
ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন, প্রশাসনিক ক্যু করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, কোনো দেশপ্রেমিক দল চাঁদাবাজ হয়ে ৫ তারিখের পর আবির্ভূত হয়নি। যারা আবির্ভূত হয়েছিলেন, দায় এবং দরদ নিয়ে তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। এটি শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, এটা বন্ধ করতে হবে। যদি বন্ধ করা না হয় বিপ্লবী জনগণ, তরুণ জনতা, কোলে বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ওই মায়েরা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন না। বন্ধ করা হয়নি, চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। প্রশাসনিক ক্যু করার চেষ্টা করছেন। আগামী নির্বাচনে ছলে-বলে কৌশলে, কেউ কেউ আমরা শুনতে পাই বিভিন্ন জায়গায় বসে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। জনগণ ভোট দিক আর না দিক ক্ষমতায় আমাদেরকে যেতে হবে। বন্ধুগণ বেলা শেষ, দিনও শেষ। সূর্যও ডুবে গেছে। এ বাংলাদেশে এটা হবে না, এটা আমরা হতে দেব না ইনশাআল্লাহ। গতকাল সোমবার বিকেলে খুলনা মহানগরীর শিববাড়ী বাবরী চত্বরে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম।
শফিকুর রহমান বলেন, দিশাহারা হয়ে, হতাশ হয়ে, ক্ষব্ধ হয়ে চোরা গলিতে কেউ যদি হাটার চিন্তা করেন, তাহলে প্রয়োজনে আরেকটা ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। যেই ৫ আগস্ট সন্ত্রাসকে, ফ্যাসিস্টবাদকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, সেই ৫ আগস্ট প্রয়োজনে আবার রুখে দেবে- ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতের আমির বলেন, কিছু দল এবং ব্যক্তি বাংলাদেশকে দফায় দফায় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে বিশ্বের দরবারে অপমাণিত করেছে। এদের সকলের অতীত রেকর্ড বাংলাদেশের জনগণের হাতে আছে। এমনকি দুঃখের বিষয় সকল ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি, বৈষম্য, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বিপ্লবের পরের দিন থেকে একটা গোষ্ঠী নিজেদের কপাল, কিসমত গড়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আজ চাঁদাবাজদের দৌরাত্নে্য সমাজ জীবন অতিষ্ঠ, তটস্থ। ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কেউ শান্তিতে নেই। আগের চেয়ে চাঁদার রেট বেড়ে গেছে বলে তারা সকলে বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলেন। তারা বলেন আগেও ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ। সমাবেশের এক বক্তার বক্তব্যের বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ৫ তারিখের পর আল্লাহ তাআলা আমাদের এ দেশে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং মুক্তির একটু স্বাদও দান করেছেন-আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু কোনো ইসলামী দলের নামে আজকে চাঁদাবাজির পরিচয় তাদের কপালে জুড়ে দেওয়া হয়নি।
জামায়াতের আমির বলেন, এখন থেকে ছাত্র-জনতার, শ্রমিক জনতার, ব্যবসায়ী জনতার, শিশু থেকে বৃদ্ধ সমস্ত মানবতার ঐক্য আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। এই ঐক্যই আগামী দিনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বিজয়ীর বেশে যাবে। এ বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না-ইনশাআল্লাহ। কারণ আমরা আছি মজলুমের পক্ষে, অপশাসনের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে, আমরা আছি আল্লাহর দেওয়া কুরআনের বিধানের পক্ষে। এ বিজয় আমাদের হবে- ইনশাআল্লাহ।
