
নওগাঁ জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে অফ সিজনে বিক্রি করে লাভের আশা করছিলেন। সেই আশা এখন দুরাশায় পরিণত হয়েছে। বাজারদর এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে হিমাগারের ভাড়া পরিশোধের ভয়ে হিমাগার থেকে আলু নিচ্ছেন না তারা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এই বছর আলু চাষ নিয়েও কৃষকরা আছেন নানা শঙ্কায়। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আলুর উৎপাদন বাড়ছে। চলতি বছর জেলায় ২৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ টন আলু। গত বছর ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, কৃষকদের একটি অংশ উৎপাদিত আলু হিমাগারে রাখেন লাভের আশায়।
এই আলু বিক্রি করে তাঁরা পরবর্তী ফসল উৎপাদনের আর্থিক জোগান দেন। ব্যবসায়ীরাও কিনে হিমাগারে আলু রাখেন অফ সিজনে বিক্রি করে লাভের আশায়। তাদের অভিযোগ, উৎপাদন থেকে শুরু করে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়েছে ২৪ থেকে ২৬ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দর ২২ টাকা কার্যকরের সম্ভাবনা না থাকায় এবার চরম দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) হিসাবে, নওগাঁ জেলায় আটটি হিমাগারে এবার সংরক্ষণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার বস্তা আলু। প্রতিটি বস্তার ওজন ৬০ কেজি ধরে সংরক্ষিত মোট আলুর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। নওগাঁর কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পাশের বগুড়া, জয়পুরহাট ও রাজশাহীর হিমাগারেও আলু সংরক্ষণ করেছেন। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা লোকসান ধরলে শুধু নওগাঁর হিমাগারেই ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বদলগাছী উপজেলার কৃষক রাসেল জানান, প্রতি বস্তায় লোকসান হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। বদলগাছী উপজেলার পারসোমবাড়ীর আলু ব্যবসায়ী ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘লাভের আশায় ৭০০ বস্তা আলু কিনে হিমাগারে রেখেছি। প্রতি বস্তায় লোকসান হবে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা।’
একই উপজেলার ভাণ্ডারপুরের কৃষক বাচ্চু মণ্ডল বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। প্রথমে দাম কম থাকায় পরে ভালো দাম পাওয়ার আশায় ১৪০ বস্তা হিমাগারে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তো ওই দামই পাচ্ছি না। পরের বছর আলু চাষ করব কি না এখনও ঠিক করিনি।’ নওগাঁ ইস্টার্ন প্রডিউস কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার সেতু মৈত্র বলেন, ‘হিমাগারে ৭০ হাজার বস্তার ধারণক্ষমতার স্থলে ৭৫ হাজার ৬০০ বস্তা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এযাবৎ মজুত করা আলুর অর্ধেকই রয়ে গেছে। বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু বের করছেন না।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আলু বের করা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। পরে নষ্ট ও পচা আলু নিজ খরচে হিমাগার থেকে অপসারণ করতে হবে। এতে কোটি টাকার ওপর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোমায়রা মণ্ডল বলেন, ‘এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে, তবে দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। দাম না পাওয়ায় আলু কম পরিমাণ বের হচ্ছে হিমাগার থেকে।’