‘ঝড়ের চোখ সম্পর্কে শুনেছেন?’ এমন প্রশ্ন ছুঁড়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিওতে। একটি ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু যেমন শান্ত মনে হলেও তা আসলে ‘মারাত্মক ফাঁদ’, তেমনি তারা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘শুল্ক ঝড়কে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছে। এই উপমা নিছক কল্পনা নয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন একপ্রকার নিস্তব্ধতা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ৯ এপ্রিল জানালেন, তিনি তার ঘোষিত ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপ পরিকল্পনা কিছুদিনের জন্য স্থগিত করছেন, তখন শেয়ারবাজার কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল। অনেক মার্কিন নীতিনির্ধারকও খুশি হন, কারণ এই নতুন পরিকল্পনায় শুধু চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক এবং অন্যদের জন্য তুলনামূলক কম শুল্ক রাখা হয়েছিল, যা আগের এলোমেলো নীতির চেয়ে সহজবোধ্য। তবে এই শান্তি স্থায়ী হওয়ার নয়। প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যখন পণ্যবাহী জাহাজ আসছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মহল বুঝতে পারছে, তারা নিজেরাই ফাঁদে পড়েছে। চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক অব্যাহত রাখা কার্যত সম্ভব নয় ২২ এপ্রিল এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। এমনকি ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন, এই হার ‘অনেক কমতে’ পারে। এরই মধ্যে বহু ইলেকট্রনিক পণ্য, বিশেষ করে স্মার্টফোন, উচ্চ শুল্কের আওতা থেকে বাদ পড়েছে। যেসব শুল্কে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেগুলো আসলে তাদেরই আরোপ করা। চীনা আমদানির দাম বাড়ায় ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, আর চীনা যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরশীল মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাইলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে এই শুল্ক কমিয়ে দিতে পারেন আগেই তিনি ১৪০টির বেশি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
কিন্তু ‘দুর্বল’ মনে হতে চান না বলে তিনি অপেক্ষা করছেন চীনের পদক্ষেপের জন্য। এই অচলাবস্থাই চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর অপ্রত্যাশিত প্রভাবশালী করে তুলেছে। চীন যদি আগ বাড়িয়ে আলোচনার পথে এগোয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কম হতে পারে। কিন্তু এখনও চীনা নেতৃত্ব তা করতে আগ্রহী নয়। বরং তারা পরিস্থিতিকে উপভোগই করছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিডিওতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘কাগুজে বাঘ’ এবং ‘আপস করলেই করুণা পাওয়া যায় না, বরং আরও দমন নেমে আসে।’