
জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত আলু নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন জটিলতা। আলু সংরক্ষণের সময়সীমা শেষ হতে এখনও দুইদিন বাকি থাকলেও, অভিযোগ উঠেছে- কৃষক ও ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে বেশ কয়টি হিমাগার মালিক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন তাদের সংরক্ষিত আলু। অসময়ে বৃষ্টি, পার্শ্ববর্তী দেশসহ কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি হওয়ায় হঠাৎ আলুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা। কারণ শুরু থেকে বাজারে আলুর মূল্য ছিল ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা সর্বোচ্চ। বর্তমানে আলুর হিমাগার বাজার দর ২৬-১৮ টাকা। হিমাগার মালিকরা বলছেন, তাদের ন্যায্য মূল্য অর্থাৎ বর্তমান আলুর মূল্য দেওয়া হয়েছে। আর সংশ্রেষ্ঠরা বলছেন, প্রমাণ মিললে লাইসেন্সসহ কঠোরব্যবস্থা নেওয়া হবে। আলু উৎপাদনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। আলু উৎপাদন করতে গিয়ে সার, বীজ, পানিসহ সংরক্ষণ ও বিক্রয় করতে গিয়ে নানান সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এবারও আগামী ১৫ নভেম্বর শেষ হবে জয়পুরহাটের ২১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময়সীমা। হিমাগারের ভাড়া আদায়ের লস ঠেকাতেই আতঙ্কে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সময়ের আগেই কালাইএর- আর,বি স্পেশাল কোল্ড স্টোর, ক্ষেতলাল মোল্লা কোল্ড স্টোরেজ লিঃ, হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার ও পাঁচবিবির চাঁনপাড়া সাথী হিমাগার-৩ সহ বেশ কিছু হিমাগার কর্তৃপক্ষ চুপিসারে বিক্রি করে দিয়েছেন তাদের সংরক্ষিত আলু। কৃষকের অভিযোগ, সময় শেষ হওয়ার আগে না জানিয়ে কোনো আইনে বিক্রয় করল, আলু বিক্রয় করল?
কালাই গ্রামের কৃষক রিগান বলেন, নিজেদের হিমাগারের ভাড়া কৌশলে তুলে নিতে বিক্রি করেছে আমাদের সংরক্ষিত আলু। শুরু থেকে আলুর বাজার মূল্য ছিল ৫৩০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে ৯০০-১০৫০ টাকা। আমার হিমাগারের সঙ্গে আলু তারা অনেক আগে আমাদের না জানে বিক্রি করেছে। সংরক্ষিত আলু নিতে এসে দেখি আমাদের আলু আগেই বিক্রি করে দিয়েছে তাহলে হিমাগার মালিকরা বিনা অনুমতিতে আলু বিক্রি করেছেন এতে চরম অপরাধ করেছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ। এই বিচার কাকে দেব?
কালাই কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার আবু রায়হান বলছেন। হঠাৎ বৃষ্টি, প্রতিবেশী দেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে আলু যাওয়ায় আলুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ব্যবস্থা সরকার যদি আগে করা হতো তাহলে কৃষক ব্যবসায়ী এত ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। আলুর দর কমে যাওয়ার সরকারসহ কর্তৃপক্ষ দায়ী। কারণ আলুর দম কমে যাওয়ায় সরকার আলুর দর ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত এক কেজি আলু ক্রয় করেনি। কৃষক ও ব্যবসায়িক ক্ষতি হওয়ার মূল কারণই সরকার লোকসান, অনিশ্চয়তা আর অব্যবস্থাপনার এ চাপে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের ঘরে আশার আলুর বদলে জমছে হতাশার পাহাড়। তাই কৃষক ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে এখনই সঠিক পদক্ষেপের দাবি ব্যবসায়ী নেতার।
মোল্লা কোল্ড স্টোরের ক্ষেতলাল ম্যানেজার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন। হিমাগার থেকে আলু তোলার সময় ফুরিয়ে আসায় নষ্ট হওয়ার আগেই আলু বিক্রি করতে হয়েছে। অনেকেই সময়মতো আলু তুলছেন না। জায়গা ফাঁকা করতে হয়েছে, তাই কিছু আলু বিক্রি করা হয়েছে। হঠাৎ আলুর দাম বৃদ্ধি পাবে এটি বোঝা যায়নি। তাদের বর্তমান মূল্য দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই হিমাগারে ছুটে আসেন কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, সংরক্ষিত আলু আগেভাগে বিক্রি করা আইনবিরোধী কাজ। কিছু হিমাগার মালিক নিয়ম ভেঙে আলু বিক্রি করেছেন, এটি অপরাধ। আমরা তদন্ত করছি, প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রয়োজনে লাইসেন্সও বাতিল করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কে এম সাদিকুল ইসলাম, কৃষককে বাঁচাতে কৃষি বিপণন ও প্রশাসনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে প্রতিবছরে যে আলু নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় তা সহজেই সমাধান করা যাব। এ বছর জয়পুরহাটে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি আলু। তা জেলার ২১টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আলো এখনও হিমাগারে আটকে আছে প্রায় ৯০ হাজার টন। সময় শেষের ঘণ্টা বাজলেও, কৃষকের হাতে নেই কোনো নিশ্চিত সমাধান। তাই কৃষকদের দাবি, প্রশাসনের তদারকি জোরদার না হলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।