‘আমি জয় বাংলা করি, আমারে কিছু কর’ বললে মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এনসিপির নেতাকর্মীরা ওই যুবককে ধরতে দৌড়ালেও তিনি পাশের গলিতে ঢুকে পালিয়ে যান। পরে বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পর মিছিলটি পুনরায় অগ্রসর হয়। মিছিলে এনসিপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন ‘ফ্যাসিবাদের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও,একটা একটা লীগ ধর ধইরা ধইরা জেলে ভর, আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই, শামীম ওসমানদের ঠিকানা এই নারায়ণগঞ্জে হবে না।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের কেন্দ্রীয় সংগঠক শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে গ্রহণ করবে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে কেউ যদি কোনো নির্বাচন করতে চায়, তাকেও আমরা সমানভাবে প্রতিহত করব। আগামীকাল বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্লাস দিয়েছে অনলাইনে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দেশ স্বাভাবিক থাকতে হবে আমরা বিপ্লবীরা রাজপথে আছি রাজপথে থাকব। যেখানেই লীগ দেখা হবে সেখানেই প্রতিহত করার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচির মধ্যে যশোর উপশহরে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে উপশহরের ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায় বাসটিতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হাসান।

তিনি বলেন, ভোরে বাসটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা, তবে স্থানীয়রা তা দেখতে পেয়ে দ্রুত নিভিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচির প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে অবস্থান নেয় জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করে লকডাউন কর্মসূচির তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

পথসভায় জেলা জামায়াতের রেজা সহকারী প্রচার সম্পাদক আবুল হাশিম রেজা বলেন, ‘লকডাউনের নামে দেশে আগুন সন্ত্রাস চালাচ্ছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এই আগুন সন্ত্রাস থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে রাজপথে ছিল এবং থাকবে জামায়াতে ইসলামী।’

পরে বেলা ১২টায় শহরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হেসেন খোকনের নেতৃত্বে শহরে মিছিল করেছে বিএনপি। মিছিলটি শহরের আরএন রোড থেকে শুরু হয়ে দড়াটানায় গিয়ে শেষ হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত