ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন ইসরায়েলি সেনারা

নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে
গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন ইসরায়েলি সেনারা

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সব শাখার হাজারো সংরক্ষিত সেনা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের কাছে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। যুদ্ধের পরিবর্তে হামাসের কাছে জিম্মি বাকি ৫৯ জনকে মুক্ত করার জন্য একটি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ১৮ মাস আগেও খুব কম ইসরায়েলির মধ্যেই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে পরাজিত করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য তুলে ধরা এ যুদ্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দেহ ছিল। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি এবং ৩০ জনের বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি অনেকের মধ্যে আশা জাগিয়েছিল যে খুব শিগগিরই এ যুদ্ধের অবসান ঘটতে পারে। কিন্তু গত মার্চের মাঝামাঝি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবার ভয়াবহ হামলা শুরু করার পর সে আশা ভেঙে গেছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতম বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে ইসরায়েল খুব খারাপ অবস্থার দিকে এগোচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি, নেতানিয়াহু মূলত নিজের স্বার্থ নিয়েই বেশি ভাবছেন। তার অগ্রাধিকারের তালিকায় জিম্মিরা নন; বরং নিজের ও তার সরকারকে স্থিতিশীল রাখার স্বার্থ।’ এপ্রিলের প্রথম দিকে প্রকাশিত ইসরায়েলি সরকারের কাছে পাঠানো প্রথম খোলাচিঠিতে বিমানবাহিনীর এক হাজার সংরক্ষিত সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য স্বাক্ষর করেছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইয়াতমের মতো যারা স্বাক্ষর করেছেন, তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে আসছেন। কেউ কেউ আবার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ড্যানি ইয়াতম বলেন, ‘আমি চিঠিতে সই করেছি এবং আমি এই প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছি রাজনৈতিক কারণে নয়, জাতীয় স্বার্থের কারণে। আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে আমার দেশ পথ হারাতে যাচ্ছে।’ এপ্রিলের প্রথম দিকে প্রকাশিত ইসরায়েলি সরকারের কাছে পাঠানো প্রথম খোলাচিঠিতে বিমানবাহিনীর এক হাজার সংরক্ষিত সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য স্বাক্ষর করেছিলেন।

চিঠিতে এই সেনারা লিখেছেন, ‘যুদ্ধ জারি রাখার বিষয়টি সরকারঘোষিত লক্ষ্যগুলোর কোনোটি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে না; বরং এটি জিম্মিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা তাদের অনুসরণ করতে অন্যান্য ইসরায়েলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, গাজায় এখনো বেঁচে থাকা ২৪ জন জিম্মির জীবনরক্ষার সময় ফুরিয়ে আসছে। তারা বলেন, ‘প্রতিটি নতুন দিন তাদের জীবনকে নতুন করে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় দ্বিধাগ্রস্ত প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য অপমানজনক।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর হাজারো ইসরায়েলি সংরক্ষিত সেনা নেতানিয়াহু সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন এর চেয়ে বেশি সেনা এ ডাক প্রত্যাখ্যান করছেন। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সংরক্ষিত সেনার সংখ্যা ৫০-৬০ শতাংশে নেমে গেছে। আর এটি দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য এক বড় সংকট হতে চলেছে। কারণ, কোনো যুদ্ধে সেনাবাহিনীকে সংরক্ষিত সেনাদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হয়। ১৯৮২ সালে ইসরায়েলের প্রথম লেবানন যুদ্ধের পর আর কখনো এমন সংকট দেখা যায়নি। ইয়োভ বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, আমি আমার ভাই-বোনদের সাহায্য করতে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতাম, কিছু ভালো কাজ করছি কঠিন হলেও ভালো। অথচ এখন আমি বিষয়টিকে সেভাবে দেখি না।’

ইয়োভ বলেন, গাজায় সুড়ঙ্গের ভেতরে জিম্মিদের মৃত্যুঝুঁকির মুখে রেখে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প সরকারকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খুব শক্তিশালী ও হামাসকে পরাজিত করতে পারি। কিন্তু বিষয়টি হামাসকে পরাজিত করা নিয়ে নয়, বিষয়টি হলো আমরা আমাদের দেশকে হারাচ্ছি।’ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে ড্যানি ইয়াতমের মতো যারা স্বাক্ষর করেছেন, তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে আসছেন। কেউ কেউ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশও নিয়েছেন। এ ইয়োভ বলেন, গাজায় যুদ্ধ করার সময় তিনি চেষ্টা করেছিলেন নৈতিকতাসম্পন্ন একজন সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে।

কিন্তু ইসরায়েলের সমালোচকেরা বলছেন, যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ইসরায়েলের জন্য এ দাবি করা তত কঠিন হয়ে পড়ছে যে তাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী। সম্প্রতি উদার বামপন্থি সংবাদপত্র হারেৎজে প্রকাশিত এক কলামে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আমিরাম লেভিন বলেন, এখন উচ্চপদস্থ কমান্ডারসহ সেনাদের আদেশ অমান্য করার কথা ভাবার সময় এসেছে। আমিরাম লেভিন লিখেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ও আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের ওপর যে আঘাত আসছে, তাতে চুপ করে বসে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত