ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অর্ধশত আসনের বিদ্রোহী নিয়ে বিপাকে বিএনপি

অর্ধশত আসনের বিদ্রোহী নিয়ে বিপাকে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে সম্ভ্যাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে বিএনপিতে বাড়ছে দলীয় কোন্দল। অনেক আসনে মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিক্ষোভ করছেন। অনেকে নিষ্ক্রিয় থেকে দলীয় প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলছেন। আবার অনেকে প্রার্থী বদলের জন্য জোর লবিং-তদ্বীর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে দিনদিন মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা বাড়ছে দলটিতে। খুব শিগগির এসব কোন্দল নিরসন না করতে পারলে নির্বাচনের ফলাফলে বিপর্যয় ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির ঘোষিত অনেক আসনে নব্য, হাইব্রিড, বিগত দিনের সুবিধাভোগি, আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ছাড়াও প্রবাসের অনেককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সম্ভ্যাব্য ওই তালিকায় ত্যাগী, যোগ্য আর জনপ্রিয় নেতাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আর এতে ক্ষোভে ফুঁসছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অনেক স্থানেই প্রার্থী বদলের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন তারা। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, কয়েক দফা মাঠ জরিপ, সাংগঠনিক নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে এবারের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এটাই চূড়ান্ত নয়। তফশিল ঘোষণার আগে-পরে এই তালিকায় প্রয়োজন অনুসারে কিছু কিছু পরিবর্তন হতে পারে। তবে কোনো অবস্থাতেই তৃণমূলের কোন্দলকে মেনে নেওয়া হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনে যেতে হবে। এ জন্য যা যা করার দরকার দল তাই করবে। দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে- এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। দলের স্থায়ী যদি কমিটি মনে করে, পার্লামেন্টরী বোর্ড যদি মনে করে, তারা কোন আসনে পরিবর্তন আনবেন- সেটা নিঃসন্দেহে নিয়ম মেনে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন।

দলের এমন সিদ্ধান্তেই মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে কামাল জামান মোল্লার প্রার্থীতা স্থগিত করেছে বিএনপি। বিতর্কিত ওই আসনের প্রার্থীতা স্থগিত করায় অনেক আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আশান্বিত হয়ে উঠেছেন। তারাও একই প্রক্রিয়ায় আন্দোলন শুরু করেছেন। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ২০টি জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক আসনে আসনে এই আন্দোলন চলছে। কোথাও কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম ইকবাল হোসেইনকে পরিবর্তনের দাবিতে গৌরীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তায়েবুর রহমান হিরন। এছাড়া চলছে নবীন আর প্রবীনের মধ্যে লড়াই। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আবার অনেক আসনে মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলেও সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা প্রকাশ্যে কঠোর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না। তবে ভেতরে-ভেতরে ক্ষোভণ্ডদুঃখে ফুঁসছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে- এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়। এটা সম্ভ্যাব্য তালিকা। কোনো এলাকায় তেমন পরিবর্তন মনে করলে অবশ্যই সেটা করা হবে। আর বড় দল হিসেবে প্রত্যেক আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছে। সবকিছু বিশ্লেষণ করেই এই তালিকা করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে সম্ভ্যাব্য মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। নব্বই বছরের ঊর্ধ্বে একজন বয়োবৃদ্ধ এবং অসুস্থ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভে ফুসছেন নেতাকর্মীরা। যিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাচল করতে পারেন না। তারা বলছেন, বিগত ১৭ বছর মুশফিকুর রহমান কানাডা প্রবাসী ছিলেন। ৫ আগস্টের পর দেশে ফেরেন মুশফিকুর রহমান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ আলমের কাছে পরাজয়ের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি তাকে মনোনীত করলেও মনোনয়নপত্রে ভুল করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। সে সময় তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে তার আঁতাতের অভিযোগ ওঠে, যা আজও স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনায় আছে। দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীরা তাকে কাছে পায়নি। এই আসনে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কবির আহমদ ভূইয়ার পক্ষে দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করছেন।

কুষ্টিয়া-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমিকে। আশি বছরের ঊর্ধ্বে বয়সি এই নেতার আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বয়ক শেখ সাদী মনোনয়ন চাইছেন। শেখ সাদী তরুণ প্রজন্ম আর নারী ভোটারদের কাছে টানতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এখানে মনোনয়ন পরিবর্তন না আসলে অঘটন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন খোকসা উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। বিএনপি থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন প্রাপ্ত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের আজীবন সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদ এর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে চাঁদপুর (ফরিদগঞ্জ)-৪ আসনের সর্বস্তরের জনগণ। গত মঙ্গলবার নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি চেয়াপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বরাবর এ দাবি জানায় ফরিদগঞ্জের ৫নং পূর্ব গুপ্টি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

