ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আসন সমঝোতা নিয়ে আট ইসলামি দলে তোড়জোড়

আসন সমঝোতা নিয়ে আট ইসলামি দলে তোড়জোড়

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে তৎপরতা চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এরইমধ্যে কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। দৃশ্যত, একক আসনে ‘ইসলামি দলগুলো থেকে একজন প্রার্থী’ দেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছেছেন তারা। এখন কোন দলকে কতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে- এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্র বলছে, আগামী ডিসেম্বরের শুরুতেই ইসলামি দলগুলো আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে রয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এককভাবে নির্বাচন করলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া কঠিন- এই বিবেচনায় ইসলামি রাজনৈতিক শক্তিগুলো আসন সমঝোতার কৌশল নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আঞ্চলিক প্রভাব, সাংগঠনিক সক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে আসন বণ্টনের প্রস্তাব তৈরি করছে সংশ্লিষ্ট দলগুলো। কয়েকটি দলের নেতা জানান, আলোচনার মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ আসন বণ্টন নিশ্চিত করতে পারলে ইসলামভিত্তিক দলগুলোর সম্মিলিত শক্তি নির্বাচনি মাঠে দাপট দেখাতে পারবে।

ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। এরইমধ্যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন ও জুলাই সনদকে আইনিভিত্তি দেওয়ার দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা সাতটি দল নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে- দলগুলোর মধ্যে খুব শিগগিরই ‘আসন সমঝোতা’ নিয়ে বৈঠক হবে। চলতি বছরের শুরুতেই জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে নির্বাচনি অঙ্গনে চমক সৃষ্টি করেছে। অন্য সাত দলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন ছাড়তে চায় দলটি। জোটের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরেই তারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কাজ করছেন। তবে জামায়াত কতটি আসন ছাড়বে- এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।

শরিকদের আসন সমঝোতা : জামায়াত শরিকদের জন্য আসন ছাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চায়। এর অংশ হিসেবে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আনলে জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনি কমিটিতেও পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে শরিকদের সিদ্ধান্ত ও প্রার্থীদের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, জুলাই সনদ ও জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সমমনা সাত দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে জামায়াত। শরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় আসন ছাড়বে দলটি। পাশাপাশি নারী, অমুসলিম, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, জুলাই যোদ্ধা ও ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, জামায়াত যেমন সবার আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তেমনি তাদের বিজয়ী করতে কর্মীরাও এরইমধ্যে সারা দেশে কাজ শুরু করেছে। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্টও ঠিক করা হয়েছে। প্রথম দফার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে; জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণ চলছে। শরিকদের জন্য আসন ছাড়লে কিছু পরিবর্তন আসবে বলে তিনি জানান।

ডিসেম্বরে প্রার্থী চূড়ান্ত : প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সময় ঘনিয়ে আসায় ডিসেম্বরের মধ্যেই ইসলামি দলগুলো আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে চায়। এখন চলছে আসন ভাগাভাগির আলোচনা। বিভিন্ন দল নিজেদের সম্ভাব্য আসন চাহিদা জানালেও তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কোন দল কত আসনে প্রার্থী দেবে- এ নিয়ে আলোচনা ও দরকষাকষি শীর্ষ পর্যায়ে অব্যাহত রয়েছে।

গত অক্টোবর খুলনার এক সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আসন সমঝোতা করতে করতে শেষ পর্যন্ত আমাদের ১০০ আসনও ছেড়ে দিতে হতে পারে। তবে কমপক্ষে ২০০ আসনে আমরা নির্বাচন করব।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, তাদের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। তারা আট দলের সঙ্গে আন্দোলন করছেন। তবে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে কি না- এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগিরই নীতি-নির্ধারকদের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার বলেন, দলীয় প্রার্থী তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে ১০০ আসনে নির্বাচন করতে প্রস্তুত। চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

২০০ আসন চায় ইসলামী আন্দোলন : কওমি মাদ্রাসা ও তাবলিগের বড় অংশের সমর্থন নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয়। আট দলীয় প্ল্যাটফর্মে সংখ্যাগতভাবে বড় দল জামায়াতে ইসলামী হলেও ইসলামী আন্দোলনও সমানসংখ্যক আসন চাইছে বলে জানান দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা বাড়তে-কমতে পারে। তাদের মতে, ৩০০ আসনের জন্যই প্রস্তুতি রয়েছে; প্রায় ২০০ আসনে নিজেদের অবস্থান শক্ত মনে করছে দলটি।

মহাসচিব ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘তাদের প্রায় ১৫০ আসনে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, কত আসন পাব। যেখানে প্রার্থী দেওয়া হবে, আট দলের কর্মীরাই একসঙ্গে কাজ করবে।’ দলের অভ্যন্তরীণ প্রার্থী নির্বাচন প্রায় শেষ হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে জোটগত আলোচনার ওপর।

১০০ আসন চায় খেলাফত মজলিস : মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ জানান, তাদের প্রার্থী তালিকা প্রায় প্রস্তুত এবং আট দলীয় প্ল্যাটফর্মের কর্মসূচিতেও সক্রিয় রয়েছে। তবে জোটগতভাবে নির্বাচন করবে কি না- এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগিরই নীতি-নির্ধারকদের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তাদের ন্যূনতম লক্ষ্য ১০০ আসন। দলটির অভ্যন্তরে ২৭৪টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীও প্রস্তুত আছে। আট দলের সমন্বয় সভা শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত