
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। যাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জন হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দিনটি বাংলাদেশের জন্য ছিল অস্থিরতা আর উদ্বেগের। আর লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন ৪ ডিসেম্বর। কারণ, ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্পে রাজাকারদের রেখে কৌশলে নোয়াখালীর চৌমুহনীর দিকে পালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর সকালে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই লক্ষ্মীপুর সদরের অবরুদ্ধ মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ, বিজয়ের আনন্দ। মুক্তির আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন মানুষ। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে রাজাকাররা।
এদিন বাংলাদেশের সব রণক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় হানাদার বাহিনী সর্বত্র পিছু হটছিল। পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ক্রমেই পঙ্গু হয়ে পড়ছিল। সীমান্ত শহর দর্শনা সম্মিলিত বাহিনীর দখলে চলে আসে। এদিন মিত্র সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী বাংলাদেশে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। চতুর্দিক থেকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এগিয়ে আসে। ঢাকা চট্টগ্রাম করাচি-শত্রুর ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে চলে বোমাবর্ষণ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আকাশে চলে জোর বিমানযুদ্ধ। লক্ষ্মীপুরের পাশাপাশি ৪ ডিসেম্বর রাতে আখাউড়াতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহনীর প্রচণ্ড গুলিবিনিময় হয়, যাকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘এক্সেঞ্জ অব স্মল আর্মস ফায়ার’। ৪ ডিসেম্বর সারা রাত যুদ্ধের পর ৫ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। মূলত ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল পেট্রম খান দলবলসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। সেদিন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি অংশ আত্মসমর্পণ করে, কিছু সৈন্য গুলি খেয়ে মারা যায়, কিছু সৈন্য আখাউড়া রেললাইন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। কিছু সৈন্য তিতাস নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়।