লিখিত আবেদনে মিজানুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির জনমত জরিপের ভিত্তিতে আলহাজ্ব এমএ হান্নানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তখন এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে নিজ হাতে লিখিত মিথ্যা তথ্য দিয়ে চেম্বার জজ আদালতে মনোনয়ন স্থগিতের আবেদন করেন স্বৈরাচারের দোসর হারুনুর রশিদ। চেম্বার জজ আদালত এমএ হান্নানের মনোনয়ন নির্বাচনের তিনদিন আগে স্থগিত করে। নির্বাচনের তিনদিন আগে হারুনুর রশিদ ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। এমএ হান্নান নির্বাচন পরবর্তীতে হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। সেই প্রতারণার মামলায় হারুনুর রশিদ তিন দিন জেল খাটেন।

মানুষের প্রতি এমএ হান্নান সাহেবের আন্তরিকতা এবং ভালোবাসার কারণে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনমতের জরিপের ভিত্তিতে উনাকে ধানের শীষের মনোনয়নে মনোনীত করেন। উনার সঙ্গে ব্যাক অফ হিসাবে আরও দুজনকে দল মনোনয়ন দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও তিন জনের তালিকায় হারুনুর রশিদের নাম না থাকলেও সে পুনরায় স্বৈরাচার সরকারের আমলা এবং তাদের আজ্ঞাবহ কোর্টের সহযোগিতায় এমএ হান্নানের মনোনয়নটি নির্বাচনের একদিন পূর্বে বাতিল করে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। কিন্তু দল যেহেতু এমএ হান্নানকে মনোনয়ন দিয়েছে সেহেতু ২০১৮ সাল পরবর্তী সময়ে এমএ হান্নানের হাতেই ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দায়িত্ব ছিল। দলের এই দুঃসময়ে রাজনৈতিক সব কর্মকাণ্ড উনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, হারুনুর রশিদ কখনো রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই, একদিনও রাজনৈতিক মামলায় জেল খাটেননি, সেই লায়ন হারুন কিভাবে দল থেকে প্রাথমিক মনোনয়নে মনোনীত হলো দলের নিবেদিত প্রাণ মানুষগুলো জানতে চায়। লিখিত আবেদনে মিজানুর আরও বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে আম মার্কা নিয়ে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, পরে সেই নির্বাচন আর হয়নি। আওয়ামী সরকারের সময় বিগত দিনে লীগের সহযোগীতায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে দেশে-বিদেশে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে হারুনুর রশিদ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে নিজের নামে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিও করেছে। এখনও সে নানাভাবে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে হারুনুর রশিদের মনোনয়ন বাতিল করে এমএ হান্নানকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানান।

মাগুরা-২ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকে। তার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। একপাশে নিতাই রায় অন্যদিকে সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামালর সমর্থকরা। এরমধ্যে এই আসনের মোহাম্মদপুর, শালিথা ও সদর উপজেলার ১৭১টি ওয়ার্ড বিএনপির ৫০১ জন নেতাকর্মী নিতাই রায় চৌধুরীর প্রার্থীতা বাতিলের দাবি জানিয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা-৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে নবীউল্লাহ নবীকে। তাকে নিয়ে একদিকে যেমন বিতর্ক রয়েছে তেমনি বয়সের হিসেবও ভাবাচ্ছে দলকে। এই আসনের প্রার্থী বদলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম কিংবা যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে দেওয়া হতে পারে বলে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে। নৈতিক চরিত্রের অধঃপতনের একাধিক ভিডিও চিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ায় নেত্রকোনা সংসদীয় আসন নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা উপজেলা) বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রাথমিক সম্ভাব্য ঘোষিত প্রার্থী আবু তাহের তালুকদারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের শুরুতেই নেত্রকোনা জেলা শহরে ‘আইটিসিএল’ লুট করার অপরাধে জেলা সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় আবু তাহের তালুকদারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৬ সালে সংসদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে কাঁঠাল প্রতীকে নির্বাচন করেন তিনি। এছাড়াও ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ক্ষমতাসীনদের সহযোগী ও দোসরদের অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসন, বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দেওয়া, কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করে অন্য রাজনৈতিক দলের উপর তার দায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা এবং নিজের বিএনপির সম্ভাব্য এই প্রার্থী গেল বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন অসাধু উপায়ে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক বনেছেন।

