মুসলিম বিশ্বের নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত ওমান জানিয়েছে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম দফার পরোক্ষ আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনার লক্ষ্য ছিল একটি ন্যায়সঙ্গত ও বাধ্যতামূলক চুক্তির পথে অগ্রসর হওয়া। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ জানান, মাসকটে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল দূত স্টিভ উইটকফকে স্বাগত জানান এবং মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। তিনি লেখেন, আমি দুই সহকর্মীকে ধন্যবাদ জানাই তাদের অংশগ্রহণের জন্য, যা অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে এবং উভয় পক্ষকে আরও কাছাকাছি এনেছে। ওমানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি ও তেহরানের ওপর আরোপিত অবৈধ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। আলোচনার মাধ্যমে এমন একটি চুক্তির পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, ওমান এই প্রচেষ্টায় তার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে এবং যে কোনো গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে প্রস্তুত।
ওমানে পরোক্ষ আলোচনা : আলোচনাটি ছিল পরোক্ষ, দুই পক্ষের মধ্যে মতামত বিনিময় হয় ওমানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে। দুই দেশের প্রতিনিধিদল তাদের নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। আলোচনা চলে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। বৈঠক শেষে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচকরা ওমানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন এবং তারপর স্থান ত্যাগ করেন।
ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা : এদিকে একটি আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারেন। সূত্রটি জানায়, ট্রাম্প শিগগিরই এমন কিছু মন্তব্য করতে পারেন যা মূলত জনমত প্রভাবিত করতেই দেয়া হবে, এবং তা আলোচনায় অংশ নেয়া মার্কিন দলের সঙ্গে সমন্বয়হীনও হতে পারে। তবে সবকিছুর পর, প্রথম দফার আলোচনা ইতিবাচকভাবেই শেষ হয়েছে। উভয় পক্ষ আগামী সপ্তাহে আবারো আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। ওমানের এই মধ্যস্থতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তীব্র উত্তেজনার মধ্যেও দুই চিরবৈরী রাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে আনা সম্ভব হয়েছে।
ইরানের সঙ্গে দ্রুত পারমাণবিক চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র : ‘যত দ্রুত সম্ভব’ ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। গত শনিবার ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। এতে অংশ নেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকোফ। বৈঠক শেষে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। দীর্ঘদিনের শত্রু ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৪০ বছর ধরে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও ২০১৫ সালে তাদের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আগামী শনিবার আবারও তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। বৈঠকের পর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘মার্কিনিরাও বলেছে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু এটি সহজ হবে না। এই চুক্তি করতে দুই পক্ষের স্বদিচ্ছার প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আলোচনার একটি ভিত্তির খুব কাছাকাছি আছি আমরা। কোনো পক্ষই নিষ্ফল আলোচনা, আলোচনার জন্য আলোচনা, সময় নষ্ট অথবা যে আলোচনা আজীবন চলতে থাকে সেটি চায় না।’