ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ২০টি যুদ্ধবিমান টার্গেটে ছিল বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। তবে ওই ২০ বিমানের মধ্যে ৬টি গুলি করে ভূপাতিত করে পাকিস্তান। যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে পাকিস্তান সংযম দেখিয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিলাওয়াল ভুট্টো। গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতি দ্বিপাক্ষিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে সফরকালে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এ আহ্বান জানান।
মূলত বিলাওয়াল একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার উদ্দেশ্য বিশ্ববাসীর কাছে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা এবং ভারতের আনা অভিযোগের জবাব দেওয়া। দলটি এরআগে যুক্তরাষ্ট্রও সফর করেছে, বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছে এবং এরপর ব্রাসেলস যাওয়ার কথা রয়েছে দলটির। প্রতিনিধি দলে আছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার, খুররম দস্তগীর, সিনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সুবজারি ও বুশরা আনজুম বাট। এর পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি ও তাহমিনা জানজুয়াও এই কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলে রয়েছেন। লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিলাওয়াল বলেন, ‘সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তানের অবস্থান ছিল শক্তিশালী। আমরা ২০টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান টার্গেটে আনলেও কেবল ৬টি গুলি করে নামিয়েছি। যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে আমরা সংযম দেখিয়েছি।’ তিনি বলেন, যুদ্ধ থামাতে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল, শর্ত ছিল নিরপেক্ষ স্থানে ভবিষ্যতে সব বিরোধপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এ বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। বিলাওয়াল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করুক। কাশ্মির সমস্যার সমাধান থেকেই সব সমস্যার সূচনা ও সমাধান দুটোই সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, গুলি করে নামানো ভারতীয় ছয়টি যুদ্ধবিমানই পাকিস্তানে বোমা ফেলেছিল এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছিল। বিলাওয়াল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ‘সত্য বিকৃতি’ ও ‘অভিযোগ গঠনকারী’ বলে অভিযুক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘পেহেলগামে যে হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছে, সেই ঘটনায় পাকিস্তানকে জড়ানো হয়েছে কোনো প্রমাণ ছাড়াই। অথচ আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।’ চ্যাথাম হাউস ও আন্তর্জাতিক কৌশল গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসএস-এ দেওয়া বক্তব্যে বিলাওয়াল বলেন, ‘ভারতের পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তিনি কাশ্মির সমস্যাকে দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই শান্তির প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। এ ছাড়া ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখাকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির’ বলে আখ্যা দেন বিলাওয়াল।
তিনি বলেন, ‘পানিসম্পদের অস্ত্রায়ন আন্তর্জাতিক মানদ-কে হুমকিতে ফেলছে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘পানি বন্ধ করে দিলে পাকিস্তান সেটিকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে গণ্য করবে।’ লন্ডনে অবস্থানকালে বিলাওয়ালের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি ব্রিটিশ সরকারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হেমিশ ফ্যালকনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর সংসদ সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরেন তারা।