চট্টগ্রাম-১২ আসনে ৫ আগস্টের পর এস আলম গ্রুপের গাড়িকাণ্ডে দল থেকে বহিস্কৃত ও বিতর্কিত নেতা এনামুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে দল। যদিও বহিষ্কারের কয়েক মাসের মধ্যে লবিং-তদ্বীরের চাপে তার সাংগঠনিক শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়। নেতাকর্মীরা জানান, এস আলম পরিবারের তদ্বীরেই এনামুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ থাকলেও তা আমলে নেয়নি দলের হাইকমান্ড। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে মতামত দিচ্ছেন। এই আসনে বিগত আওয়ামী আমলে গুমের শিকার সৈয়দ সাদাত আহমেদের মতো উচ্চ শিক্ষিত, মার্জিত আর কর্মীবান্ধব নেতাকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতাকর্মীরা। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট রাতে নগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকার (বিসিক) মীর গ্রুপের ওয়্যারহাউস থেকে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। গাড়িগুলো ছিল এস আলম গ্রুপের। এ ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনামকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে স্থগিত করা হয়। বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা অভিযোগ করেন, এনামুল হক আওয়ামী লীগ আমলে চাল ব্যবসায়ী হিসেবে আঁতাত করে ব্যবসা ও রাজনীতি করেছেন। তাদের অভিযোগ, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে যখন সাধারণ কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছেন, তখন এনাম ছিলেন সুবিধাভোগী।

গাইবান্ধা-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থি নেতা ও সাবেক এমটি মোহাম্মদ শামীম কায়সার লিঙ্কনকে। তার মনোনয়নকে মানতে পারছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এই আসনের আরেক জনপ্রিয় প্রার্থী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদকে মনোনয়ন না দিলে এই আসনটি হাতছাড়া হবে বলে আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।

নরসিংদী-৪ আসনে বিএনপির সম্ভ্যাব্য প্রার্থী হিসেবে সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। সাবেক এই এমপি ওয়ান ইলেভেনে সংস্কারপন্থি ছিলেন। জিয়া পরিবারকে নিয়ে কটুক্তি করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিগত বছরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সখ্যতা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন তার আত্মীয় ছিলেন। ফলে বিগত দিনে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা-হামলা এমনকি কারাগারেও যেতে হয়নি। এখানে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বছরের পর বছর কাজ করছেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। মামলা-হামলায় জর্জরিত এই নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ।

শূন্য আসনের ভাবনায় নেতাকর্মীরা : টাঙ্গাইল-৫ আসনে কোন প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এই আসনে কোন জোটের সম্ভ্যাব্য প্রার্থীও নেই। তারপরও কেনো এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি তা নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এই আসনে হেভিওয়েট আর জনপ্রিয় নেতা হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, দলকে সংগঠিত করছেন, সাধারণ মানুষের কাছে দলকে নিয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আসন ফাকা রাখায় যেমন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি হতাশাও কাজ করছে তাদের মধ্যে।

সদর থানা বিএনপির এক নেতা বলেন, তাদের প্রতিপক্ষ জামায়াত যেখানে এক বছর আগে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছে সেখানে টাঙ্গাইল সদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনটি ফাকা রেখেছে বিএনপি। এতে নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন তারা। সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু শুধু এই আসন নয়, পুরো জেলায় সমাদৃত আর অধিক জনপ্রিয়। তার মতো নেতার আসন ফাকা রাখায় তারা হতাশ।

একইভাবে ঝিনাইদাহ-৪ আসনে ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এলাকায় এবারের নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে এই আসনের প্রার্থীও ফাকা রাখা হয়েছে। কেনো এটা করা হয়েছে তা নিয়ে হতাশ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এসব বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এখানে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব না। যারা মনোনয়ন পাননি তাদেরকে দল অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে।

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে বিএনপির প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের ছোট মেয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দিয়েছে দল। কিন্তু তার আপন বড় ভাই ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন তার বোনের প্রার্থীতা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বিগত বছরগুলোতে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা কিংবা নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে কাজ করেছেন। তবে প্রভাবশালীদের আশীর্বাদে পুতুলকেই বেছে নেয় দল। ফলে ত্রিধরায় বিভক্ত এই আসনের নেতাকর্মীরা। আরও বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়ন নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকলেও তা সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেয়নি। তবে কোন্দলও মেটেনি। যার যার অনুসারী নিয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত