ঢাকা সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আসন বণ্টনের হিসাব শেষ চূড়ান্ত তালিকা আজ-কাল

আসন বণ্টনের হিসাব শেষ চূড়ান্ত তালিকা আজ-কাল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং সমমনা আট দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে কয়েক ধাপে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়েছে। সংসদীয় আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে দলগুলো। শিগগিরই চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এবারের নির্বাচনের জন্য একটি সমন্বিত ও ভারসাম্যমূলক প্রার্থী তালিকা করছে দলগুলো। আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতার মাধ্যমে সবকিছু হচ্ছে। এমনভাবে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে, যাতে সমাজের সব মহলের প্রতিনিধিত্ব থাকে এবং মানুষ যাতে ওই প্রার্থীদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। সেটা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হোক বা অন্য দলের প্রার্থী হোক। প্রার্থীদের জিতিয়ে আনাকে মূল টার্গেট হিসেবে দেখছে দলগুলো। তাই শরিকদের আসন দেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতকে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের এলাকায় তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছে না জামায়াতে ইসলামী এবং অন্য দলগুলো।

লিয়াজোঁ কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, অনেকটা কৌশলগত কারণে কোনো কোনো দল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আসনের তালিকা দিয়েছে। তিনি জানান, আট দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী থাকবে। তাদের আসনসংখ্যা ২০০-এর কাছাকাছি হতে পারে। আর শরিক দল হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির প্রার্থী ৫৫-এর কাছাকাছি। খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে ২৫টির কাছাকাছি আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। খেলাফত আন্দোলনের ৯টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ৫টি, জাগপার ৪টি এবং বিডিপির ২টি আসন থাকতে পারে।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনও চলছে জোট ও আসন বণ্টন নিয়ে টানাপড়েন। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রথমে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত সমমনা আটটি ইসলামভিত্তিক দলের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। বড় দল হিসেবে জামায়াতের সবচেয়ে বেশি প্রার্থী থাকবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দলগুলোর অবস্থানের ওপর প্রার্থীসংখ্যা নির্ধারিত হবে। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল জলিল বলেন, এখানে আসন সমঝোতা হবে। কোনো দলের নেতৃত্বে নয়, আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করছি। প্রার্থী জিততে পারবে কি না এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি। তবে দলগুলোর অবস্থান বিবেচনা নিয়ে প্রার্থী সংখ্যা নির্ধারিত হবে। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা জানা যাবে।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার বলেন, ‘আমাদের পার্টি টু পার্টি আলোচনা চলছে। এরপর সামগ্রিক আলোচনা হবে। এরপরই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। আজ-কালকের (সোমণ্ডমঙ্গল) মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। সমঝোতার মাধ্যমে সবকিছু হচ্ছে। সবার মধ্যেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রয়েছে। ফলে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’

ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জামায়াত ও তার সমমনা দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এরইমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের সমমনা দলগুলোর কাছ থেকে প্রার্থীদের তালিকা হাতে পেয়েছে জামায়াত। তালিকা নিয়ে দলগুলো কয়েক দফা বৈঠক করেছে। সূত্র জানায়, লিয়াজোঁ কমিটি দু-একদিনের মধ্যেই প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করতে পারে।

গত শনিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত তফসিলে রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে প্রার্থীদের আপিলের সময় ৫-১১ জানুয়ারি পরিবর্তন করে ৫-৯ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আপিল নিষ্পত্তির সময় দুইদিন বাড়ানো হয়েছে। ১২-১৮ জানুয়ারির পরিবর্তে ১০-১৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল ২৯ ডিসেম্বর শেষ হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সমমনা ইসলামি দলগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে উদ্যোগ নেন এবং সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মনোভাব দেখান। ফলে সমমনা ইসলামি আটটি দল অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, আসন সমঝোতার খুব কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে। আসন বণ্টন সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, বরং যেখানে যাকে দিলে বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি, সেই বিবেচনায় প্রার্থী ঠিক করা হবে। ইসলামপন্থিদের সব ভোট এক বাক্সে আনার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জানিয়েছে, তারা ১২০টি আসনে প্রার্থী দিতে আগ্রহী। দলটির মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, আটটি দল কার্যত এক দল হিসেবেই কাজ করছে। যে দলের প্রার্থীই হোন না কেন, যিনি জয়ের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবেন তাকেই প্রার্থী করা হবে। খেলাফত মজলিস ৩০টি আসনে প্রার্থী দিতে চায় বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, আসন চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা সাপেক্ষেই সিদ্ধান্ত হবে। অন্যদিকে খেলাফত আন্দোলন ২০টি আসনে প্রার্থী দিতে চায়। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি কমপক্ষে ১০টি করে আসনের দাবি জানিয়েছে। সব মিলিয়ে সাতটি দলের দাবি প্রায় ২২০ আসন। আরও দুই-তিনটি দল যুক্ত হলে জামায়াতে ইসলামীর জন্য কতটি আসন থাকবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আট দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাঠ জরিপের ভিত্তিতে কোন দল কোন আসনে বেশি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন, তার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যের স্বার্থে সব দলই সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা প্রকাশ করেছে। লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলামি দলগুলো যেন সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে সংসদে যেতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত