
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি হাসপাতালের পরিকাঠামো ও জনবল সংকটে সৃষ্টি হয়েছে দুর্বিষহ অবস্থা। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী চিকিৎসক রয়েছে। একই সময়ে ৭৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি, অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭৭৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৮৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ১২১ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১২৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮১ জন, খুলনা বিভাগে ১১২ জন (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে), ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৯ জন ও সিলেট বিভাগে ৭ জন ভর্তি হয়েছেন। এদিকে গত একদিনে সারা দেশে এক হাজার ১১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৪৪২ জন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৯০ হাজার ২৬৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬৪ জনের।
এদিকে কুমিল্লায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গাইনি চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা আজিম কাকলীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃতের বড় ভাই মনজুরুল আজীম পলাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কয়েক দিন আগে কাকলী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এ সময় তার কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে শনিবার তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে তার রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে আইসিইউ থেকে ভেন্টিলেশনে স্থানান্তর করা হয়। রাতভর চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও গতকাল রোববার সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ডা. কাকলীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কুমিল্লায়। রোগী, সহকর্মী, স্বজন-সবার মুখেই বিষাদের ছাপ। মানবিক চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত কাকলী বিনামূল্যে বহু দরিদ্র রোগীর সিজার করিয়েছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি ছিলেন অধুনা থিয়েটারের সদস্য। গান শুনতে ও প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন তিনি। স্বজনরা জানান, তার লাশ আপাতত হিমঘরে রাখা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত একমাত্র কন্যা তুর্ণা দেশে ফিরলে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে। ডা. ফাহমিদা আজিম কাকলী কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং নগর মাতৃসদন কুমিল্লার কনসালট্যান্ট ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় এবং ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।