শফিকুর রহমান বলেন, কেউ কেউ জাতির মধ্যে হিংসা সৃষ্টি করে, জাতিকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করতে চায়। চিংড়ি মাছের মতো কেউ কেউ পেছনে দৌড়াতে চায়। চিংড়ি যখন দৌড়ায় সামনের দিকে পথ খুঁজে পায় না, পেছনের দিকে যায়। কেউ কেউ ৭২ এর সংবিধান নিয়ে কামড় দিয়ে পড়ে থাকতে চান। আমাদের বন্ধুদের মাঝে দীর্ঘদিন একসাথে আন্দোলন-সংগ্রাম, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, তাদের কাউকে কাউকে আমরা সে কথা বলতে শুনি। মনে রাখবেন, বাংলাদেশে প্রথম দুঃশাসনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওই সংবিধানকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। এখন যদি কেউ ৭২ এর সংবিধানের কথা বলেন কার্যত তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। আজ যিনি অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় আছেন, জাতির এক শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দুতে যার অবস্থান বেগম খালেদা জিয়াও কখনো ৭২ এর সংবিধানের পক্ষে কথা বলেননি। আমরা আশা করবো যারা এই দুইজনকে ভালোবাসেন তারা আর ভুলেও ৭২ এর এই ফ্যাসিবাদি সংবিধানের কথা বলবেন না। তিনি বলেন, সারাদেশে জনগণের ব্যাপক ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। এই ভালোবাসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মনের জ্বালায় অনেকে আমাদের ব্যানার ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারগুলো ছিঁড়ে খান খান করে ফেলছেন। বন্ধুগণ টের পাননি জনগণ আজকে আর গাছের পোস্টার, লাইটপোস্টের পোস্টার, রাস্তার ওপর দড়ি দিয়ে সাটানো পোস্টার দেখে সিদ্ধান্ত নেয় না। আজকে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। যাদেরকে তারা ভালোবেসেছে তাদেরকে বুকের ভেতরে পোস্টার হিসেবে স্থায়ীভাবে স্থাপন করে দিয়েছে। রাস্তার পোস্টার ছিঁড়তে পার বা, বুকের পোস্টার ছিঁড়তে পারবা না। ওই পোস্টার ছেঁড়া-ছিঁড়ি করে কোনো লাভ নেই। তরুণ-যুবকদের উদ্দেশ্যে জামায়াতের আমির বলেন, যাদের বয়স ৩৫ কিংবা তার নিচে, ৩টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারোনি। অর্থাৎ সারা জীবনে একটা ভোট দিতে পারোনি। আগামীতে তোমাদের ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক, কেউ চুরি করুক, কেউ তোমাদের ভোট হাইজ্যাক করুক, তোমরা কি তা বরদাস্ত করবে? আমরা তোমাদেরকে কথা দিচ্ছি- তোমাদের ভোটের পাহারাদারী করার জন্য আমরাও যুবক হয়ে তোমাদের সাথে একইসাথে লড়বো- ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না। আমরা ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। আমরা কোনো দল বিশেষের বিজয় চাই না। আমরা মজলুম জনগণের বিজয় চাই। আল্লাহর কুরআনের বিজয় চাই। ৫ দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রড়াই চলবে।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা জনগণের জন্য দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ন্যায়বিচার সকলের জন্য এবং পাশাপাশি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি। তাঁবেদার নয়, স্বাধীন রাষ্ট্রের যে পররাষ্ট্রনীতি আমরা ঘোষণা করেছি, তা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে। যুবক-যুবতীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমরা যুবক-যুবতীদের কথা দিচ্ছি বাংলাদেশ তোমাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন করেছি। তোমরা তৈরি হও, এই বাংলাদেশ তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই।
ব্যর্থ হলে ইন্টেরিম সরকারকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না- মামুনুল হক : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে দেখতে পারছি, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্তি। ৭২ বাকশালপন্থি আর একভাগ ২০২৪ সালের বিপ্লবপন্থি শক্তি। তিনি বলেন, রক্তের সাগর পেরিয়ে ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর যেই ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে আসবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কার্যকরে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে এই মাহাত্বকে নষ্ট করবেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হোক। সোমবার খুলনা মহানগরীর ঐতিহাসিক বাবরী চত্বরে (শিববাড়ী মোড়) জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ব্যর্থ হলে ইন্টেরিম সরকার ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। কলঙ্ক নিয়ে আপনাদেরও বিদায় নিতে হবে। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি-বিডিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রমুখ।