ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১০ সেনা কর্মকর্তার ভার্চুয়ালি হাজিরার আবেদন খারিজ

১০ সেনা কর্মকর্তার ভার্চুয়ালি হাজিরার আবেদন খারিজ

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার আসামি ১০ সেনা কর্মকর্তার ভার্চ্যুয়ালি হাজিরার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের শুনানির জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল বুধবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। যে ১০ আসামির পক্ষে ভার্চ্যুয়াল হাজিরার আবেদন করা হয়েছিল, তারা হলেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম ও কে এম আজাদ; কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে); লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান, সাইফুল ইসলাম সুমন ও মো. সারওয়ার বিন কাশেম। তারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাদের গতকাল ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করে রাখার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৭ জন। শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ এ মামলার ৭ আসামি পলাতক।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই বিচার নয়- চিফ প্রসিকিউটর : আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে র‍্যাবের টিএফআই সেলে বিরোধী মতাদর্শের লোকদের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার চলছে সেটি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে গুমের মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, র‍্যাবের যেসব কর্মকর্তাকে এখানে আসামি করা হয়েছে তাদের ভার্চ্যুয়ালি শুনানির সুযোগ দিতে একটি আবেদন করেছিলেন একজন আইনজীবী। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে এই বিচারকে মুখোমুখি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা এই শুনানির সময় আমরা লক্ষ্য করেছি। তাজুল ইসলাম বলেন, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন যে এই বিচার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আমরাও সুস্পষ্টভাবে বলেছি, এটি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচার নয়। কারণ, সামরিক শৃঙ্খলার বাইরে থাকা অবস্থায় আসামিরা এসব মারাত্মক অপরাধ করেছেন। তখন তারা র‍্যাবে ছিলেন। এ সব অপরাধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলা হয়। সুতরাং তাদের পক্ষে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রার্থনা খারিজ করেছেন আদালত। আদালত বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিকই সমান। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো গুরুতর। তাই সবাইকে সমান সুবিধা দেওয়া হবে। বিচারের সাজাপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা ইনোসেন্ট বিবেচিত হবেন। কিন্তু আসামি হিসেবে অন্যরা যে ধরনের সুবিধা ভোগ করেন, এর বাইরে নতুন কিছু পাবেন না তারা। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে র‍্যাবের টিএফআই সেলে বিরোধী মতাদর্শের লোকদের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেছে প্রসিকিউশন। তবে আসামিপক্ষে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। সময় চাওয়ার প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে বুধবার সকাল ১০টার পর ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান লেখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সবুজ রঙের গাড়িতে করে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ।

পান্নার পরিবর্তে হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হলেন আমির হোসেন : আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হলেন মো. আমির হোসেন। এই দুই মামলায় হাসিনার আইনজীবী থেকে জেড আই খান পান্না নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে এই নিয়োগের আদেশ দেন। গুমের এই দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হতে চাইলে, গত ২৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ জেড আই খান পান্নাকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে, পরবর্তীতে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হবেন না বলে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠান। গতকাল বিষয়টি জেনে ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে আসতে বলেন। এরপর এই আইনজীবী এসে তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরে, নিজেকে শেখ হাসিনার আইনজীবী থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ গুমের এই দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন। গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। এ সময় অপর প্রসিকিউটর ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

তলবাদেশে হাজির হয়ে ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জেডআই খান পান্না : গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জেডআই খান পান্না হাজির না হওয়ায় তাকে তলব করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। এদিন প্রথমেই প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানির এক পর্যায়ে স্টেট ডিফেন্সের আইনজীবী জেডআই খান পান্নাকে ফোন করে আসতে বলেন ট্রাইব্যুনাল। ঠিক ১০ মিনিট পরই হুইলচেয়ারে করে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন আইনজীবী পান্না। এ সময় প্রসিকিউশনের শুনানি থামিয়ে আইনজীবী পান্নার বক্তব্য শুনতে চান ট্রাইব্যুনাল। সুস্থ আছেন কিনা জানতে চেয়ে তার উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়োগ পেয়েছেন। আপনি আসেননি কেন? আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি করতে হয়েছে। চাইলে আবার হবে। জবাবে জেডআই খান পান্না বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তবে এ মামলায় না দাঁড়ানোর জন্য আমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনার ক্লায়েন্ট হাজির হবেন না। আপনিও আসবেন না। আপনি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছেন আইনজীবী হওয়ার জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অর্ডার দিয়েছি। আপনি না করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে এসে বলতে হবে।

এছাড়া আপনি এক ভিডিও বার্তায় ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, আপনার ক্লায়েন্ট এই আদালত মানেন না। এ জন্য আপনিও মানেন না। এটা কী আপনি বলতে পারেন? জেডআই খান পান্না বলেন, আমি আনকনডিশনালি অ্যাপোলজি (নিঃশর্ত ক্ষমা) চাই। পরে এ মামলায় তিনি লড়বেন কিনা তা পুনরায় জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। তখনও ‘না’ জবাব দেন তিনি। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আশা করবো, আপনার কাছ থেকে সহায়তা পাবো। একইসঙ্গে তার বদলে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে পরামর্শ চান ট্রাইব্যুনাল। তবে কারও নাম না বলায় মো. আমির হোসেনকে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগেও শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত