
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জুলাই যোদ্ধাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে সমঝোতার ঘোষণা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে সমঝোতা আলোচনা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। একাধিক বৈঠকের পর দুই পক্ষই মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সমঝোতার আওতায় আসন সমন্বয়, নির্বাচনি কৌশল এবং যৌথ রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকছে। শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। এতে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে কলেবর বাড়তে পারে ইসলামী আট দলীয় জোটের। চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দু-একদিন। মনোনয়ন উত্তোলনের শেষ দিন পর্যন্ত সমঝোতা না হলে প্রত্যাহারের আগেই দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা হবে বলে জানান নেতারা।
নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার এবং নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত সেপ্টেম্বর থেকে রাজপথে সরব ইসলামী আন্দোলন, জামায়াত ও খেলাফত মজলিসসহ আট দল। আন্দোলনের ঐক্যকে নির্বাচনের মাঠে কাজে লাগাতে দলগুলোর মধ্যে আসনভিত্তিক সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। দু-একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তে আসছে পরিবর্তন।
আট দলের নেতারা বলছেন, এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দল তাদের সঙ্গে নির্বাচনি আসন সমঝোতায় ইচ্ছুক। এসব দলের আগ্রহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আট দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
জামায়াতসহ ইসলামী আট দল ও এনসিপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি কেমন হবে- তা নিয়ে দড়ি টানাটানি অব্যাহত রয়েছে। তবে এনসিপি নেতারা বলছেন, জোট নিয়ে টানা বৈঠক চলছে। ৫০টির অধিক আসন চাচ্ছে এনসিপি। কিন্তু জামায়াত নেতারা বলছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে জরিপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। মিত্রদের এমন আসন ছাড়া হবে না- যেখানে ওই মিত্রদের পরাজয় নিশ্চিত। মিত্রদের জয় নিশ্চিত, এমন আসন ছাড়া হবে।
এনসিপির সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত ৮ দলের সমন্বয়ক ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ। এছাড়া আরও ডজনখানেক দল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক ইসলামি শক্তি। সবাইকে ইনক্লুড করেই জুলাই সনদের যে সংস্কারের হ্যাঁ-না ভোট আছে সেটাকে বিজয় করা এবং আসন বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠন ও দেশ গড়ার কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।’
এনসিপির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নাম প্রকাশ না করে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি জোট করার বিষয়ে আমাদের দলে রেজুলেশন পাস হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য সভাপতি ও সেক্রেটারিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির যুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আটদলের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ সংশ্লিষ্টদের আসন সমঝোতার আলোচনা চলার মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে দলটি। এতে সবারই আসন ছাড় দিতে হবে।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ বলেন, আট দলের সঙ্গে এনসিপিও আসতে চাচ্ছে বলে শুনেছি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। দলটির একজন সহকারী মহাসচিব বলেন, জুলাইযোদ্ধাদের দল হিসেবে এনসিপি আটদলের সঙ্গে এলে সবাইকেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির একটি বোঝাপড়া সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে এনসিপি বড় দল হিসেবে বেশি আসন চায়। পাশাপাশি আগে থেকে জামায়াত প্রায় ২০০টি আসনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একজন কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা জানান, জামায়াতের সঙ্গে মজলিসের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। এতে কয়েকটি দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে মজলিসের পক্ষ থেকে আসনবণ্টন, এনসিপির সঙ্গে জোটের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আটদলীয় জোটের আসনবণ্টন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জামায়াত এককভাবে প্রায় ২০০টি আসনে নির্বাচন করতে চায়। ইসলামী আন্দোলন চায় ১২০টি আসন। এক্ষেত্রে অন্য ছয়টি দলের কী হবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অন্তত ৩০টি আসনে নির্বাচন করবে। গত মঙ্গলবার জামায়াতের প্রভাবশালী একজন নেতার সঙ্গে এনসিপির কয়েকজন নেতার বৈঠক হয়। এনসিপির একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, এনসিপি নিশ্চিতভাবে জোট করেই নির্বাচনে যাবে। জামায়াতের সঙ্গেও আলোচনা আছে। তবে নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করতে পারব না। আমরা জোটগতভাবেই নির্বাচন করব। আমাদের ভিন্ন ভিন্ন টিম এসব নিয়ে কাজ করছে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘অনেক দলের সঙ্গে আমাদের আলাপ হচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে এনসিপির সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। একটা চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে আমরা যাচ্ছি।’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, এনসিপিসহ আরও দুটি পার্টি এলে আমি এটাকে পজিটিভলি দেখি। কারণ এতে করে আমাদের এ প্ল্যাটফর্মটা বড় হবে। নতুন দলগুলোর জন্য যেকোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত আছে জানিয়ে আটদলের নেতারা বলেন, অভ্যুত্থানের চেতনা সমুন্নত রাখতে ঐক্যবদ্ধ জোটকে আগামী সংসদে পাঠাবে ইসলামপ্রিয় মানুষ।
জালালুদ্দীন আহমদ আরও বলেন, ‘তারা যদি আসে, আর এতে যদি আমাদের আসন কমও হয়, তাতে আমরা অসন্তুষ্ট না। বরং আমি মনে করি প্ল্যাটফর্ম বড় হলে আমরা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারব। সেক্ষেত্রে আমাদের ছাড় দেওয়ার মনোভাব আছে।’